এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা’র আম বয়ানের মধ্যে দিয়ে ইজতেমা শুরু হয়। এরপর শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বাদ ফজর আম বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা ওবায়দুল্লাহ খুরশিদ।
বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে কয়েক লাখ মুসল্লি অবস্থান নিয়েছেন গত কয়েকদিন ধরে। এরপরও রোববার (১২ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ভোর থেকে ময়দানমুখী মুসল্লিদের স্রোত দেখা গেছে। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার মুসল্লি আসছেন ময়দানে।
বাস, ট্রাক, পিকআপ, ট্রেন ও নৌকাযোগে যে যেভাবে পারছেন আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে ছুটে আসছেন। অনেকেই মোনাজাতে শরিক হতে ময়দানের আশপাশে অলিগলি, বাড়ি ও কলকারখানার ছাদে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও খালি জায়গায় পলিথিন, পত্রিকা, পাটি ও জায়নামাজ বিছিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকেই যানবাহন না পেয়ে দূর দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে ইজতেমা ময়দান ও পার্শ্ববর্তী স্থানে অবস্থান নিয়েছেন।
মুসল্লিদের পদচারণায় মুখর গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী, ঘোড়াশাল ও কামারপাড়া সড়ক। পায়ে হেঁটেও হাজার হাজারো মুসল্লি ময়দানে আসছেন আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে।
সরেজমিনে (১২ জানুয়ারি) ৮টার দিকে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই এ সড়কের আব্দুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়া বাজার স্ট্যান্ড পর্যন্ত বাসসহ সব যানবান চলাচল বন্ধ। যানবাহন না পেয়ে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ সবাই মিলে পায়ে হেঁটে বা নৌ পথে ইজতেমা ময়দানের দিকে যাচ্ছেন।
আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ীর বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বারই আমি ও আমার বাবা বিশ্ব ইজতেমায় আসি। আগের বারের ইজতেমার সময় পরিবহন চলাচল করতো। কিন্তু এবার মানুষ বেশি হয়ে যাওয়ায় কোনো পরিবহন চলছে না। তাই আমি আর আমার বাবা মোনাজাত করবো বলে হেঁটেই ইজতেমা ময়দানের দিকে যাচ্ছি।
এছাড়া নৌ পথে ইজতেমা ময়দানে যাচ্ছেন চারাবাগ মাদরাসার ছাত্র আব্দুল্লাহ, আল-আমিন, আশরাফুল। তারা বলেন, ইজতেমার প্রথম দিন থেকেই যেতে চেয়েছিলাম। আজ আখেরি মোনাজতে অংশ নিতে যাচ্ছি। আল্লাহতালার কাছে সব পাপের ক্ষমা চাইবো বলে। গাড়ি না পাওয়ায় নৌকায় করে সবাই যাচ্ছি।
রোববার (১২ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। পরে ১৭ জানুয়ারি আবার শুরু হবে ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ১৯ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। এবার বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব পরিচালনা করেন মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা। দ্বিতীয় পর্ব পরিচালনা করবেন সাদ অনুসারীরা।
আশুলিয়া পুলিশ বক্সের ট্রাফিক ইনচার্জ মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে গত কয় দিন ধরেই সারাদেশের মানুষ টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে আসছেন। আজ ইজতেমার শেষ দিন ও আখেরি মোনাজাত তাই টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের সব যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সকাল থেকেই। মুসল্লিরা যেন ইজতেমা ময়দানে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নভাবে যেতে পারে সেজন্য আমরা সবসময় সড়কে আছি।
বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, রোববার (১২ জানুয়ারি) জোহরের আগেই আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত ও শেষ হবে। শনিবারের মধ্যেই তাবলিগ জামাতের কয়েক লাখ মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নেন। অনেকেই ময়দানে জায়গা না পেয়ে আশপাশে সড়ক ও খালি জায়গায় অবস্থান নিয়ে শীর্ষ মাওলানাদের বয়ান শুনছেন এবং ইবাদত করছেন।
আরও পড়ুন>> বিশ্ব ইজতেমা: রোববার আখেরি মোনাজাত
আরও পড়ুন>> ইজতেমায় ২ দিনে মারা গেলেন ৯ মুসল্লি
আরও পড়ুন>> তুরাগতীরে বয়ান-ইবাদতে লাখো মুসল্লির দ্বিতীয় দিন
আরও পড়ুন>> ইজতেমা ময়দানে লাখো মুসল্লির জুমার নামাজ আদায়
আরও পড়ুন>> তুরাগ তীরে জুমা’র নামাজ আদায়ে লাখো মুসল্লির ঢল
আরও পড়ুন>> আম বয়ানে শুরু বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২০
আরএস/এইচএডি