ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

প্রিয়নবী (সা.)-এর মসজিদের আঙিনায় ‘আল-কোরআন জাদুঘর’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৯
প্রিয়নবী (সা.)-এর মসজিদের আঙিনায় ‘আল-কোরআন জাদুঘর’ ‘আল-কোরআন জাদুঘর’র দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

মদিনার ‘আল-কোরআন জাদুঘর’। সেখানকার  স্থানীয় মুসলমানরা ছাড়াও সারাবিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হজ-ওমরা পালনকারীদের কাছে একটি সুপরিচিত নাম। মসজিদের নববীর আঙিনায় এ ‘আল-কোরআন জাদুঘর’ অবস্থিত।

সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় কোরআনে কারিমের সঙ্গে গভীর ভালোবাসা স্থাপনের লক্ষে মদিনার গভর্নর ড. ফায়সাল বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ আলে সৌদের আন্তরিক সহযোগিতায়, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আর্থিক অনুদানে এবং স্থানীয় বহুমুখি প্রতিষ্ঠান সামায়া হো. কোম্পানীর পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় কোরআনের এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

মসজিদে নববীর দক্ষিণ পাশের ৫ নম্বর গেট সংলগ্ন ৩ এবং এবং ৪ নম্বর কার পার্কিং এর পেছনে জাদুঘরটির অবস্থান।

২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মদিনার গভর্নর এটি উদ্বোধন করার পরের দিন থেকে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

আল-কোরআন জাদুঘরে পবিত্র কোরআনের প্রদর্শনী।                                          ছবি: সংগৃহীতপ্রদর্শনীর উদ্দেশ্য হলো আধুনিক জাদুঘরের আদলে, নতুন ধারায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পবিত্র কোরআনের প্রকৃত পরিচয় মানুষের সামনে তুলে ধরা।

কোরআন শিক্ষা ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা, কোরআনের মহত্ব, বড়ত্ব , গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা।

আল-কোরআন জাদুঘরে পবিত্র কোরআনের প্রদর্শনী।  ছবি: সংগৃহীতকোরআনের ইতিহাস সম্পর্কে আলোকপাত করার পাশাপাশি কোরআন সম্পর্কিত আধুনিক প্রযুক্তির সাথে দর্শনার্থীদের পরিচয় করানো এবং কোরআনের খেদমতে সৌদি আরবের অবদান সম্পর্কে মানুষকে জানানো।

প্রদর্শনীর সবকিছুই আরবিতে। দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি ব্যবহৃত হয়। তবে দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য আরও দশটি ভাষায় অনুবাদ করে দশনাথীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এই দশ ভাষার মধ্যে বাংলাও একটি।

আল-কোরআন জাদুঘরে প্রাচীন কোরআনের পাণ্ডুলিপির চমৎকার প্রদর্শনী।  ছবি: সংগৃহীতজাদুঘরে রয়েছে ১৩টি সুসজ্জিত কক্ষ ও গ্যালারি। প্রতিটি গ্যালারিতে রয়েছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেক সুন্দর সংগ্রহ ও চমৎকার আয়োজন।

জাদুঘরের চমৎকার, সুসজ্জিত অভ্যর্থনাকক্ষে দর্শনার্থীদের স্বাগত জানানো হয়। দেওয়া হয় প্রদর্শনীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। রয়েছে প্রদর্শনীর পরিচিতিমূলক একটি ফিল্ম ও পুরো প্রদর্শনীর দিকনির্দেশনামূলক ম্যাপ। দর্শনার্থীরা এগুলোর সাহায্যে প্রদর্শনী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা পেয়ে থাকেন।

আল-কোরআন জাদুঘরে পবিত্র কোরআনের প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীদের ভিড়।  ছবি: সংগৃহীতএছাড়া রযেছেন নির্দিষ্ট সংখ্যক আলোচক ও অনুবাদক। তারাও দর্শনার্থীদের সঙ্গী হন। জাদুঘরটিতে রয়েছে বিশেষ প্রদর্শনীকক্ষ। এখানে সৌদি আরবের প্রাচীন যুগের বিভিন্ন বিষয়, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে নিমিত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।

