ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

হজ-স্বপ্নে উচ্ছ্বসিত নিউজিল্যান্ডের সেই পুলিশ অফিসার

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৯
হজ-স্বপ্নে উচ্ছ্বসিত নিউজিল্যান্ডের সেই পুলিশ অফিসার হজ পালনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাওয়ায় আনন্দে উল্লসিত নাইলা হাসান। ছবি: সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ডের অন্যতম সিনিয়র ও শীর্ষ স্থানীয় নারী পুলিশ অফিসার নাইলা হাসান। ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে খ্রিস্টান-জঙ্গির হামলার পরদিন সমবেত জনতার উদ্দেশে হৃদয়-নিংড়ানো ও আবেগ-মথিত বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘একজন মুসলিম হিসেবে আমি গর্বিত।’ সেই নাইলা হাসানের এবার হজ পালনের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। খবর আরব নিউজের।

এবারের হজ মৌসুমে ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে হতাহতদের ২০০ আত্মীয়কে হজ করাচ্ছে সৌদি আরব। তাদের সঙ্গে বাদশাহ সালমানের পক্ষ থেকে নাইলাকেও সৌদির রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে হজ আদায়ের দাওয়াত দেওয়া হয়।

বর্তমানে তিনি পবিত্র নগরী মক্কায় রয়েছেন।

আরও পড়ুন: সৌদি পৌঁছালেন ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হতাহতদের স্বজনরা

শুক্রবার (০২ আগস্ট) হতাহতদের ২০০ আত্মীয়ের প্রথম বহর জেদ্দার কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিকম বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর অন্যদের সঙ্গে ভিন্ন ফ্লাইটে নাইলাও সৌদি পৌঁছেন।

হজের স্বপ্ন পূরণ হতে যাওয়ায় আবেগ-উচ্ছ্বসিত নাইলা সৌদি বাদশাহ সালমানকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, শুধু একজন মুসলমান হিসেবে আপনি পবিত্র কাবা দেখার এবং মক্কা-মদিনায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন। কিন্তু আজ সকালে আমি যখন কাবা দেখলাম, আনন্দের অতিশয্যে তখন আমার দম ফেটে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল। সত্যি আমার এমনটা হয়েছিল।

সেদিনের বক্তব্যে ২০ বছর পর ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিচ্ছেন নাইলা।  ছবি: সংগৃহীততবে এটি আমার জন্য একটি সফর। আমি এখানে সেই দিনের আক্রান্তদের জন্য আছি... আমি এখানে বিশেষত নারী এবং বিধবাদের জন্য রয়েছি। আমি তাদের সমর্থন করার জন্য এখানে আছি।  

নাইলা হাসান সংবাদমাধ্যমের কাছে তার মুগ্ধতার কথা বর্ণনা করেন। কীভাবে তাকে ও প্রায় ২০০ জন হজ পালনার্থীকে ফুলের তোড়া দিয়ে, দফ্ বাজিয়ে ও উপহার দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। তিনি বলেন, আমি জীবনে কখনও এরকম চমৎকার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হইনি। আমি বাদশাহ সালমানকে তার উদারতার জন্য ধন্যবাদ জানাই। তিনি নিউজিল্যান্ডের মানুষের কাছে অবিশ্বাস্যভাবে সদ্য উদারতা লাভ করেছেন।

রোববার (০৪ আগস্ট) সৌদি আরবের দাওয়াহ, নির্দেশনা ও ইসলামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. শাইখ আবদুল লতিফ আল-শেইখ বলেন, বাদশাহ সালমান হারামাইন শরিফাইনের অতিথিদের দিক-নির্দেশনা, তত্ত্বাবধান ও সার্বিক খোঁজ-খবর রাখছেন। সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধীদের মোকাবেলার জন্য আমরা এসব ভাই-বোনদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। মূলত তাদের মনোকষ্ট দূর করতে এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের সংগ্রাম অব্যাহত রাখার অংশ হিসেবে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।

