ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

শতবর্ষী জোকা দরবার শরীফে তিন দিনব্যাপী ওরস শুরু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২
শতবর্ষী জোকা দরবার শরীফে তিন দিনব্যাপী ওরস শুরু

বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী জোকা দরবার শরীফে তিন দিনব্যাপী ওরস শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) আসরের নামাজের পরে উপজেলার মধ্যজোকা গ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে ১০২ তম এই ওরস শরীফ শুরু হয়।

 

ভোর থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত মানুষকে জোকা দরবারে ভিড় জমাতে দেখা গেছে। প্রতিবছর স্থানীয় ভক্ত ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক হাজার মানুষ আসেন শতবর্ষী এই দরবারে। পীরের সাক্ষাৎ, মানত পরিশোধ, রোগমুক্তি, মনবাসনা পূরণ, আধ্যাত্মিক কামিয়াব লাভসহ নানা কারণে আসেন তারা। নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ সব শ্রেণীর লোকের সমাগম ঘটে এখানে। তিন দিনের এই ওরসে প্রতি ওয়াক্তই কয়েক হাজার মানুষকে বিনামূল্যে খাওয়ানো হয়। পীরের বাড়ির উঠোনে পাটিতে বসে  মাটির পাত্রে খান ভক্ত ও দর্শনার্থীরা। ওরস উপলক্ষে দরবারের সামনের মাঠে তিনদিনের মেলাও বসেছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোরেলগঞ্জ উপজেলার মধ্যজোকা গ্রামের মরহুম শাহসুফী হযরত রজ্জব চাঁন (রহ) একজন ধর্মীয় সাধক ছিলেন। ধর্মপালনের পাশাপাশি তার মধ্যে মানুষের সমস্যা সমাধানের মত আধ্যাত্মিক শক্তি ছিল। এই কেরামতির কথা ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা ভিড় জমাতে থাকেন। ভক্তদের সংখ্যা বাড়লে তার নিজ বাড়িতে তিন দিনব্যাপী ওরস শুরু হয়। বর্তমানে ১০২ তম (প্রতি বছরে একবার) ওরস চলছে এই দরবারে। শাহসুফী হযরত রজ্জব চাঁন (রহ) এর মাজার, ওরস উপলক্ষে মেলা দেখে এবং বর্তমান পীরের আতিথেয়তায় খুশি বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ভক্ত ও দর্শনার্থীরা।

মাদারীপুর থেকে আসা মো. বাদল মাতব্বর বলেন, ১০ বছর ধরে নিয়মিত এই দরবারে আসি। এ বছর পীরের বাড়ির মেহমানদের খাবারের জন্য একটি খাসি নিয়ে এসেছি। আমরা প্রায় ১০জন এক সঙ্গে এসেছি।

বরিশাল থেকে আসা রাসেল নামে এক ভক্ত বলেন, ছোট বেলা থেকে এই দরবারে আসি। এখানে আসলে আমাদের ভাল লাগে।

আব্দুস সোবহান নামের আরেক ভক্ত বলেন, ছোট বেলা মায়ের সঙ্গে এই দরবারে আসতাম। তখন বর্তমান পীরের বাবা নুরিশাহ ফকির ছিলেন। তাকে মামা ডাকতাম। তখন থেকে দেখেছি এখানে অনেক মানুষ আসে। প্রতিবছরই নতুন নতুন মানুষকে দেখা যায় এখানে।

নয়ন খাঁ, রবিউল ইসলাম, ছালাম মোল্লাসহ কয়েকজন বলেন, দরবারে এসে আমরা প্রথমেই বাবার মাজারে জিয়ারত করি। এর পরে পীরের বাড়ি ঘুরে দেখি। তিনদিন থাকি, খাওয়ার কোনো চিন্তা নেই। বিভিন্ন ফকির ও সাধকের কাছ থেকে ধর্মীয় বানি শুনি আমাদের ভাল লাগে।

বর্তমান পীর পীরজাদা মো. শাহাবুদ্দিন ফকির (শাহনূরী) বলেন, দাদা মরহুম শাহসুফী হযরত রজ্জব চাঁন (রহ) এবং বাবা নুরিশাহ ফকির যৌনপুর পীর সাহেবের অনুসারী ছিলেন। আমরাও যৌনপুর পীরের তরিকায় চলি। তিন দিনব্যাপী এই ওরসে ধর্মীয় আলোচনা, আধ্যাত্মিক গানসহ নানা আয়োজন থাকে আমাদের। যেহেতু দূর-দূরান্ত থেকে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা আসে সেজন্য আমরা বিনামূল্যে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করি। যে যার মতো উঠোনে, মাঠে, মাজার ও মসজিদের বারান্দায় ঘুমায়। কোনো সমস্যা হয় না। এত মানুষের সমাগম হওয়ার পরেও কোনো বিশৃঙ্খলা নেই আমাদের দরবারে। এটা শুধু আল্লাহর রহমত থাকলেই সম্ভব।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।