ব্রিটিশ মুসলিমদের একটি শীর্ষস্থানীয় গোষ্ঠী নির্বাচনী এলাকাগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা গেছে মুসলিম ভোটাররা দেশব্যাপী ভোটার নিবন্ধনে এগিয়ে থাকার কারণে মোট ৩১টি আসনে জয় পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। ব্রিটেনের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনটা জানা গেছে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) এমসিবির ৩১টি প্রান্তিক আসনের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেসময় ব্রিটেন মুসলিম কাউন্সিলের সেক্রেটারি-জেনারেলে হারুন খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমাদের সমাজে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে মুসলমানরা -তাদের সামগ্রিক বৈচিত্র্যে- আসন্ন নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
হারুন খান জানান, আমরা আশা করছি, নির্বাচনে মুসলিম প্রার্থীদের অংশ গ্রহণের বিষয়টি সারাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে যাবে এবং তারা গুরুত্ব দেবে। নির্বাচনে মুসলিম ভোটারদের ‘উচ্চ’ বা ‘মাঝারি’ মানের প্রভাব থাকতে পারে।
যে ৩১টি আসন মুসলিমদের দখলে আসতে পারে সেগুলোর ১৪ করে লেবার ও কনজারভেটিভের এবং বাকি তিনটি এসএনপি-র। তবে যুক্তরাজ্যের মুসলমানদের প্রধান প্রতিনিধি সংস্থা ‘মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনস’ নির্দলীয় থাকবে।
নির্বাচনে ভূমিকা রাখছে মুসলিম ভোটাররা
‘মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনস’ (এমসিবি) জানিয়েছে, মুসলিম ভোটারদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও সম্প্রদায়কে নির্বাচনের বিতর্কে জড়াতে উত্সাহিত করার প্রতি মনোনিবেশ করছে।
শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) ব্রিটেনের মসজিদগুলো ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সংগঠনগুলো প্রথম জাতীয় মুসলিম ভোটার নিবন্ধন দিবসে অংশ নেবে। এপ্রসঙ্গে এমসিবির সহকারী সেক্রেটারি-জেনারেল জারা মোহাম্মদ বলেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা সবাই –তরুণ-যুবা, বৃদ্ধ-বণিতা– রাজনৈতিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমাদের একটি চমৎকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে পারছি।
জারা মোহাম্মদ বলেন, আমাদের ভোটের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদ, কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠন, ছাত্রসমাজ বা নারী গ্রুপ—আমাদের প্রত্যেকের যে কেউ-ই পার্থক্য এনে দিতে পারে। এডিনবার্গের মতো ইলিংয়ের ক্ষেত্রেও এটি সত্য যে, আমাদের সবার দায়িত্ব হলো যত বেশি লোক সম্ভব ভোটের নিবন্ধনে উত্সাহিত করা।
আইলিংটন উত্তর আসনের ফিনসবারি পার্ক মসজিদের (২০১৭ সালে কট্টর বামপন্থী জেরেমি কর্বিনের উগ্র সমর্থকরা মসজিদটিতে হামলা করেছিল) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কোজবার বলেন, আমার মসজিদ ও আমার সম্প্রদায়কে যখন রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তখন আমাদের কী মূল্য দিতে হবে তা আমরা জানি।
তিনি আরও বলেন, এই সময়টাতে মুসলমানরা তাদের কণ্ঠস্বর উচ্চ করেছে। বিশেষত অনেক মুসলিম সম্প্রদায় এমন আসনে রয়েছে, যেখানে তাদের একজন প্রার্থী বা সংসদে স্থান করে নেওয়া অন্য প্রার্থীদের মাঝে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
যুক্তরাজ্যের অন্যতম বৃহৎ বার্মিংহাম কেন্দ্রীয় মসজিদের নাসির মাহমুদ বলেন, মুসলিম ও মুসলিম নির্বশেষে প্রত্যেকের নাগরিক দায়িত্ব হলো- তাদের ভোটের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করা। আর নির্বাচনে মুসলিমদের অবস্থান ও কণ্ঠস্বর উঁচু করতে নির্বাচন নিবন্ধনটি এতে বেশ সহায়তা করছে।
নির্বাচনে মুসলিমদের প্রভাব-ক্ষমতা
২০০৯ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে সমগ্র যুক্তরাজ্যে প্রায় ২৪ লাখ মুসলমানকে ভোট দেওয়ার উৎসহ-পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা অনুসারে, বর্তমানে ব্রিটেনে মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ।
চলতি মাসের শুরুতে ব্রিটিশ মুসলিমদের তিনটি শীর্ষস্থানীয় সংগঠন আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মুসলমানদের ভোট দিতে এবং তাদের কন্ঠস্বর উঁচু করতে আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি সমাজের সঙ্গে তাদের পুরোপুরি সম্পৃক্ত হয়ে নাগরিক দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দিয়েছে।
এদিকে মুসলিম কাউন্সিল অফ ব্রিটেন (এমসিবি), মুসলিম এনগেজমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এমইএনডি) এবং মুসলিম পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি ইউকে (এমপিএইউকি) জানিয়েছে, পরবর্তী সরকার নির্বাচনে ব্রিটেনের মুসলমানদের বিশেষ ক্ষমতা ও ভূমিকা থাকছে।
ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। বিষয়ভিত্তিক লেখা ও জীবনঘনিষ্ঠ প্রশ্ন পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৯
এমএমইউ