দেশটিতে ব্যাপক প্রচারিত সংবাদপত্র ভার্ডেনস গ্যাং বলছে, চলতি বছর নরওয়েতে ইসলাম গ্রহণকারীর সংখ্যা তিন হাজারে পৌঁছেছে। অথচ নব্বইয়ের দশকে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল মাত্র তিন হাজার।
নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক ক্যারেন ভোগ বলেন, নরওয়েতে আগে নারীরা মুসলিম পুরুষদের বিবাহ করার মাধ্যমে ইসলামে ধর্মান্তরিত হতেন। কিন্তু এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তারা ইসলাম নিয়ে বেশ অনুসন্ধান ও গবেষণা করছেন, প্রচুর বইপত্র ও উত্সগ্রন্থ পড়ছেন; এরপর ইসলাম গ্রহণ করছেন।
ধর্মান্তরিত মুসলিম মনিকা সালমৌক সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি চার বছর আগে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত বই পড়া ও গবেষণার পরে ইসলাম ধর্ম নির্বাচন করেছিলেন।
সালমৌক আরো জানান, তিনি অসলোর গ্রিনল্যান্ডে অবস্থিত ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (আইসিসি) মসজিদ পরিদর্শন করেন এবং ইসলামকে তার ধর্ম হিসাবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন।
নরওয়ের নৃবিজ্ঞান গবেষক লিন্ডা নাওর বলেন, বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। কোনো কিছু জানার উপায় সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী এবং এতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের তথ্য পাওয়াও যায়। আমিও ইসলাম নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা ও পড়াশোনার পর ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছি।
৪২ বছর বয়সী নরওয়েজিয়ান সলভা নাবিল লিঙ্গেলিন জানান, তিনি মুসলিম শরণার্থীদের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
নরওয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃত। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ, পর্যাপ্ত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা আর প্রয়োজন মতো অর্থের ব্যবস্থা—সব মিলিয়ে নরওয়ে হয়ে উঠেছে সুখী দেশের বিকল্প নাম। ২০১৭ সালে জতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ নির্বাচিত হয় নরওয়ে।
নরওয়ের জনসংখ্যা প্রায় ৫৫ লাখ। ইসলাম নরওয়ের একটি সংখ্যালঘু ধর্ম। খ্রিস্টান ধর্মের পর এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম। ১৯৯০ সালে নরওয়েতে মুসলমানের সংখ্যা ৫০০ জন থেকে বেড়ে তিন হাজারে পৌঁছায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১১ সালে নরওয়েতে সরকারিভাবে নিবন্ধিত মুসলিমের সংখ্যা ছিল, ১ লাখ ২১ হাজার ৯৫ জন। যা পুরো দেশের জন্যসংখ্যার প্রায় ২.৩ শতাংশ। পিউ রিসার্চ সেন্টারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১০ সালে নরওয়েতে ৩.৭ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে ৫.৭ শতাংশ মুসলিম ছিলো।
একটি বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী নরওয়েতে ২০০৫ সালে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২০ হাজারের মতো এবং ২০০৯ সালে ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজারের মতো। সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ অংশে অভিবাসী ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে, পাকিস্তানি বংশের নরওয়েবাসী সবচেয়ে দৃশ্যমান এবং সুপরিচিত গোষ্ঠী। শতকরা প্রায় ৫৫ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায় অসলো ও আকেরশাসের কাউন্টিতে বসবাস করেন।
বর্তমানে নরওয়েতে ধর্ম পরিবর্তন ও প্রবাসীদের মাধ্যমে মুসলমানদের সংখ্যা (বেসরকারিভাবে) ২ লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এদের অনেকেই পাকিস্তান, সোমালিয়া, ইরাক ও মরক্কো বংশোদ্ভূত।
ইসলামের সাথে নরওয়ের প্রথম পরিচয় ১২৬০ খ্রিস্টাব্দে। যখন তিউনিশিয়ার সুলতান নরওয়ের রাজা হকন হকন্সসনের জন্য মূল্যবান উপহার পাঠিয়েছিলেন। তবে বিশ শতকের শেষার্ধ পর্যন্ত নরওয়েতে মুসলমানদের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য ছিল না।
নরওয়েরে প্রথম মসজিদটি মুসলমানদের জন্য একটি ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল। ১৯৭৪ সালে রাজধানী অসলোতে এটি উদ্বোধন করা হয়।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮
এমএমইউ/এমজেএফ