ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

বাংলাভাষায় সর্ববৃহৎ ‘সীরাত বিশ্বকোষ’ প্রকাশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
বাংলাভাষায় সর্ববৃহৎ ‘সীরাত বিশ্বকোষ’ প্রকাশ বাংলাভাষায় সর্ববৃহৎ সিরাত বিশ্বকোষ

আমাদের প্রিয় নবী (সা.) মানবেতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। খ্রিস্টাব্দের সপ্তম শতাব্দীতে মহান আল্লাহ রাসুল (সা.)-কে মানবজাতির রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেন। তার জন্মকাল ছিল ইতিহাসের নিকৃষ্টতম অন্ধকার যুগ। তখন সমগ্র মানবতা ভুলে গিয়েছিল একমাত্র স্রষ্টা ও অধিপতির পরিচয়। পরিণতি ও শেষ গন্তব্যের কথাও তারা ভুলে গিয়েছিল।

ভালো-মন্দ ও আলো-আঁধারির পার্থক্য করার ন্যূনতম যোগ্যতা ছিল না তাদের। আত্মার খোরাক গ্রহণ এবং পরকালীন কল্যাণ-সৌভাগ্য লাভ, মানবতার সেবা ও চরিত্রসংশোধনের জন্য তাদের কোনো চেষ্টা-প্রচেষ্টা ছিল না।

ঠিক এই সময়ে বৈশ্বিক বিশৃঙ্খলা দূর করা ও মানবপ্রজন্মকে বিভ্রান্তির গহ্বর থেকে বের করে হিদায়াতের পথে নিয়ে আসতে মহান আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবী (সা.)-কে প্রেরণ করেন। তিনি নবুওয়াতের দীপ্ত আলোকবর্তিকা দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, ইতিহাসের সেই কালো অধ্যায়ের সঙ্গে আমাদের বর্তমান সময়ের ব্যথাতুর সাদৃশ্য রয়েছে।

এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, আমাদের মাঝে প্রচুর দুর্বলতা রয়েছে। আমাদের ভুল-ত্রুটির সীমা-পরিসীমা নেই। কিন্তু এরপরও মহান আল্লাহ আমাদের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। তা হলো, তিনি আমাদের প্রত্যেকের অন্তরে রাসুল (সা.)-এর প্রতি অনিঃশেষ ভালোবাসা দান করেছেন। প্রত্যেক মুমিনের কাছে রাসুল (সা.) নিজের বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, এমনকি নিজের জীবনের চেয়েও অধিক প্রিয়। বস্তুত এই ভালোবাসাই মুমিনের সত্যিকারের পরিচয়।

রাসুল (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা লালন করা বিহীন কোনো মুসলিম সত্যিকার মুসলিম থাকতে পারে না। বিস্ময়ের বিষয় হলো, ভালোবাসায় আকুল হয়ে পৃথিবীর যে ব্যক্তিই নবী (সা.)-এর সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব, গুণাবলি ও মাহাত্ম্য, জীবনচরিত ও কর্মব্যবস্থা সম্পর্কে বলার বা লেখার চেষ্টা করেছেন, তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, ‘আমি নবী-জীবনের পূর্ণ বিবরণ তুলে ধরতে পারিনি। ’ বাস্তবপক্ষে পৃথিবীর যেকোনো পাঠক এবং যেকোনো শ্রোতা এমন স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য।

রাসুল (সা.) এর জীবনী যতবার পঠিত হোক কিংবা যতবার আলোচিত হোক—জানার আগ্রহ ও ব্যাকুলতা কখনো মিটবে না। প্রতিবার নতুন নতুন জ্ঞান-অভিজ্ঞান, তথ্য-মর্ম ও চিন্তাদর্শের দীপ্তরেখা আবিষ্কার হবে। কারণ এ সঞ্জীবনী সুধার ছোঁয়ায় অমরত্ব পেয়ে এক মুঠো মাটিও চিরস্থায়ী কল্যাণ ও নেয়ামতের বিভায় ভাস্বর হয়ে ওঠে।

বাংলাভাষায় সর্ববৃহৎ সীরাত বিশ্বকোষ।

আজকের এই পৃথিবীতে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ মুসলিম উম্মাহর মুখোমুখি। কুফরি ও ভ্রান্ত মতবাদ পূর্ণ চাতুর্য ও শক্তি ব্যয় করে ইসলাম ধ্বংস করার মিশনে লিপ্ত। তারা যেকোনো মূল্যে মুসলিমদের অন্তর থেকে রাসুল (সা.)-এর প্রতি আকণ্ঠ প্রেম-ভালোবাসা ও ভক্তি-শ্রদ্ধার চিহ্ন মুছে ফেলতে চায়। পার্থিব চাকচিক্য, বস্তুবাদী জীবনের ভোগ-বিলাসীতা ও অবাধ যৌনাচারের রকমফের ক্ষেত্র তৈরি করে আমাদের নতুন প্রজন্মকে তারা আধ্যাত্মিকতার স্বাদ ও শক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে বদ্ধপরিকর। রাসুল (সা.)-এর রহমতের ছায়া থেকে মুসলিমসমাজকে দূরে সরিয়ে দিতে তাদের কোনো কমতি নেই। তারা রাসুল (সা.)-এর শিক্ষাদর্শের মূলতত্ত্ব বিকৃত করে ফেলতে সর্ব ধরনের চেষ্টা-কোশেশ করে যাচ্ছে।

