দক্ষিণে হাঙ্গেরি ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অস্ট্রিয়া। মোট আয়তন ৪৯ হাজার ৩৫ কিলোমিটার।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে স্লোভাকিয়া সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ। ছোট্ট দেশ স্লোভাকিয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য লীলাভূমি। পাহাড়, দুর্গ ও গুহায় পরিবেষ্টিত। স্লোভাকিয়ায় প্রায় ২০০ টি দুর্গ রয়েছে। দুর্গগুলো দেখার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা ভিড় জমান। এছাড়া ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুহার রয়েছে স্লোভাকিয়ায়। স্লোভাকিয়ার গুহাগুলো এতটাই নয়নাভিরাম যে, এগুলোর ভেতরের অংশকে পৃথিবীর স্বর্গ বলা হয়।
স্লোভাকিয়ায় ইসলাম
ইতিহাসের বরাতে জানা যায়, স্লোভাকিয়ায় ইসলামের আগমন হয় ১০ শতাব্দীতে। তৎকালীন মধ্য এশিয়ার কিছু গোত্র স্লোভাকিয়ায় গেলে সেখানে ইসলামের যাত্রা শুরু হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে অটোমান তুর্কিরা যখন মধ্য ইউরোপের দিকে অগ্রসর হতে থাকে তখন নতুন করে স্লোভাকিয়ায় ইসলামের যাত্রা শুরু হয়। অটোমানরা কসোভো ও মোহাজ যুদ্ধে বিজয়ী হলে ইসলামের অভিযাত্রা নতুন গতি পায়। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং বোগেনভিলের স্থানীয় কিছু জনগণ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। স্লোভাকিয়া চেকোস্লোভাকিয়ার অংশ থাকাকালে উসমানিরা বিজয় করেছিল এবং কিছুদিন পর তারা মোরাভিয়ান অঞ্চলের রাজধানী বোর্নো অঞ্চলটিও জয় করে নেন। ফলে তারা সেখানে কিছু মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও তুর্কিরা সেখানে দীর্ঘদিন ছিল না, কিন্তু তাদের এ ভূমিকার কারণে অনেকে ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিল।
তুর্কিরা ইউরোপের মধ্যাঞ্চল ছেড়ে আসার পর মুসলমানরা সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হয়। তাদের মসজিদগুলো সমূলে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। মাদ্রাসাগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে ধর্মীয় সহনশীলতা আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত অনেকেই দেশে ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।
১৯১২ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রীয় সম্রাট ডিক্রি (ফ্রাঙ্কোস জোসেফ দ্বিতীয়) আইন পাস করেন এবং ইসলামকে একটি দেশীয় ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেন। ফলে তখন মুসলমানরা নতুন করে ধর্ম পালনে সুযোগ-সুবিধা পান। তখন দেশটিতে আবারও মসজিদ মাদ্রাসা নির্মিত হতে থাকে। বেশ কয়েকটি সেবাসংস্থা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি গঠিত হয় চেকোস্লোভাকিয়া ইসলামী ইউনিয়ন।
পরবর্তীতে চেকোস্লোভাকিয়া ইসলামী ইউনিয়ন বিভিন্ন প্রকাশনা ও একটি সংবাদপত্র (ইকো) প্রকাশ করে। এমনকি চেকোস্লোভাকিয়ান ভাষায় পবিত্র কোরআনের তিনটি অনুবাদও প্রকাশিত হয়।
জনসংখ্যা
২০১০ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী, দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা ১০ হাজার ৬০০ জন। জনসংখ্যার আনুমানিক প্রায় ২ শতাংশ। যদিও কিছু সংখ্যক মুসলমান বিশ্বাস করে, বর্তমানে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাংশ।
আধুনিক তুরস্কের কিছু আরব শিক্ষার্থী দেশটিতে অবস্থান করায় এ সংখ্যা বেড়েছে। যাদের বেশির ভাগই বাস করেন ব্রাতিস্লাভায়। স্থানীয় মুসলিমরাও সাধারণত রাজধানী ব্রাতিস্লাভায় বাস করেন। এছাড়া বর্নো, প্রাগ ও ট্র্যাজে শহরে মুসলমানদের নিবাস রয়েছে। তবে পুরো দেশজুড়ে মসজিদের সংখ্যা মাত্র একটি।
মুসলিম সংখ্যালঘুদের কার্যক্রম সমর্থন ও শিশুদের সহায়তা দিতে ইসলামী সংগঠন ও সমিতি বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ইসলামিক এন্ডোউমেন্ট সোসাইটি ও মুসলিমছাত্র সাধারণ ফেডারেশন অন্যতম।
এসব সংগঠন নিজেদের ধর্মীয় সংস্কৃতির উন্নতি ও মুসলিম উম্মাহর বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা তৈরি এবং বিকাশে কাজ করে। অনুরূপভাবে ইসলামের রূপ-বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য তুলে ধরতে নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮
এমএমইউ/এমএ