ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

নারীদের ইহরামের নিয়ম-বিধান

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৯
নারীদের ইহরামের নিয়ম-বিধান ছবি : প্রতীকী

হজ ও ওমরা পালনের নিয়তে যারা মক্কার উদ্দেশে গমন করেন, তাদের মিকাত (নির্ধারিত স্থান) অতিক্রম করার আগে ইহরামের কাপড় পরে নিতে হয়। ইহরাম না পরে মিকাত অতিক্রম করা তাদের জন্য জায়েজ নয়। সমগ্র পৃথিবীর বিভিন্ন দিক থেকে আগত হজযাত্রীদের জন্য পাঁচটি নির্দিষ্ট স্থানকে শরিয়ত ‘মিকাত’ হিসেবে নির্ধারণ করেছে।

পুরুষ হজ-ওমরাহ পালনকারী দুইটি সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরেন। এটিকে ইহরাম বলা হয়।

আর নারীরা নিজেদের স্বাভাবিক পোশাক পরেন। নারীরর জন্য নিজের স্বাভাবিক পোশাকই হলো, ইহরাম।

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নারীরা ইহরাম অবস্থায় নিজ অভিরুচি মাফিক পোষাক পরতে পারবেন। ’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৪৪৩)

ইহরাম অবস্থায় নারীদের জুতা-মোজা ব্যবহার
নারীরা ইহরাম অবস্থায় জুতা-মোজা ব্যবহার করতে অসুবিধা নেই। শরিয়ত এ ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) নারীদেরকে ইহরাম অবস্থায় চামড়ার মোজা এবং পাজামা পরার অনুমতি দিতেন। তিনি বলেন, ছফিয়্যা (রা.) চামড়ার মোজা পরিধান করতেন, যা ছিল তার হাটু পর্যন্ত। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৫৯৬৯)

অন্য হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নারীরা ইহরাম অবস্থায় হাত মোজা এবং পাজামা পরতে পারবেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৪৪৪০)

বিখ্যাত তাবেয়ি কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ (রহ.) বলেন, ‘যে নারী ইহরাম করেছেন, তিনি হাত-মোজা ও পাজামা পরিধান করবেন এবং পুরো চেহারা আবৃত রাখবেন। ’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৫৯৬৮)

তবে লক্ষণীয় যে, হাত মোজার বিষয়ে দুই ধরনের দলিল-প্রমাণ থাকায় কেউ কেউ তা পরিধান না করা উত্তম বলেছেন। (আল ইসতিযকার ১১/৩০; সুনানে আবু দাউদ ২/২৫৪; আত্তারগিব ওয়াত তারহিব ৪/৪৭৭; ইলাউস সুনান: ১০/৪৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৩; বাদায়ে ২/৪১০; ফাতহুল মুলহিম)

প্রতীকী ছবিপরপুরুষের সামনে ইহরাম অবস্থায় চেহারা প্রকাশ
ইহরামের অবস্থায় হলেও নারীদের জন্য পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা নিষেধ। তাই এ অবস্থায় এমনভাবে চেহারাবৃত রাখা জরুরি যাতে মুখমণ্ডলের সঙ্গে কাপড় লেগে না থাকে। এখন এক ধরনের ক্যাপ পাওয়া যায়, যা পরিধান করে সহজেই চেহারার পর্দা রক্ষা করা যায়। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে হজের ইহরাম অবস্থায় ছিলাম। হাজিদের কাফেলা যখন আমাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করতো, তখন আমরা মাথা থেকে চেহারার উপর চাদর ঝুলিয়ে দিতাম। যখন তারা আমাদের অতিক্রম করে চলে যেত, তখন চাদর সরিয়ে ফেলতাম। ’ (আবু দাউদ, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৫৪)

ইহরাম অবস্থায় নারীদের নেকাব ব্যবহার
আলী (রা.) নারীদের ইহরাম অবস্থায় নেকাব ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন। তবে চেহারার উপর দিয়ে কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়ার কথা বলতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৪৫৩৯; আদিল্লাতুল হিজাব ৩২৯-৩৩৪; নাইলুল আওতার: ৫/৭১ মানাসিক: ১১৫, ফাতহুল বারি: ৩/৪৭৫; ইলামুল মুআককিয়িন: ১/১২২-১২৩)

ঋতুমতী নারীর জন্য ইহরামের আগে গোসল করা মুস্তাহাব। (গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৬৯)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী করীম (সা.) বলেন, ‘কোনো নারী হায়েজ বা নেফাস অবস্থায় মিকাতে পৌঁছলে গোসল করবে এবং ইহরাম পরবে। অতঃপর হজের যাবতীয় কাজ করতে থাকবে। বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করবে না। ’ (আবু দাউদ: ১/২৪৩)

বিশেষ সময়ে তালবিয়া পাঠ ও ইহরাম
নারীরা মাসিক ঋতুস্রাব ও সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব ইত্যাদি থাকলেও তালবিয়া পাঠ ও ইহরাম পরতে পারবেন। হজের অন্যান্য কাজও করতে পারবেন। তবে এ অবস্থায় তাওয়াফ করা ও নামাজ পড়া জায়েজ নয়।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘নারীরা হায়েজ বা নেফাস অবস্থায় মিকাতে এলে গোসল করবেন এবং ইহরাম করবেন। অতঃপর হজের আমলগুলো সম্পন্ন করবেন। তবে তওয়াফ করবেন না। ’ (আবু দাউদ: ১/২৪৩)

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।