ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

মাসআলা

অজু-গোসলের পর শরীর মোছা সম্পর্কে শরিয়তের বিধান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৯
অজু-গোসলের পর শরীর মোছা সম্পর্কে শরিয়তের বিধান অজু-গোসলের পর শরীর মোছার শরয়ি বিধান

প্রশ্ন: অজু-গোসলের পর রাসুল (সা.) কি কাপড় দিয়ে শরীর মুছেছেন? বিষয়টি হাদিসের আলোকে বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর: অজু-গোসলের পর কাপড় দিয়ে শরীর মোছা না মোছা উভয় ধরনের বিবরণই হাদিসে পাওয়া যায়। তাই কোনো একটিকে সুনির্দিষ্টভাবে সুন্নত বলা মুশকিল।

কারণ রাসুল (সা.) উভয় ধরনের আমল করতেন। কখনও তিনি হাত মুছতেন। আবার কখনও হাত মুছতেন না। সুতরাং সুন্নত হলে উভয়টিই সুন্নত হবে। আর স্বাভাবিকতই এটির মাধ্যমে ব্যক্তির স্বাচ্ছন্দ্য ও সুবিধা বিবেচ্য হবে।

শরীর মোছা সম্পর্কিত হাদিস
সালমান ফার্সি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) অজু করেন। এরপর তিনি তার গায়ের পশমী জুব্বা উল্টে নিয়ে চেহারা মুছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ৪৬৮)

কায়েছ বিন সাআদ (রা.) বলেন, আমাদের কাছে রাসুলুল্লাহ (সা.) আসলেন। আমরা তাঁর জন্য পানির ব্যবস্থা করলাম। তিনি গোসল করলেন। তখন আমরা তাঁকে হলুদ রঙের একটি চাদর এনে দিলাম। তিনি সেটি গায়ে জড়িয়ে নিলেন। (ফলে সেটি শরীরের পানি মোছার জন্য রুমালের কাজ দিলো)। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ৪৬৬, ৫১৪৩)

অজু-গোসলের পর শরীর মোছার শরয়ি বিধান

উম্মু হানি বিনতু আবি তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) গোসল করতে দাঁড়ালেন। ফাতিমা (রা.) তাকে আড়াল করে রাখেন। অতঃপর তিনি তার কাপড় নিয়ে তা শরীরে লেপ্টে নেন (গা মোছেন)। (নাসায়ি, হাদিস নং: ৪৬৫)

আবু বকর সিদ্দিক (রা.) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর একটি নেকরা ছিল, যেটি দিয়ে তিনি অজুর পর শরীর মুছতেন। (বাইহাকি) 

শরীর না মোছা সম্পর্কীত হাদিস
উম্মুল মুমিনিন মায়মুনা (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.) এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম এবং কাপড় দিয়ে পর্দা করে দিলাম। তিনি দু’হাতের উপর পানি ঢেলে উভয় হাত ধুয়ে নিলেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান ধৌত করেন। পরে হাতে মাটি লাগিয়ে ঘষে নিলেন এবং ধুয়ে ফেললেন। এরপর কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন, চেহারা ও দুই হাত (কনুই পর্যন্ত) ধ ধৌত করেন। তারপর মাথায় পানি ঢাললেন ও সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছালেন। তারপর একটু সরে গিয়ে দু’পা ধুয়ে নিলেন। এরপর আমি তাঁকে কাপড় দিলাম কিন্তু তিনি তা নিলেন না। তিনি দুই হাত ঝাড়তে ঝাড়তে চলে গেলেন।

তবে এ হাদিসের মাধ্যমে যেমনিভাবে না মোছা প্রমাণিত হয় তেমনিভাবে মোছার বিষয়টিও বোঝা যায়। যেমন তাইমিয়া (রহ.) উপরোক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যে গোসলের পর কখনো কখনো কাপড় দ্বারা শরীর মুছতেন এ হাদিসটি তার একটি দলিল। কেননা যদি গোসলের পর শরীর একেবারেই না মুছতেন তাহলে মায়মুনা (রা.) শরীর মোছার জন্য রুমাল এনে দিতেন না। (ফাতহুল বারি: ১/৪৩২)

আল্লামা শিব্বির আহমদ উছমানি (রহ.) বুখারির ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফজলুল বারিতে এবং আল্লামা তাকি উছমানি ইনআমুল বারিতে এ হাদিসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন, ‘গোসলের পর শরীর মোছার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাপড় ব্যবহার অন্য বর্ণনার মাধ্যমে প্রমাণিত। ’ আল্লামা আবদুল হাই লখনবি (রহ.)-ও এমনটি বলেছেন।

মোটকথা উভয় ধরনের আমলই প্রমাণিত আছে। তাই নির্দিষ্টভাবে কোনো একটিকে সঠিক ও সুন্নত বলা এবং অন্যটিকে সুন্নত পরিপন্থী বলার কোনো ধরনের সুযোগ নেই। বরং হাদিসের দৃষ্টিতে উভয় ধরনের আমল করার সুযোগ রয়েছে।

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।