ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুসলিম চিন্তানায়ক শায়খ আলি মিয়া নদভি (রহ.)-এর সম্মানিত বাবা ভারতবর্ষের মুসলিম মনীষীদের জীবনীনির্ভর বিশাল গ্রন্থ রচনা করেছেন। যার নাম ‘নুজহাতুল খাওয়াতির, ওয়া বাহজাতুল মাসামি ওয়ান-নাওয়াজির’।
অন্যদিকে পাকিস্তানের আলেম-ওলামাও তাদের মুসলিম-মনীষীদের জীবনী আরবিভাষায় লেখার গুরুত্ব দিয়েছেন। সিরিয়ার বিখ্যাত ‘দারুল কলম দামেস্ক’ থেকে সিরিজ আকারে কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। দারুল উলুম করাচির শিক্ষক মাওলানা লুকমান হাকিম ও অন্যরা এক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশে অসংখ্য মুসলিম রত্ন-মনীষার জন্ম হলেও আরবিভাষায় তাদের ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। বাংলাভাষায় অল্প-স্বল্প যেটুকু কাজ হয়েছে, তাও অনেকটা গৌণ।
আরবিতে তাদের তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশে অনেক যোগ্য পণ্ডিতজ্ঞরা থাকলেও তারা হয়তো বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিতে পারেননি। ব্যস্ততার বহুবিধতার কারণে তারা এদিকটিতে একটু মনোযোগ কম দিয়েছিলেন বোধহয়। হয়তো প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তেরও কিছুটা ঘাটতি ছিল। ফলে সচরাচর আরবিতে জীবনী তৈরির কাজ আর করা হয়নি।
এছাড়াও হাল-জমানায় যেসব তরুণ বাংলাদেশি আলেম আরবিভাষা চর্চা করেন, তাদের অনেকে এ বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোনিবেশ করতে চেয়েছিলেন। অনেকে স্ব স্ব উদ্যোগও নিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের কর্ম-প্রচেষ্টাও সফলতা ও পূর্ণতার পথে তেমন এগোতে পারেনি।
অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় ব্যক্তিরাও বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিত্বদের বিভিন্ন সময় সমালোচনার সুরে বলতেন, ‘তোমাদের দেশের কোনো মনীষীর জীবনী তো আরবিতে নেই। ’ বাস্তবেই এ ক্ষেত্রে বিশাল শূন্যতা বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। যথাযোগ্য প্রচেষ্টা ও শ্রমের অভাবে এই ‘শূন্যতা ও অপমান’ ঘোচানোর জন্য কোনো কাজ হয়নি।
তবে এ ‘অপমান’ ঘোচাতে দারুণ রচনাকর্ম উপহার দিয়েছেন—বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মাওলানা মীযান হারুন। বাংলাদেশের শতাধিক মুসলিম মনীষীর জীবন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংগ্রাম-সাফল্য ও অবদান নিয়ে আরবিভাষায় তিনি অনবদ্য ও বৃহৎ কলেবরে কাজ করেছেন। ঢাকার প্রকাশনী ‘দারুল বায়ান’ (Darul Bayan) মধ্যপ্রাচ্যের বইগুলোর মতো দৃষ্টিনন্দন ও উন্নত কাগজে তার গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে।
এতে মধ্যপ্রাচ্যের খ্যাতিমান লেখক-গ্রন্থাকার ড. আবদুল্লাহ আস-সাহলির মূল্যবান অভিমত রয়েছে। তাছাড়াও বাংলাদেশে আরবিভাষা চর্চার পথিকৃৎ ও প্রবাদপুরুষ আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভীর প্রশংসা সমৃদ্ধ ‘কিছু কথা’ রয়েছে, যা বইটির গুণ-মানে অনন্য মাত্রা যোগ করেছে।
কীর্তিমান গ্রন্থাকার মাওলানা মীযান হারুন বাংলাদেশে কওমি-মাদ্রাসায় সর্বোচ্চ শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে সৌদি আরবের কিং সাউদ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষারত রয়েছেন। তিনি আরবিভাষার পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজিতেও বিভিন্ন রকমের গঠনমূলক কাজ করছেন।
গ্রন্থটি অধ্যয়ন করলে পাঠক সহজেই বুঝতে পারবেন, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে লেখক কী পরিমাণ কষ্টসাধ্য পরিশ্রম করেছেন। অন্যদিকে ধারাবাহিকতা ও বর্ণনায় তিনি অনবদ্য চমৎকারিত্বে সামঞ্জস্যতা রক্ষা করেছেন।
বড় এই গ্রন্থটি তত্ত্ব, তথ্য ও উপাত্তের ভারে নুব্জ্য না করে লেখক বরং আরবি সাহিত্যের মাধুরী মিশিয়ে বেশ মনোজ্ঞ ও সুখপাঠ্য করার পাশাপাশি প্রবাদ-প্রবচন ও বাগধারার সুনিপুণ গাঁথুনী দিয়ে বেশ প্রাঞ্জল ও হৃদয়গ্রাহীও করে তুলেছেন।
মীযান হারুন উৎকৃষ্ট মানের আরবি ভাষাশৈলীর আবরণে বাংলাদেশের মুসলিম মনীষীদের দ্যুতিময় আখ্যান বর্ণনা করেছেন। দক্ষতা ও কুশলতার মোড়কে তাদের জীবনচিত্র এঁকেছেন। তার আগে এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাংলাদেশের কেউ করতে পারেননি। আমাদের বিশ্বাস, তিনি এবং তার এ রচনা সতত ইতিহাসে স্থান করে নিবে ও অন্যদের জন্য পথিকৃৎ হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের আলেম সমাজের জন্য আকর গ্রন্থের কাজ দেবে। সচেতন আলেম-ওলামারা মনে করছেন, মাদ্রাসার প্রতিটি ছাত্র-শিক্ষকের গ্রন্থটি সংগ্রহে থাকা জরুরি।
বই: ‘রিজালুন সানাউত তারিখ, ওয়া খাদামুল ইসলাম ওয়াল ইলম ফি বাংলাদেশ’
লেখক: মীযান হারুন
প্রকাশনী: দারুল বায়ান, ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা
মুদ্রিত মূল্য: ৫০০ টাকা
যোগাযোগ: ০১৯৬৮ ৮৪ ৪৩ ৪১
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৮
এমএমইউ/আরএ