ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

আশুরার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮
আশুরার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট প্রতীকী

আশুরার দিনকে কেন্দ্র করে মানবেতিহাসে ন‍ানা ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। নবী-রাসুলদের সঙ্গে সম্পৃক্ত আশুরার দিনে মর্যাদাপূর্ণ অসংখ্য উপাখ্যান ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে পাওয়া যায়।

যেমন- আশুরার দিন পৃথিবীর সৃষ্টি, এ দিনেই কেয়ামত। এ দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি, একই দিনে তার তওবা কবুল হওয়া।

এ দিনেই হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর জন্মগ্রহণ ও নমরুদের প্রজ্বলিত আগুন থেকে মুক্তিলাভ। হজরত আইউব (আ.)-এর আরোগ্য লাভ ও হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পাওয়াসহ অসংখ্য ঘটনার বর্ণনা ইতিহাসের গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়েছে।  

তবে আল্লামা আবুল ফরজ আবদুর রহমান ইবনুল জাওজি তার বিখ্যাত ‘মাওজুআতু ইবনে জাওজি’-তে বলেন, আশুরার দিনে সংঘটিত ঘটনাবলি বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তা সত্ত্বেও ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সেসব ঘটনার আবেদন কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

হাদিস শরিফে আশুরার ইতিহাস সম্পর্কে বলা হয়েছে—হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা পালন করতো। তিনি তাদের বললেন, ‘এটি কোন দিন, তোমরা যে রোজা রাখছ?’ তারা বলল, ‘এটি এক মহান দিন, যেদিন আল্লাহ মুসা (আ.)-কে মুক্তি দিলেন ও ফেরাউনের পরিবারকে ডুবিয়ে মারলেন। তখন মুসা (আ.) শোকর আদায় করার জন্য রোজা রাখলেন (দিনটির স্মরণে আমরা রোজা রাখি)। ’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আমরা মুসার অনুসরণে তোমাদের চেয়ে বেশি হকদার। তখন তিনি রোজা রাখলেন ও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ৩৩৯৭; মুসলিম, হাদিস নং : ১১৩০)

অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘এটি সেদিন, যেদিন নুহ (আ.)-এর নৌকা ‘জুদি’ পর্বতে স্থির হয়েছিল। তাই নুহ (আ.) আল্লাহর শুকরিয়াস্বরূপ সেদিন রোজা রেখেছিলেন। ’ (মুসনাদে আহমাদ : ২/৩৫৯) 

ইতিহাসের পরম্পরায় ৬০ বা ৬১ হিজরির ১০ মুহাররম সংঘটিত হয় কারবালার হৃদয়বিদারক, মর্মন্তুদ ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। যেখানে হজরত হুসাইন (রা.), তার পরিবারের সদস্য ও সাথীদের পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয়।

জুবাইর ইবনে বাক্কার বলেন, হুসাইন ইবনে আলী (রা.) চতুর্থ হিজরির শাবান মাসের পাঁচ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। আর তাকে আশুরার জুমার দিনে ৬১ হিজরিতে শহীদ করা হয়েছে। তাকে সিনান ইবনে আবি আনাস নাখায়ি হত্যা করে। তাতে সহযোগিতা করেছে খাওলি ইবনে ইয়াজিদ আসবাহি হিময়ারি। সে তার মাথা দ্বিখণ্ডিত করেছে এবং উবাইদুল্লাহর দরবারে নিয়ে এসেছে। তখন সিনান ইবনে আনাস বলেন, ‘আমার গর্দানকে স্বর্ণ ও রৌপ্য দ্বারা সম্মানিত করুন। আমি সংরক্ষিত বাদশাহকে হত্যা করেছি, মা-বাবার দিক দিয়ে উত্তম লোককে আমি হত্যা করেছি। ’ (তাবরানি, মুজামে কবির, হাদিস নং: ২৮৫২)

সেদিন নরাধম-অভাগারা যে পাশবিকতা ও নির্মমতার পরিচয় দিয়েছে, তা যেকোনো হৃদয়েই বেদনা সৃষ্টি করে। ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ আছে, শাহাদাতের পর হজরত হুসাইন (রা.)-এর দেহ মোবারকে মোট ৩৩টি বর্শার এবং ৩৪টি তরবারির আঘাত ছাড়াও অসংখ্য তীরের জখমের চিহ্ন ছিল। এছাড়া ঘাতক ও হন্তারকরা তার সঙ্গে থাকা মোট ৭২ জনকেও হত্যা করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮
এমএমইউ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।