ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

১৩ মণ রুপা-পিতলে তৈরি মসজিদের গম্বুজ

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৬ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৮
১৩ মণ রুপা-পিতলে তৈরি মসজিদের গম্বুজ ১৩ মণ রুপা আর পিতলে তৈরি করা হয়েছে চন্দনপুরার হামিদিয়া তাজ মসজিদের বড় গম্বুজটি। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: মসজিদের সুউচ্চ মিনার, দেয়াল, দরজা-জানালা থেকে শুরু করে সব কিছুতে দৃষ্টিনন্দন সূক্ষ্ম কারুকাজ। মোগল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত মসজিদের সবচেয়ে বড় গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে ১৩ মণ রুপা আর পিতলে।

গম্বুজের চারপাশে আহলে বায়তে রাসূল সহ দুনিয়ায় জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া ১০ সাহাবির নাম লেখা। আইকনিক মসজিদটির ব্যাপক পরিচিতির কারণে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা দেখতে আসেন এ মসজিদ।

তারা বিস্মিত হন নির্মাণশৈলী দেখে।

ইসলামের প্রবেশদ্বার খ্যাত চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার ওয়ার্ডের সিরাজ-উদ-দৌলা সড়কের চন্দনপুরার হামিদিয়া তাজ মসজিদের চিত্র এটি। এর আরও অনেক নাম আছে। এর মধ্যে মসজিদই সিরাজ-উদ-দৌলা, চন্দনপুরা বড় মসজিদ, তারা মসজিদ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

ছয় বছর ধরে এ মসজিদে ইমামতি করছেন মাওলানা মো. হেলাল উদ্দিন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এটি শতবর্ষী মসজিদ। চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ মসজিদ। চট্টগ্রামের পর্যটন সম্পর্কিত প্রকাশনাগুলোতে এ মসজিদের ছবি থাকায় বিদেশ থেকে প্রচুর পর্যটকও আসেন এখানে। দোতলা এ মসজিদ ও উত্তর পাশের গলি, সিরাজ-উদ-দৌলা সড়ক মিলে প্রায় ৩ হাজার মুসল্লি এখানে জুমার নামাজ আদায় করেন।   

তিনি বলেন, ১৯৫০ সালে এ মসজিদ পুনর্নির্মাণ হয়। এ মসজিদে রুপা-পিতলের প্রাচীন অনেক কারুকাজ ছিল। বৈরী আবহাওয়ায় এসব জিনিস যেমন নষ্ট হয়েছে তেমনি সংস্কারের সময়ও অনেক কিছু হারিয়ে গেছে।

মসজিদের মোতাওয়াল্লি পরিবারের সদস্য মো. জহুরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষ আবদুল হামিদ মাস্টার যখন এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন তখন এটি ছিল মাটির ঘরের ওপর টিনের ছাউনির। তখনো এটি নকশা ও স্থাপত্যশৈলীতে অনন্য ছিল। এরপর উনার ছেলে আবু সাইয়্যিদ দোভাষ ১৯৪৬ সালে এটি সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেন। কলকাতা থেকে কারিগর এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে নির্মাণসামগ্রী ও নকশাসহ বিভিন্ন উপকরণ আনা হয়েছিল। কাজ শেষ হয় পঞ্চাশের দশকে।

তিনি বলেন, এ মসজিদের বড় গম্বুজটি ছিল চাঁদি (রুপা) ও পিতলের তৈরি। কালের বিবর্তনে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এগুলো বিবর্ণ হয়ে পড়ে। তখন আমরা সবুজ, গোলাপি ও হলুদ রং করে দিই।

তিনি জানান, বর্তমানে মসজিদে একজন ইমাম, দুইজন হাফেজ ও তিনজন মুয়াজ্জিন রয়েছেন। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাহারাদার রয়েছে।

মসজিদের মুয়াজ্জিন মোহাম্মদ জাকারিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে এ মসজিদে আজান দিচ্ছি। প্রায় ২৮ বছর হলো মসজিদের খেদমত করছি। প্রতিদিনই নতুন নতুন মানুষ এ মসজিদ দেখতে আসেন। অনেকে নামাজ পড়ার নিয়ত করে আসেন। অবাক বিস্ময়ে চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখেন। খুব ভালো লাগে।

তিনি বলেন, যখন মাইকের ব্যবহার ছিল না তখন চার তলা সমান উঁচু মিনারে উঠে আজান দেওয়া হতো। এ রকম দুইটি মিনার এখনো আছে।  

মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে আসেন আবদুল হাকিম (৭০)। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ মসজিদটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে দেশি-বিদেশি মানুষ আসেন। তারা অনেক কিছু জানতে চান। তাই বাংলা-ইংরেজিতে মসজিদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখা থাকলে ভালো হতো। শুনেছি জাপানের একটি ভ্রমণ সাময়িকীর প্রচ্ছদ ছাপা হয়েছিল এ মসজিদের ছবি দিয়ে।

৩৬০ বছরের পুরনো মসজিদ, বন্ধ ছিলো ৯৪ বছর
বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৮
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।