ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পালিত হচ্ছে লাইলাতুল বরাত

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২২
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পালিত হচ্ছে লাইলাতুল বরাত

ঢাকা: ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে শুক্রবার (১৮মার্চ) সন্ধ্যা থেকে দেশের মুসলিম সম্প্রদায় সৌভাগ্যের রজনী পবিত্র লাইলাতুল বরাত (শবে বরাত) পালন করছেন। গত দু’বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে মসজিদগুলোতে সীমিত পরিসরে এই পবিত্র রজনীর ইবাদত হলেও এবার সেই বিধি নিষেধ নেই।

ফলে প্রতিটি মসজিদে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের অতিরিক্ত ভিড় দেখা যাচ্ছে।  

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ আদায়, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলসহ নানা ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে রাতটি অতিবাহিত করছেন।

মহিমান্বিত এ রজনীতে মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও বিশেষ মোনাজাত ও দোয়ায় শামিল রয়েছেন।

এদিকে পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়া বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

সৌভাগ্যের এ রজনীতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মুসলমানরা কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ ও বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন। কেউ কেউ ইবাদতে মশগুল থাকবেন ফজর নামাজ পর্যন্ত। এ উপলক্ষে অনেকে নফল রোজাও রাখেন।

মুসলমানদের বিশ্বাস, মহিমান্বিত এ রাতেই মহান আল্লাহতায়ালা মানুষের ভাগ্য অর্থাৎ তার নতুন বছরের ‘রিজিক’ নির্ধারণ করে থাকেন।

রাতব্যাপী ইবাদত, বন্দেগি, জিকির ছাড়াও পবিত্র এ রাতে মুসলমানরা মৃত বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনসহ প্রিয়জনদের কবর জিয়ারত করেন। তাই এ রাতে কবরস্থানগুলোতে মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়।

মহিমান্বিত এ রজনী ভাবগম্ভীর পরিবেশের মধ্য দিয়ে পালনের লক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে শুক্রবার দিবাগত রাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে- ওয়াজ মাহফিল, কোরআন তিলাওয়াত, মিলাদ মাহফিল, হামদ, নাত, নফল ও তাহাজ্জুদের নামাজ এবং আখেরি মোনাজাত।

পবিত্র এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের এবাদত-বন্দেগির জন্য জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদ সারা রাত খোলা রয়েছে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও এ উপলক্ষে ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে শনিবার (১৯মার্চ) সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে শবে বরাত উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ক্ষারজাতীয় বা বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকা, বাজিসহ অন্যান্য ক্ষতিকর ও দূষণীয় দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, পবিত্র শবে বরাত মুসলমানদের জন্য মহিমান্বিত ও বরকতময় এক রজনী। এ উপলক্ষে আমি দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে জানাই আন্তরিক মোবারকবাদ।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, মাহে রমজান ও সৌভাগ্যের আগমনী বার্তা নিয়ে পবিত্র লাইলাতুল বরাত আমাদের মাঝে সমাগত। উপমহাদেশে শবে বরাত প্রধানত সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালিত হয়। পবিত্র এ রজনী আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও ক্ষমা লাভের অপার সুযোগ এনে দেয়। ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামের সুমহান আদর্শ আমাদের পাথেয়। শবে বরাতের এই পবিত্র রজনীতে আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে অশেষ রহমত ও বরকত কামনার পাশাপাশি দেশের অব্যাহত অগ্রগতি, কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্যের প্রার্থনা জানাই। সৌভাগ্য মণ্ডিত পবিত্র শবে বরাতের পূর্ণ ফজিলত আমাদের ওপর বর্ষিত হোক।

অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলমানকে আমি আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই। মানবজাতির জন্য সৌভাগ্যের এই রজনী বয়ে আনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমত ও বরকত। এ রাতে আল্লাহপাক ক্ষমা প্রদর্শন এবং প্রার্থনা পূরণের অনুপম মহিমা প্রদর্শন করেন।

এতে তিনি আরও বলেন, পবিত্র শবে বরাতের মহাত্মে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবকল্যাণ ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আসুন, সব অন্যায়, অনাচার, হানাহানি ও কুসংস্কার পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করি।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, ১৮ মার্চ, ২০২২
এমএইচ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।