ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

রেহাই পেলেন না পরাক্রমশালী মন্ত্রীও

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮
রেহাই পেলেন না পরাক্রমশালী মন্ত্রীও ...

পৃথিবীতে কিছু নিয়ম-কানুন সবার জন্য সমান। কারো ক্ষেত্রেই তাতে কোনো ছাড় নেই। ক্ষমতা-শক্তিমত্তা, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও আনুষঙ্গিক সবকিছুতে অন্যকে ছাড়িয়ে গেলেও সেই অনিবার্য ও অমোঘ বিধানের কাছে সবাই অসহায়। ইচ্ছা-অনিচ্ছা কিংবা কামনা-বাসনা হোক বা না হোক—অনিবার্য সেই বিধান মেনে নিতেই হয়। রাজা-প্রজা, শাসক-শাসিত, মন্ত্রী-আমলা নির্বিশেষে পৃথিবীর সর্বাধিক শক্তিশালী ব্যক্তিও সেই বিধান থেকে রক্ষা পায় না।

আল্লাহর নবী দাউদ (আ.)-এর একজন পরাক্রমশালী মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন বেশ কর্মদক্ষ ও নিষ্ঠাবান।

দাউদ (আ.) মৃত্যুবরণ করার পর তার পুত্র সোলাইমান (আ.) বাদশাহ নির্বাচিত হন। তখন সেই মন্ত্রী পুনরায় নবী সোলাইমান (আ.)-এর মন্ত্রী নিযুক্ত হন।

একদিন সোলাইমান সকালবেলা তার রাজ-মজলিসে বসেছিলেন। সেই মন্ত্রীও তার কাছে ছিলেন তখন। আচমকা সেখানে এক লোক প্রবেশ করে সালাম দিলেন। এরপর লোকটি সোলাইমান (আ.)-এর সাথে কথাবার্তা বলতে শুরু করেন।

কিন্তু লোকটির দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল মন্ত্রীর দিকে। এতে মন্ত্রী ভয় পেয়ে যান। তিনি সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠেন। সোলাইমানের সাথে কথা বলে লোকটি বের হয়ে যাওয়ার পর মন্ত্রী দাঁড়িয়ে সেলাইমান (আ.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনার কাছ থেকে যে লোকটি বেরিয়ে গেলেন তিনি কে? তিনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেন? আল্লাহর কসম! তার তাকিয়ে থাকার কারণে আমার মনে ভয়ানক আশঙ্কা ঢুকে গেছে।

সোলাইমান (আ.) বললেন, সে ছিল মালাকুল মউত বা মানুষের প্রাণ কবজকারী। একজন লোকের আকৃতি ধারণ করে সে আমার নিকট এসেছিলো।

এ কথা শুনে মন্ত্রী আরো ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওঠেন। তিনি ভয়ে কাঁদতে শুরু করেন। আর মনে মনে বলতে থাকেন, হে আল্লাহ! আমি তো মৃত্যুর কোনো প্রস্তুতি গ্রহণ করিনি। আমি কিভাবে মহাপরাক্রমশালী মালিকের সামনে উপস্থিত হবো। আমার তো সময়ের প্রয়োজন। সফরের পাথেয় দরকার। পরকালের সম্বল জরুরি।

ভাবনার বিষয় হলো, তিনি ছিলেন দাউদ (আ.)-এর নৈকট্যপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও স্বীকৃত বুজুর্গ ব্যক্তিত্ব। তাছাড়াও পরবর্তীতে সোলাইমান (আ.)-এর সাহচার্যপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। একসঙ্গে দুইজন মর্যাদাবান নবীর সঙ্গী হয়েও আল্লাহর ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছেন। পরকালের প্রস্তুতি না নিতে পারায় পালাতে চাচ্ছেন। আর আমরা হাজারো পাপ-অপরাধ করেও কোনো প্রস্তুতি নিয়েছি?

যাই হোক মন্ত্রী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর নবী! আল্লাহর দোহাই দিয়ে আপনার কাছে দরখাস্ত করছি। আপনি বাতাসকে আদেশ করুন যেন আমাকে হিন্দুস্তানের (ভারতবর্ষের) কোনো দূরবর্তী স্থানে নিয়ে যায়।

তখন সোলাইমান (আ.) বাতাসকে আদেশ দিলেন। হুকুম পেয়ে বাতাস তাকে সেখানে নিয়ে গেল, যেখানে গিয়ে তিনি মৃত্যু থেকে বাঁচতে চেয়েছিলেন।

পরদিন ‘মালাকুল মউত’ আবার সোলাইমান (আ.)-এর কাছে আসলেন। আগের মতো সালাম জানিয়ে প্রবেশ করলেন। সোলাইমান (আ.) তখন তাকে বললেন, গতকাল তুমি আমার মন্ত্রীর দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলে কেন? তার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছিলে কেন? তোমার আচরণে সে ভীষণ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।  

মালাকুল মউত বললেন, হে আল্লাহর নবী! আমি আপনার নিকট গতকাল সকালে এসেছিলাম। অথচ আল্লাহ তাআলা আমাকে জোহরের পর হিন্দুস্তানে লোকটির জান কবজ করতে আদেশ দিয়েছিলেন। আমি তাকে আপনার এখানে দেখে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম। ভাবছিলাম, লোকটি এখানে কেন? তার তো এখানে থাকার কথা নয়! তাই অমন করে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

সোলাইমান (আ.) জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে এখন তার কী অবস্থা?
মালাকুল মউত বললেন, আমি ওই স্থানে গেলাম, যেখানে তার জান কবজ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা আমাকে আদেশ দিয়েছেন। গিয়ে দেখি, লোকটি আমার আগে উপস্থিত এবং আমার জন্য অপেক্ষা করছে। এরপর আমি তার রুহ কবজ করলাম।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তাদের বলো, যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালাচ্ছো, তা তোমাদের কাছে আসবেই। তারপর তোমাদের সেই সত্তার সামনে পেশ করা হবে, যিনি গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছুই জানেন। তখন তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন যা তোমরা করছিলে। ’ (সুরা জুমা, আয়াত নং : ০৮)

রাজা-বাদশা, শাসক-শাসিত, উজির-মন্ত্রী, সম্ভ্রান্ত-নিম্নশ্রেণী, ধনী-গরিব, জিন-শয়তান, পশু-পাখি, এমনকি সম্মানিত ফেরেস্তাসহ সবকিছু সেই কুদরতি শক্তির সামনে টিকে থাকতে অক্ষম।

আল্লাহ আরো ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেনো, মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই। সুদৃঢ় প্রাচীরঘেরা দুর্গে লুকিয়ে থাকলেও। (সুরা নিসা আয়াত নং : ৭৮)

জন্মিলে মরিতে হবে। বস্তুত মৃত্যুর বিকল্প নেই। মৃত্যু পরবর্তী যে জীবন আছে, তা সীমাহীন অশেষ। তাই মৃত্যুর পূর্বপ্রস্তুতি দরকার এখনই। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮
এমএমইউ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।