তার সম্পর্কে বড় বড় মুসলিম মনীষীরা বলেছেন, তিনি ছিলেন আয়েশা (রা.)-এর হাদিস সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত মানুষ। ইসলামের প্রধান খলিফারা তার ইলম ও জ্ঞান-গরিমাকে খুব গুরুত্ব দিতেন।
আমরাহ বিনতে আবদুর রহমান ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.)-এর যুগে জন্ম গ্রহণ করেন। তার জন্ম সাল মতান্তরে ২৮ হিজরি কিংবা ২৯ হিজরি। হজরত আয়েশা (রা.) এর কোলে-পিঠে যারা বড় হয়েছেন এবং তার থেকে রাসুল (সা.) এর হাদিস শিক্ষা করেছেন—তিনি তাদের অন্যতম।
আমরাহর বাবার নাম আবদুর রহমান ইবনে জারারাহ (রা.)। তার দাদা সাআদ ইবনে জারারাহ (রা.)। তিনি আনসার সাহাবিদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন।
তার মা সালেমা বিনতে হাকিম ইবনে হিশাম ইবনে কাওয়ালাহ। আমরাহর বিয়ে হয় আবদুর রহমান ইবনে হারেসা ইবনে আন-নোমানের সঙ্গে। সেই সংসারে মুহাম্মাদ নামে তাদের একজন পুত্র সন্তান জন্ম নেয়; তার উপাধি ছিল ‘আবুর রিজাল’।
আমরাহর জন্য আয়েশা (রা.) এর নৈকট্য ও সান্নিধ্য বড় আশীর্বাদ ছিল। তার জীবনে এটি দীপ্তিময় প্রভাব ফেলেছে। আমরাহর বাবার মৃত্যুর পর ভাই-বোনদের সঙ্গে তিনি হজরত আয়েশার কাছে বড় হন। এতে তিনি পুণ্যময় পরিবেশ ও জ্ঞান-অভিজ্ঞান এবং আল্লাহভীতিতে আবৃত আবহে বড় হওয়ার সুযোগ পান।
আমরাহর ধী-শক্তি ছিল অত্যন্ত তুখোড়। স্মৃতিশক্তির প্রখরতার কারণে তিনি অধিক হাদিস মুখস্তকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তার অধিকাংশ হাদিস ছিল উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত।
ইমাম ইবনে ইসহাক আল-ফাজারি তার কিতাব ‘সিয়ার’-এ এবং ইবনে সাদ তার তাবকাতে উল্লেখ করেন, ‘তিনি অত্যন্ত ধীমান ও বুদ্ধিমতী ছিলেন। ফলে উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে প্রচুর পরিমাণে জ্ঞান অর্জনে সক্ষম হন। ’
ইমাম বুখারি (রহ.) বলেন, ইয়াহইয়া ইবনে সাইদ—কাসিম ইবনে মুহাম্মদের কাছে আমরাহর হাদিসগুলো বর্ণনা করতেন (তিনি বিখ্যাত সাত ফকিহের মধ্যে একজন)। ইয়াহইয়া কাসিমকে বলতেন, ‘পরিপূর্ণ বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে তোমার কাছে এই হাদিস পৌঁছেছে। ’
আমরাহর মর্যাদা ও অবস্থান সম্পর্কে বড় বড় ইমামরা সাক্ষ্য দিয়েছেন। ইমাম ও মুহাদ্দিস সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ বলেন, তিন ব্যক্তি আয়েশা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসগুলো সম্পর্কে সর্বাধিক জানতেন। আল-কাসিম ইবনে আবি বকর আস-সিদ্দিক, উরওয়া ইবনে জুবাইর ও আমরাহ বিনতে আবদুর রহমান।
ইমাম জাহাবি (রহ.) বলেন, আমরাহ ছিলেন আলেমা, ফকিহা, হাদিসের ক্ষেত্রে প্রামাণ্যতা ও অধিক জ্ঞান অর্জনকারী। তার হাদিসগুলো ইসলামের বড় বড় গ্রন্থাদিতে আছে।
বড় বড় অনেক আলেম আমরাহর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। বর্ণনায় রয়েছে, আল-কাসিম ইবনে মুহাম্মদ ইমাম জুহরি (রহ.)-কে বলেন, ‘আপনাকে ইলম-জ্ঞানের প্রতি খুব আগ্রহী দেখা যাচ্ছে; অতএব আপনাকে কি আমি জ্ঞানের ভাণ্ডারের পরিচয় দেব?’ তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। কাসিম তখন বললেন, ‘আপনি আমরাহ বিনতে আবদুর রহমানের শিষ্যত্ব গ্রহণ করুন। ’ জুহরি পরবর্তীতে বলেন, ‘আমি আমরাহর কাছে এসে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করলাম। তখন তাকে ইলমের সুগভীর সমুদ্র রূপে পেলাম। ’
আমরাহ থেকে ইমাম বুখারি, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম তিরমিজি, ইমাম নাসাঈ ও ইমাম ইবনে মাজাহ হাদিস বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও আমরাহর ছাত্র ছিলেন, উরওয়া ইবনে জুবাইর, আল-ইমাম ইবনে শিহাব আজ-জুহরি ও আমর ইবনে দিনার।
আমরাহ বিনতে আবদুর রহমান আল-আনসারিয়্যা (রা.) ১০৬ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৭৭ বছর। আল্লাহ তাআলা তার ওপর ও আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হোন।
‘কিসসাতুল ইসলাম’, ‘মাউসুআতু আ‘লামিন নিসা’ ও ‘নিদাউল ঈমান’ অবলম্বনে উমায়রা সুলতানা সাফফানা
ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা ও প্রশ্ন পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৯
এমএমইউ