আমরা মনে করি, এসব অপশক্তির এ সকল কৌশল নিষ্ক্রিয় করে ফেলার মোক্ষম হাতিয়ার হলো, রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা ও আনুগত্যের সঙ্গে আমাদের বন্ধন সুদৃঢ় করে তোলা। হৃদয়ে হৃদয়ে ভালোবাসার পিদিমের আলো অত্যুজ্জ্বল ও অনির্বাণ করা। প্রত্যেক মুসলিমের অপরিহার্য কর্তব্য, রাসুল (সা.)-এর স্বর্ণোজ্জ্বল সীরাত আলোর মশাল হিসেবে ব্যবহার করা।

তাই ইতিহাসের দায় এবং যুগের চাহিদা থেকেই অনন্য ও অসাধারণ ‘সীরাত বিশ্বকোষ’ রচিত হয়েছে। এই ‘সীরাত বিশ্বকোষটিতে রাসুল (সা.)-এর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সামগ্রিক জীবনের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ ও ঘটনাপ্রবাহ আনুষঙ্গিক ছোট-খাটো বিষয়াবলিসহ তথ্যসমৃদ্ধভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ইসলামের আত্মপ্রকাশের আগে আরব উপদ্বীপের অধিবাসী, তাদের জীবনচিত্র, সামাজিক আচরণ ও বিচরণ এবং তাদের যাবতীয় বৈশিষ্ট্যাবলি ছাড়াও আশপাশের সবগুলো জাতি ও সম্প্রদায়ের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। মূলত মানবেতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ও সর্বোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনালগ্নের প্রেক্ষাপট পাঠকের কাছে তুলে ধরতেই এগুলোর আলোচনা আনা হয়েছে। রাসুল (সা.)-এর সৌভাগ্যময় জন্ম এবং তাকে প্রেরণের জন্য আল্লাহ তাআলা কী কারণে আরব-উপদ্বীপই বিশেষভাবে নির্বাচন করলেন, মহান আল্লাহর সেই গভীর প্রজ্ঞাময় সিদ্ধান্ত সবার কাছে বোধগম্য হওয়ার জন্যও এভাবে ধারা-বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

সীরাত বিশ্বকোষটি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক প্রকাশনাপ্রতিষ্ঠান দারুস সালামের উদ্যোগে গবেষক, স্কলার ও উলামায়ে কেরামের একটি সমন্বিত বোর্ড রচনা করেছে। বাংলাভাষী পাঠকের কথা বিবেচনা করে দেশের অন্যতম বৃহৎ ইসলামী প্রকাশনী ‘মাকতাবাতুল আযহার’ একটি দক্ষ অনুবাদটিমের সহায়তায় এবং সুদক্ষ সম্পাদকের নিবিড় তত্ত্বাবধানে বইটির প্রাঞ্জল ও সাবলীল বাংলানুবাদের কাজ সম্পন্ন করেছে।

অনুবাদ ও সম্পাদনায় যারা ছিলেন, তারা প্রত্যেকেই বর্তমান সময়ের প্রতিশ্রুতিশীল, যোগ্য ও বিজ্ঞ। মহানবী (সা.)-এর জীবনের জ্ঞানতাত্ত্বিক ও চৈন্তিক বৈশিষ্ট্যগুলো এবং তার কর্মময় জীবনের সবগুলো অধ্যায় পাঠকের কাছে নিখুঁতভাবে ও সুখপাঠ্য করে ফুটিয়ে তুলতে তারা যথাযোগ্য চেষ্টা করেছেন ।  

এ গ্রন্থে রাসুল (সা.)-এর জীবনবৃত্তান্তের আদ্যোপান্ত তারিখ ও সময়ক্রমের সমন্বয় রক্ষা করে সংকলন করা হয়েছে। যেন বর্ণনাশৈলী ও প্রভাব বিস্তারের বিচারে রাসুল (সা.)-এর পবিত্র জীবনের বিভিন্ন পর্যায়, ঘটনাপ্রবাহ ও তথ্যচিত্রগুলো পাঠকের মননে সহজে গেঁথে যায়।

গ্রন্থ: সীরাত বিশ্বকোষ
খণ্ড সংখ্যা: ১১
সর্বমোট পৃষ্ঠা: ৬৬৫৬
কাগজ: ৮০ গ্রাম কালার অফসেট
প্রকাশনা: মাকতাবাতুল আযহার, মধ্যবাড্ডা, ঢাকা
সার্বিক যোগাযোগ: ০১৯২৪০৭৬৩৬৫

লেখক: আলেম, গ্রন্থাকার-অনুবাদক ও গবেষক

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।