মেধা, স্মৃতিশক্তি ও পড়াশোনায় তারা অনন্য। ফিলিস্তিনে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক পরীক্ষায় এই চার বোন কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে।
চার বোনের সবকিছু একসঙ্গে
তাদের মা নাজাহ আল-শুনাইতি (৫৫) জানান, তাদের জন্ম একসঙ্গে হওয়ায় তাদের প্রায় সবকিছুতে মিল রয়েছে। পড়াশোনা, জ্ঞানভিত্তিক তাড়না ও রুচি-অভিরুচি ইত্যাদি সবকিছুতে মিল দেখে অবাক হতে হয়।
নাজাহ বলেন, ছোটকাল থেকেই তারা একসঙ্গে থাকতো এবং একসঙ্গে সব কাজ করতো। তারা একসঙ্গেই অসুস্থ হতো, আবার একসঙ্গে সুস্থ হতো। একসঙ্গেই খেলাধুলা করতো এবং একইসঙ্গে একইরকম পোশাক পরতে চাইতো। ছোটকালেই তাদের গ্রামের মসজিদে পাঠানো হয়, কোরআন হিফজ করতে। নামাজ পড়ার জন্য একই রকমের পোশাকও কিনে দেওয়া হয়।
চিনতে কষ্ট হতো তাদের...
সংবাদমাধ্যমকে নাজাহ জানান, ছোট থাকতে তাদের চারজনকে ভিন্ন ভিন্নভাবে চিনতে কষ্ট হতো। তাই চিনতে সহজ হওয়ার জন্য তিনি তাদের হাতে আলাদা রঙের উলের সুতা পরিয়ে দিতেন। অবশ্য এখন আর আলাদাভাবে তাদের চিনতে কষ্ট হয় না। চেনার জন্য সুতা বাঁধারও প্রয়োজন হয় না। বরং কন্ঠস্বরেই আলাদা আলাদাভাবে তাদের শনাক্ত করা যায়।
জানা গেছে, জন্মের সময় ডাক্তাররা অস্বাভাবিকতার আশঙ্কা করেছিলেন। তাই নাজাহকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, এই চার যমজের দুইজনকে গর্ভপাত করে ফেলতে। কিন্তু গর্ভের সপ্তম মাসে চার বোনই সুস্থ অবস্থায় জন্ম নেয়। নাজাহ উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠে বলেন, ছয় সন্তানের পর এই চার মেয়ে তার জীবন ‘আলোকিত’ করেছে।
কোরআনের হিফজ শুরু যেভাবে
চার বোনের একজন দিনা সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে তাদের পড়াশোনার সাত-সতেরো জানায়। তেরো বছর বয়সে একসঙ্গে চার বোন কোরআন হিফজ শুরু করে। এলাকার ‘মারকাজ আবদুল্লাহ বিন মাসউদে’ কোরআন হিফজ শুরু করে। সতেরো বছর বয়সে তারা কোরআনের পূর্ণ হিফজ সম্পন্ন করে। তবে তাদের মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই।
শিক্ষাক্ষেত্রে সামগ্রিক সাফল্য ও উন্নতির জন্য অপর বোন দিমা তাদের কোরআন হিফজের বিষয়টিকে কৃতিত্ব ও মূল্য দেয়। দিমা জানায়, কোরআন হিফজ তাদের তেজস্বী ধী-শক্তি দিয়েছে। ইসলামী শিষ্টাচার ও আরবিভাষায় তাদের সাহায্য করেছে। অধ্যয়ন-অধ্যাবসায় ও সময়ের ব্যবস্থাপনায় বরকত তৈরি করেছে।
উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী ‘নাজাহ-তনয়ারা’
ফিলিস্তিনের প্রসিদ্ধ কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা বা প্রকৌশল বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার আকাঙ্ক্ষা পুষে চার বোন। তাদের বাবা মারয়ি আল-শুনাইতি (৫৮) আশা করছেন, তাদের অধ্যয়নের জন্য বড় কোনো স্কলারশিপ যোগাড় করতে পারবেন তিনি। যা তাদের পড়াশোনা বাবদ এবং তাদের স্বপ্ন পুরণে খরচ করা যাবে।
চারজনের অন্য একজন রাজান জানায়, তারা চার বোন একত্রে একই স্কুলে পড়াশোনা করেছে। পরবর্তীতেও একই সঙ্গে তাদের অধ্যয়নযাত্রা অব্যাহত রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়।
তাদের সাফল্যের অন্যতম একটি উপকরণ সম্পর্কে রাজান বলে, স্মার্ট ডিভাইসগুলির ব্যবহার না করা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুপস্থিতি—তাদের সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে।
চারজনেরেই কালো রং পছন্দ এবং ‘কিব্বা’ ও ‘লাসগিনা’ প্রিয় খাবার। ফুটবল, বাস্কেটবল ও ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ‘দাবাকা’ পছন্দ করে চারজন। বিশ্ব ভ্রমণে বের হওয়াও তাদের স্বপ্ন।
ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা ও প্রশ্ন পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৯
এমএমইউ