কর্ম-সময়ে নাইলা হাসান। এর আগে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। ড. শাইখ আবদুল লতিফ আল-শেইখ তখন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ক্রাইস্টচার্চ গণহত্যায় যেসব মুসলমনের ওপর মানবিক মূল্যবোধের স্খলন এবং লঙ্ঘন হয়েছিল, তাদের আত্মীয়দের কষ্ট দূর করতে আমাদের এই প্রচেষ্টা। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের বিশেষ আদেশেই তারা হজের এমন সুযোগ পাচ্ছেন।

গত ১৫ মার্চ জুমার সময় নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুইটি মসজিদে এক অস্ট্রেলীয় খ্রিষ্টান-শ্বেতাঙ্গ জঙ্গি বর্বরোচিত হামলা চালায়। পৈশাচিক ওই হামলায় ৫০ জন মুসল্লি প্রাণ হারান। ভয়াবহ ওই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় শোকে মুষড়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। হত-বিহ্বল হয়েছে গোটা পৃথিবী। শোকে মুহ্যমান হয়েছে মুসলিম বিশ্ব। আল্লাহর পবিত্র ঘর মসজিদে এমন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড শুধু নিউজিল্যান্ডে নয়; পৃথিবীতেই নজিরবিহীন।

মর্মন্তুদ এই নৃশংসতার পর নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্নের দরদী ও বিমর্ষ চেহারা দেখেছে বিশ্ববাসী। একদিকে হতাহতদের শোকার্ত পরিবারকে তিনি বুকে টেনে নিয়েছেন। অন্যদিকে মুসলিমসহ অভিবাসীদের আশ্বাস ও অভয় দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা তোমাদের শোকের সঙ্গী হয়তো হতে পারবো না। কিন্তু কথা দিচ্ছি, আমরা একসঙ্গেই চলবো। ’

.শুক্রবার (২২ মার্চ) ১টা ৩২ মিনিটে হামলার শিকার আল-নূর মসজিদের পাশে হেগলি পার্কে নীরবতার কর্মসূচিতে অংশ নেন জেসিন্ডা। মুসলিমদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তিনিসহ শত শত কিউই নারী হিজাব পরে শোকানুষ্ঠানে হাজির হন। এতে প্রায় ২৫ হাজার নিউজিল্যান্ডের নাগরিক সমবেত হন। তখন সববেত মানুষদের উদ্দেশ্যে হৃদয়-বিগলিত বক্তব্য দেন জাসিন্ডাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। তাদের মধ্যে ছিলেন নিউজিল্যান্ডের অন্যতম সিনিয়র নারী পুলিশ অফিসার নাইলা হাসান। নাইলা তার বক্তব্যের শুরুতে পুরো সালাম জানান এবং ‘নাহমাদুহু ওয়ানু সাল্লি আলা রাসুলিহিল কারিম...’ বলে কথা শুরু করেন। এমনকি সবার সম্মুখে বক্তব্য দিয়ে তিনি সেদিন প্রথমবারের মতো নিজে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার অফিসিয়াল ঘোষণা দেন। নিউজিল্যান্ডের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, তিনি সেদিনের বক্তব্যে আরও বলেন, ‘আমি মুসলিম হয়েছি, এ কথাটি বলতে আমার ২০ বছর সময় লেগে গেল। ’

আরও পড়ুন—
** নিউজিল্যান্ডে মুসলিমরা যেমন আছে
** শোকানুষ্ঠানে হাদিস শোনালেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী
** নিউজিল্যান্ডে কোরআন তেলাওয়াতে সংসদ অধিবেশন শুরু
** আজান প্রচারের পর দুই মিনিট নীরবতা, হিজাবে হাজির নারীরা
** নিউজিল্যান্ডের পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতাজুড়ে ‘সালাম’​
 

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০, আগস্ট ০৬, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।