এরপর রয়েছে নাবাউল আজিম কক্ষ। এখানে কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপটতুলে ধরা হয়। সেইসঙ্গে পূর্ববর্তী আসমানি গ্রন্থসমূহের পরিচিতি ও সারসংক্ষপে, মহাকাশ ও চিকিৎসাবিজ্ঞানসহ কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক বিষয়ের ব্যাখ্যা উপস্থাপনের পাশাপাশি বিভিন্ন আয়াত এবং সুরার ফজিলত সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। আলোচনা করা হয় অতীতের বিভিন্ন বিলুপ্ত ও অভিশপ্ত সম্প্রদায়ের করুণ পরিণতি সম্পর্কেও।

কোরআনের প্রাচীন পাণ্ডুলিপির চমৎকার প্রদর্শনী।  ছবি: সংগৃহীতওহি নাজিলের সূচনাকাল থেকে বর্তমান সময় র্পযন্ত কোরআনের লিখন ও সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানার ব্যবস্থা রয়েছে জাদুঘরে। রয়েছে কোরআন লেখার বিভিন্ন উপকরণ দেখার সুযোগও।

মদিনা কোরআন জাদুঘরে হজরত উসমান (রা.) কর্তৃক লিখিত পৃথিবীর সর্বপ্রথম কোরআনের পাণ্ডুলিপি মুসহাফে উসমানির ফটোকপি রয়েছে। এছাড়াও আছে খেলাফতে আব্বাসিয়া ও উসমানিয়ার শাসনামলে লিখিত ২৭টি প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। প্রতিটি পাণ্ডুলিপির পাশে লেখকের নাম, লেখার সন, তারিখ, লিখন পদ্ধতি ও লেখার উপকরণসহ সংক্ষিপ্ত পরচিতিমূলক র্বণনা রয়ছে। আছে হরিণের চামড়ায় লিখিত ৩টি পুরনো পাণ্ডুলিপি।

কোরআনের প্রদর্শনীতে বিভিন্ন দেশের মানুষের ভিড়।  ছবি: সংগৃহীতআরও আছে, ঊনিশ শতকের প্রসিদ্ধ লিপিকর হাফেজ উসমান আততুরকির হস্তলিখিত কোরআন। তিনি জীবনে একশত ছয়টি কোরআন স্বহস্তে লিখেছেন।

মদিনা কোরআন জাদঘরটির অন্যতম আকর্ষণ ৬০পৃষ্ঠায় লিখিত কোরআনের অতি দুর্লভ একটি পাণ্ডুলিপি রয়েছে এখানে। পাশাপাশি রয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ হস্তলিখিত কোরআনের কপি। যার ওজন ১৫৪ কেজি (প্রায় চার মণ)। দুর্লভ সংগ্রহের তালিকায় আরও রয়েছে বেশ কিছু বড় আকারের র্স্বণাক্ষরে লিখিত কোরআন, মিসরের প্রিন্সেস আমিনা হানম কারিমা কর্তৃক মসজিদে নববীতে প্রদত্ত হাতির দাঁত, রুপা ও মূল্যবান কারুর্কাযে তৈরি কোরআন দ্বারা সুসজ্জিত একটি আলমারি।

আল-কোরআন জাদুঘরের সম্মুখভাগের দৃশ্য।  ছবি: সংগৃহীতজাদুঘররের তাফসির গ্যালারি, প্যানোরমা ডিসপ্লে হল, কোরআনের খেদমতে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি হল, আল কোরআন ও পরিবার হলগুলোতেও রয়েছে শিক্ষণীয় বহু বিষয়। এখানে এলে জানা যাবে, বাদশাহ্ ফাহাদ কোরআন মুদ্রণ সংস্থা সম্পর্কে। কিং ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স থেকে বছরে প্রায় ১২ মিলিয়ন (১ কোটি ২০ লক্ষ) কোরআন ছাপা ও বিতরণ করা হয়।

এক কথায় কোরআন সম্পর্কে জানতে এই জাদুঘরটি বিশেষভাবে উপকারী। এটা দেখে যেকোনো দর্শনার্থী বিশেষভাবে পুলকিত হবেন।

খোলা থাকে যখন
কোরআন জাদঘর প্রতিদিন সকাল ০৯: ০০ মিনিট থেকে দুপুর ০২: ০০ মিনিট পর্যন্ত এবং বিকাল ০৪: ০০ থেকে রাত ০৯: ০০   পর্যন্ত খোলা থাকে।

লেখক: এমফিল গবেষক, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক সহকারী পরিচালক, আল-কোরআন জাদুঘর, মসজিদে নববী, সৌদি আরব।

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।