কিরগিজস্তানের ধর্মবিষয়ক কমিশনের এক বিবৃতিতে কমিটির পরিচালক যায়ের বেগ আরগাশুভ বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় (১৯৯০ সালে) কিরগিজে মসজিদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৯টি। কিন্তু গত ২৮ বছরে আড়াই হাজারেরও বেশি মসজিদ নির্মিত হয়েছে।
বর্তমানে কিরগিজ ধর্মীয় বিষয়ক কমিশনে ৩২৩৩টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত রয়েছে। তন্মধ্যে ২৮২২টি ইসলামী সংস্থা, ৩৯৭টি খ্রিষ্টান সংস্থা, ১টি বৌদ্ধ সংস্থা, ১টি ইহুদি সংস্থা ও ১২টি অন্যান্য ধর্মীয় সংস্থা রয়েছে।
এর আগে গত বছরের ০১ সেপ্টেম্বর কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে উদ্বোধন করা হয় মধ্য এশিয়ার সর্ববৃহৎ মসজিদ। মসজিদটি ‘কেন্দ্রীয় ইমাম সেরাহসি মসজিদ’ নামে পরিচিত স্থানীয় জনগণের কাছে। সুবিশাল ও দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদ নির্মাণের যাবতীয় খরচ বহন করেছে তুরস্ক সরকার।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়্যব এরদোগান মসজিদটি উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে দুই দেশের আরও গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কিরগিজিস্তানকে সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা দেয়া হয়। এটি তখন কিরগিজিয়া নামেও পরিচিত ছিল। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভ করে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৫১ বর্গকিলোমিটারের দেশ কিরগিজিস্তান।
৫৮ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশটির সংখ্যাগুরু কিরগিজিরা একটি মুসলিম জাতি, যারা কিরগিজ নামে পরিচিত তুর্কি ভাষায় কথা বলে। উজবেক ও রুশ জাতির লোকেরা এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
কিরগিজস্তানের অত্যন্ত প্রাচীন ও ঐতিহাসিক শহরের নাম ‘আওশ’। এ শহরে বড় বড় আলেম-পণ্ডিত ব্যক্তিরা জন্ম নিয়েছেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা হামভি (রহ.) এ শহর সম্পর্কে লিখেন, এটি ফারগানার কাছে অবস্থিত। অত্যন্ত উর্বর ও শ্যামিলিমাময়। এ শহরের সঙ্গে অনেক প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এর ১০ কিলোমিটার দূর থেকে উজবেকিস্তানের সীমানা শুরু। আন্দোজান ও ফারগানা (হানাফি মাজহাবের ফিকাহের মৌলিক গ্রন্থ ‘হিদায়া’ রচয়িতা জন্মভূমি) এর নিকটবর্তী শহর। আওশ থেকে প্রায় ৭০ মাইল দূরে কিরগিজিস্তানের আওযোজান্দ শহর অবস্থিত, যা আল্লামা কাজি খান (রহ.) ফাতাওয়ায়ে কাজিখান রচয়িতার মাতৃভূমি। যেখানে শামসুল আইম্মা সারখসি (রহ.) কারাগারে বন্দি থেকে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘মাবসুত’ কিতাব সংকলন করেন। (মুজামুল বুলদান : ১/২৮০)
আওশ শহরের অদূরে রয়েছে একটি পাহাড়, যাকে ‘সোলায়মান (আ.) এর পহাড়’ বলা হয়। এলাকায় একথা প্রসিদ্ধ আছে যে, কোনো একসময় হজরত সোলায়মান (আ.) এ পাহাড়ে অবস্থান করেছিলেন। পাহাড়ে প্রাচীন একটি ঘর রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, এটি বাদশাহ জহির উদ্দিন বাবরের ঘর। হিন্দুস্থান আক্রমণ করার আগে তিনি এটি বানিয়েছিলেন। পাহাড়ের সুড়ঙ্গ সদৃশ একটি গুহায় সরকার একটি জাদুঘর তৈরি করেছে। সেখানে সংরক্ষিত রয়েছে ৩ হাজার বছরের বিভিন্ন নিদর্শন। (সফর দর সফর, পৃষ্ঠা : ১৩৩)
কিরগিজস্তানে ‘মুফতি’ একটি সরকারি পদ, যা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সমমর্যাদার। এ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত ফতওয়াদানের চেয়ে মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় ব্যবস্থাপনার কাজে অধিক নিয়োজিত থাকেন।
এ অঞ্চলের আলেমরা শুরু থেকেইে হানাফি মাজহাবের অনুসারী। বরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি তাকী উসমানী তার ভ্রমণকাহিনী ‘সফর দর সফর’-এ ওখানকার একটি ধর্মীয় সংস্কৃতির বিষয় তুলে ধরে লিখেন ‘এখানকার লোকদের মধ্যে এই আদব দেখতে পাই যে, আজান শুরু হলে মসজিদের বাইরে যত লোক দাঁড়িয়ে ছিল, সবাই নিজ নিজ জায়গায় বসে পড়ে। আজান শেষ হওয়া পর্যন্ত বসে থাকে। জানতে পারলাম, এখানের সাধারণ নিয়ম হলো, আজান শুনে সবাই বসে পড়ে। বসে বসেই আজানের জওয়াব দেয়। ’
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৯
এমএমইউ/