নারীদের হজ ও ওমরাহ করার নিয়ম মোটামুটি পুরুষের মতোই। পার্থক্য এতটুকু যে নারীরা সেলাইকৃত যেকোনো রঙের স্বাভাবিক কাপড় পরবে।
পর্দার জন্য বোরকার নেকাব এভাবে ঝুলিয়ে দেবে, যেন চেহারায় কাপড় না লাগে। এ জন্য মাথায় ক্যাপ পরে তার ওপর নেকাব ঝুলিয়ে রাখা যায়। এতে নেকাব চেহারা থেকে পৃথক থাকে। আর মাঝেমধ্যে লাগলে অসুবিধা হবে না, বরং পর্দার স্বার্থে পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে নিতে হবে এবং পরপুরুষ সরে গেলে চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে নিতে হবে। তবে এক ঘণ্টার বেশি কিন্তু ১২ ঘণ্টার কম সময় লাগাতার চেহারার সঙ্গে কাপড় লেগে থাকলে পৌনে দুই কেজি গম বা তার মূল্য সদকা দিতে হবে। ১২ ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় লেগে থাকলে একটি দম (ছাগল বা দুম্বা জবাই করা) ওয়াজিব হবে। (মুয়াল্লিম, পৃ. ২৩৭)
হজের দিনগুলোতে নারীদের নামাজ না পড়তে পারার ওজর থাকলে মিনা, আরাফা ও মুজদালিফার কাজগুলো নিয়ম মোতাবেক করে যাবে। শুধু তাওয়াফে জিয়ারত স্থগিত রাখবে। পবিত্র হওয়ার পর তা করে নেবে। হজের কোরবানির পর নারীদের জন্য পূর্ণ মাথার চুলের অগ্রভাগ এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটা ওয়াজিব। তবে ছোট মেয়ে হলে তার চুল কামানো যাবে। চুল নিজ হাতে বা অন্য কোনো নারী অথবা সঙ্গে থাকা মাহরাম ব্যক্তির মাধ্যমে কাটাবে। মাহরাম ছাড়া কোনো বেগানা পুরুষকে দিয়ে কাটানো যাবে না। (ফাতাওয়া শামি : ২/৫১৬)
যদি কোনো নারী ওজর অবস্থায় থাকার কারণে তাওয়াফে জিয়ারত করতে না পারে। এদিকে তার কাফেলার রওনা হওয়ার সময় হয়ে যায় এবং কোনোভাবেই দেরি করা সম্ভব না হয়, তাহলে এ অবস্থায়ই তাওয়াফে জিয়ারত করে নেবে এবং একটি উট বা গরু দম হিসেবে জবাই করে দেবে, সেই সঙ্গে তাওবাও করে নেবে। তাওয়াফে জিয়ারত না করে কোনো অবস্থায়ই দেশে ফিরে আসবে না। যদি দেশে ফিরে আসে, তাহলে আবার মক্কায় গিয়ে তাওয়াফে জিয়ারত করে আসতে হবে। যত দিন এ তাওয়াফ না করবে, তত দিন স্বামী-স্ত্রীর বিশেষ সম্পর্কও বৈধ হবে না। (ফাতাওয়া শামি : ২/৫১৮-৫১৯)
হজের সময় ‘মাসিক বন্ধের পিল’ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হলে শরিয়তের নিষেধ নেই। (কিতাবুল হজ, পৃ. ৫৩)
নারীদের জন্য যেহেতু সর্বক্ষেত্রে ঘরে একাকী নামাজ পড়া উত্তম। মক্কা ও মদিনার ব্যাপারেও এই হুকুম প্রযোজ্য। আর অধিক সওয়াবের সম্পর্ক হারামের পূর্ণ এলাকার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই তারা মসজিদুল হারামের পরিবর্তে নিজ অবস্থানস্থলে নামাজ আদায় করলেও মসজিদে নামাজ আদায়কারীদের সমান সওয়াবই লাভ করবে। (পবিত্র মক্কা-মদিনার পথে, পৃ. ২৫)
নারীরা মসজিদে গেলে অবশ্যই পরিপূর্ণ পর্দার সঙ্গে যাবে। অন্যথায় এমন মুবারক স্থানে তাদের প্রতি দৃষ্টি পড়ার কারণে পুরুষরা যেমন গুনাহগার হবে, তেমনি তারাও গুনাহগার হবে। হারাম শরিফে ইবাদতের সওয়াব যেরূপ বেশি, গুনাহর কঠোরতা তেমনি অনেক বেশি।
কোনো নারী যদি পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজের জামাতে শরিক হয়, তাহলে কোনো ক্ষেত্রে পুরুষের নামাজ, কোনো ক্ষেত্রে নারীর নামাজ আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে উভয়ের নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া এক নারীর কারণে তার দুই পাশের দুই ব্যক্তি ও বরাবর পেছনের ব্যক্তির নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। অতএব, কখনো মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে নারীদের নির্দিষ্ট স্থানে জায়গা না পেলে, পুরুষের পাশে না দাঁড়িয়ে এক পাশে বসে থাকবে। এতে কারো নামাজ নষ্ট হবে না। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৭৪-৫৭৬)
নারীদেরও রাসুল (সা.)-এর রওজা মুবারকে সালাম পেশ করতে যাওয়া মুস্তাহাব। নারীদের জন্য নির্ধারিত সময় জেনে নিয়ে নির্ধারিত গেট দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করে পূর্ব দিকের নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করবে। ওজর অবস্থায় থাকলে সালামের জন্য মসজিদে যাবে না। (ওয়াফাউল ওয়াফা : ৪/১৩৬২)
যে নারীর ওপর হজ ফরজ হয়েছে, তিনি যদি সারা জীবন তার হজের সফরসঙ্গী হিসেবে কোনো মাহরাম না পান, তাহলে বদলি হজের অসিয়ত করবেন। তার মৃত্যুর পর তার অর্থে বদলি হজ করাতে হবে।
লেখক: শিক্ষক, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ান বাজার, ঢাকা
ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৯
এমএমইউ