ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তান-সম্পদ জীবনের সৌন্দর্য

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৯
ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তান-সম্পদ জীবনের সৌন্দর্য ছবি : প্রতীকী

অর্থবৈভব ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা-আভা। সঠিক ও যথাযথ এগুলোর ব্যবহার হলে পরকালে কল্যাণ ও পুরস্কার লাভ হবে। না হয় এগুলোই ডেকে নিয়ে আসবে চূড়ান্ত বিপদ।

বস্তুত আখেরাত বা পরকালে সৎকর্ম গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি। আর বিশেষত স্থায়ী সৎকর্মগুলো আল্লাহর কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বলা বাহূল্য যে, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের রূপ-সৌন্দর্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। ‘স্থায়ী সৎকর্ম’ তোমার রবের কাছে পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং আশান্বিত হওয়ার জন্যও সর্বোৎকৃষ্ট। ’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪৬)

কিছু সৎকর্ম মানুষের মৃত্যুর পরও চালু থাকে; যেমন—সুশিক্ষা প্রাপ্ত সৎ সন্তান, জ্ঞান বিতরণ ও জনকল্যাণমূলক কাজ ইত্যাদি। এসব কাজের সুফল পাওয়া যায় অনন্তকাল। মৃত্যুর পরও এর প্রতিফল চলমান থাকে।

তাফসিরবিদ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রহ.)-এর মতে, স্থায়ী সৎকর্ম হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। অধিকাংস তাফসিরবিদরা বলেন, এ আয়াতে যে স্থায়ী সৎকর্মের কথা বলা হয়েছে তা হলো, ‘সুবহানাল্লাহ ওয়ালহামদু লিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম। ’ দোয়াটির শব্দগুলো আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত এবং হাদিসগ্রন্থ নাসায়ি শরিফ থেকে উদ্ধৃত। এই দোয়ার মাধ্যমে জান্নাতের ধনাগার লাভ হয় বলে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। দোয়াটির অর্থ হলো, ‘মহিমাময় পবিত্র আল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি সবচেয়ে বড়। তিনি ছাড়া কোনো ভরসা নেই। আর সুমহান, মর্যাদাবান আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি বা ক্ষমতা নেই। ’

আলোচিত আয়াতে দুনিয়া ত্যাগ করতে বলা হয়নি। বরং বলা হয়েছে পরকালকে প্রাধান্য দিতে। দুনিয়ায় সম্পদ উপার্জন ও সন্তান জন্ম দেওয়া নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু এসবের জন্য যেন পরকালের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

ইসলাম নিছক পরকালমুখী ধর্ম নয়। এ ধর্মে ইহকাল ও পরকালের সমন্বয় স্থাপন করা হয়েছে। জাহেলি যুগের পাদ্রিরা সন্ন্যাসী সেজে মানুষের ভক্তি পুঁজি করে অর্থ উপার্জন করেছিল। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আর সন্ন্যাসবাদ—এটা তো তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রবর্তন করেছিল। আমি তাদের এই বিধান দিইনি; অথচ এটাও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি। ’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২৭)

যারা পার্থিব সম্পদ ও সৌন্দর্য হারাম মনে করে, তাদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তাদের জিজ্ঞাসা করো, ‘আল্লাহ বান্দাদের জন্য যে সৌন্দর্য ও পবিত্র রিজিক সৃষ্টি করেছেন, তা হারাম করল কে?’ বলে দাও, ‘এগুলো ঈমানদারদের পার্থিব জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য এবং বিশেষভাবে পরকালের জন্য নির্দিষ্ট। ’ এভাবে আমি জ্ঞানবানদের জন্য আমার আয়াতগুলো সবিস্তারে উপস্থাপন করি। ” (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩২)

ইসলামে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম ও উপার্জন বাদ দিয়ে শুধু পরকাল নিয়ে পড়ে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বরং কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন, তা দিয়ে আখিরাতের আবাস সন্ধান করো। কিন্তু দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না...। ’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭৭)

প্রয়োজনীয় কাজকর্ম ও উপার্জন এবং নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাদের পরকালীন কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২২১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৯
এমএমইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।