ঢাকা, সোমবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মহানবী (সা.)-এর প্রিয় ফল জলপাই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৯
মহানবী (সা.)-এর প্রিয় ফল জলপাই

মহানবী (সা.)-এর পছন্দের ফলগুলোর একটি ছিল জয়তুন (জলপাই)। জয়তুনের তেল শরীরের জন্য বেশ উপকারী। রাসুল (সা.) নিজে ব্যবহার করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও জয়তুনের তেল ব্যবহারের তাগিদ দিতেন। হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা (জয়তুনের) তেল খাও এবং তা শরীরে মালিশ করো। কেননা এটি বরকত ও প্রাচুর্যময় গাছের তেল। (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৫১)

কোরআনে বর্ণিত ফলগুলোর অন্যতম একটি ফল জলপাই বা জয়তুন। সুরা ত্বিনের প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ যে ফলের কসম খেয়েছেন।

এই ফলের গাছকে আখ্যা দিয়েছেন মুবারক গাছ হিসেবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিনের নুর। তার নুরের উপমা একটি দীপাধারের মতো। তাতে রয়েছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি রয়েছে একটি চিমনির মধ্যে। চিমনিটি উজ্জ্বল তারকার মতোই। প্রদীপটি বরকতময় জয়তুন গাছের তেল দ্বারা জ্বালানো হয়, যা পূর্ব দিকেরও নয় এবং পশ্চিম দিকেরও নয়। এর তেল যেন আলো বিকিরণ করে, যদিও তাতে আগুন স্পর্শ না করে...। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ২৪)

রাসুল (সা.) যে ধরনের জয়তুন পছন্দ করতেন, সেগুলো আমাদের দেশের জলপাইয়ের মতো নয়। সেগুলো আরেকটু ছোট ছোট হয়।  একসঙ্গে অনেক খেয়ে ফেলা যায়। তবে পরিবেশগত কারণে আমাদের দেশের জলপাই আরবের জলপাইয়ের সঙ্গে হুবহু না মিললেও ঔষধি গুণে কিছুটা মিল পাওয়া যায়।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ যে জয়তুনের প্রশংসা করেছেন, তা জন্ম নেয় সিনাই পাহাড়ে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর এক বৃক্ষ যা সিনাই পাহাড় হতে উদ্গত হয়, যা আহারকারীদের জন্য তেল ও তরকারি উৎপন্ন করে। ’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ২০)

তাফসিরবিদরা এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে আরবের জয়তুনের কথা বলা হয়েছে। (তাফসিরে তবরি)

মহান আল্লাহ বরকতময় এই গাছটির কথা শুধু কোরআনেই নয়, বরং পূর্ববর্তী কিতাবেও উল্লেখ করেছেন। যার ফলে ইহুদিরা এই গাছের পাতা শান্তির প্রতীক হিসেবে দেখে। এই গাছ সম্পর্কে ইহুদিদের বিশ্বাস নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে ঘুরে আসতে পারেন এই লিংক থেকে : https://www.myolivetree.com/symbolism-olive-tree-jewish-faith/

রাসুল (সা.)-এর একটি হাদিস থেকেও জানা যায় যে আগের নবীরাও এই বরকতময় গাছের ফল ও তেল ব্যবহার করতেন। মিসওয়াক হিসেবে ব্যবহার করতেন এই গাছের ডালকে। (আল মুজামুল আওসাত)

বরকতময় এই ফল ও এর তেলের রয়েছে বহু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা। গবেষকদের মতে, জয়তুন রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল দূর করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ বা ফাইবার। ফলে এটি সবজি ও ফল দু্ইটিরই কাজ করে। আরো আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন- ই।

এছাড়া অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কোষের সুরক্ষার কাজ করে জয়তুন। আলঝেইমার বা স্মৃতিভ্রম, জটিল ধরনের টিউমার, রগ কিছুটা ফুলে যাওয়া, দাঁতের ক্যাভিটি ইত্যাদি রোগের প্রভাব কমিয়ে আনে জলপাই। এ জন্যই হয়তো রাসুল (সা.) এই গাছের ডালকে উত্তম মিসওয়াক বলেছিলেন।

জয়তুন ক্যান্সার বিস্তারের বিরুদ্ধে কোষের মেমব্রেনকে রক্ষা করে। রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার একটি বড় প্রতিকারের নাম জলপাই। যৌন উদ্দীপনা বৃদ্ধি ও প্রজনন প্রক্রিয়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখে ছোট্ট এই ফল।

এতে আছে প্রচুর পুষ্টিকর ও খনিজ উপাদান। যেমন—সোডিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস ও আয়োডিন। শরীরে দরকারি ভিটামিন ও অ্যামাইনো এসিড সরবরাহ করে। জলপাইতে আছে অলেইক এসিড, আর এই অলেইক এসিড হার্টের সুরক্ষার কাজ করে।

চুল ও দাড়িতে নিয়মিত জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করলে চুল পাকার প্রবণতা কমে যায়।

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন।  লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।