সংক্ষেপে মিরাজের ঘটনা
রাসুল (সা.) এক রাতে হজরত উম্মেহানি (রা.)-এর ঘরে বিশ্রামে ছিলেন। তার অর্ধনিদ্রা অবস্থায় জিবরাইল (আ.) অন্যান্য ফেরেশতাসহ ওই ঘরে অবতরণ করেন এবং তাকে মসজিদে হারামে নিয়ে যান।
পথিমধ্যে মহানবী (সা.) মদিনা তায়্যিবা, মুসা (আ.)-এর কথা বলার স্থান সিনাই পর্বত এবং ঈসা (আ.)-এর জন্মস্থান বেথেলহেমে অবতরণ করেন। ওই স্থানগুলোতে তিনি দুই রাকাত করে নামাজও আদায় করেন। (বাজ্জার : ৮/৪০৯, মুজামে কাবির : ৭১৪২, ফাতহুল বারি : ৭/১৯৯)
বায়তুল মুকাদ্দাসে
অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করে সেখানে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজ পড়েন। তারপর মসজিদ থেকে বের হলে জিবরাইল (আ.) তার সামনে এক পাত্র শরাব ও এক পাত্র দুধ নিয়ে আসেন। রাসুল (সা.) দুধের পাত্রটি গ্রহণ করেন। তখন জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি ফিতরাত (স্বভাবজাত ও প্রকৃত জিনিস) গ্রহণ করেছেন। (মুসলিম, হাদিস নং : ২৫৯)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, বায়তুল মামুরেও রাসুল (সা.)-এর সামনে ওই দুটি পাত্রসহ একটি মধুর পাত্রও আনা হয়েছিল। সেখানেও তিনি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করেন। (বুখারি, হাদিস নং: ৩৮৮৭, মুসলিম, হাদিস নং: ২৬৪)
ধারাবাহিকভাবে আসমান অতিক্রম
অতঃপর জিবরাইল (আ.) নবীজি (সা.)-কে প্রথম আসমানের কাছে গিয়ে দরজা খোলার আবেদন জানান। ফেরেশতারা অভিবাদন জানিয়ে রাসুল (সা.)-কে বরণ করে নেন। এভাবে সপ্তম আসমান অতিক্রম করেন। এ সময় যথাক্রমে প্রথম আসমানে হজরত আদম (আ.), দ্বিতীয় আসমানে হজরত ইয়াহইয়া (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.), তৃতীয় আসমানে হজরত ইউসুফ (আ.), চতুর্থ আসমানে হজরত ইদরিস (আ.), পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.), ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা এবং সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সবাই হুজুর (সা.)-কে অভ্যর্থনা জানান। সপ্তম আসমানে বায়তুল মামুরের কাছে ইবরাহিম (আ.) প্রাচীরের সঙ্গে হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন।
বায়তুল মামুর, জিবরাইল (আ.) ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
বায়তুল মামুরে দৈনিক ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করেন। কিয়ামত পর্যন্ত তাদের পুনর্বার প্রবেশ করার পালা আসবে না। সপ্তম আসমান থেকে রফরফের (সবুজ রঙের গদিবিশিষ্ট পালকি) মাধ্যমে সিদরাতুল মুনতাহায় গমন করেন, যেখানে আল্লাহ তাআলার নির্দেশে স্বর্ণের ও বিভিন্ন রঙের প্রজাপতি ছোটাছুটি করছিল। ফেরেশতারা স্থানটি ঘিরে রেখেছিলেন। সেখানে রাসুল (সা.) জিবরাইল (আ.)-কে তার স্বরূপে দেখেন, তার ছয় শ পাখা ছিল। নিজ চোখে জান্নাত-জাহান্নাম দেখেন। অতঃপর এক ময়দানে পৌঁছেন, যেখানে ভাগ্যলিপি লেখার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। পরিশেষে আরশে আজিমে গমন করেন। এরপর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে উপঢৌকনস্বরূপ ৫০ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নিয়ে জমিনে প্রত্যাবর্তন করেন। পথিমধ্যে মুসা (আ.)-এর পরামর্শক্রমে কয়েকবার আল্লাহর কাছে গিয়ে নামাজের সংখ্যা কমানোর আবেদন জানান। অবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের (যাতে ৫০ ওয়াক্তের সাওয়াব পাওয়া যাবে) বিধান নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে ফিরে আসেন। (বুখারি, হাদিস নং: ৩৪৯, ৩৩৪২, ৩৮৮৭; মুসলিম, হাদিস নং: ২৬৩ ও ২৬৪; ফাতহুল বারি: ৭/২৫০-২৫৯, মা’আরেফুল কোরআন : ৭৬৪-৭৬৫, সিরাতে মুস্তফা : ১/২৮৫-২৮৬)
ঊর্ধ্বজগতে যেসব নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল, তারাও বিদায় সংবর্ধনা জানানোর জন্য তার সঙ্গে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত আগমন করেন। তখন নামাজের সময় হয়ে যায়। জিবরাইল (আ.)-এর ইঙ্গিতে নবীজি (সা.)-কে ইমাম বানানো হয়। তিনি নবীদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। এরপর বুরাকে সাওয়ার হয়ে অন্ধকার থাকতেই মক্কা মুকাররমায় পৌঁছে যান। (মা’আরেফুল কোরআন : ৭৬৪-৭৬৫)
মিরাজের শিক্ষা ও তাৎপর্য
মিরাজের রাতে রাসুল (সা.) ও তার উম্মতকে তিনটি জিনিস হাদিয়া দেওয়া হয়—এক. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। দুই. সুরা বাকারার শেষ তিন আয়াত, যেখানে ঈমান-আনুগত্য ও দোয়ার আলোচনা রয়েছে। তিন. শিরক থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ এবং এর বিনিময়ে ক্ষমার ওয়াদা। (মুসলিম, হাদিস নং: ২৭৯, তিরমিজি, হাদিস নং: ৩২৭৬)
শবে মেরাজে ইবাদত-বন্দেগির কোনো দিকনির্দেশনা ইসলামে নেই। তাই সম্ভাব্য এই দিনে রোজা রাখা, শবেকদরের মতো এই রাতকে ফজিলতপূর্ণ মনে করা, রাতে ইবাদতে মশগুল থাকা, এই রাতকে উদ্দেশ করে মসজিদে ভিড় জমানো, মসজিদে আলোকসজ্জা করা, রাত্রি জাগরণ করা, হালুয়া-রুটির আয়োজন করা ইত্যাদি শরিয়তসম্মত নয়।
ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ০০২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৯
এমএমইউ