ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বাতাসের শেষ কোথায়

ইমরুল ইউসুফ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৩
বাতাসের শেষ কোথায়

আহা বাতাস
বাতাস, আহা বাতাস। আমাদের চারদিকে কতো বাতাস।

ঠাণ্ডা, গরম। কাব্যের ভাষায় আবার কখনো মৃদুমন্দ। হাওয়া, সমীরণ, পবন, বায়ু যে নামেই আমরা ডাকি না কেন বাতাস বাতাসই। বাতাস আমরা চোখে দেখি না। কিন্তু অনুভব করি। বাতাসের কোনো স্বাদ নেই, গন্ধ নেই। তবে নানা কারণে বাতাস যখন দূষিত হয়ে পড়ে তখন বাতাসে গন্ধ ছড়ায়। বাতাস ছড়িয়ে থাকে সবখানে। আমাদের সারাক্ষণ জড়িয়ে রাখে। ঘিরে রাখে। আমাদের মাথার ওপরেই তো আছে পাঁচটি হাতির ওজনের সমান অর্থাৎ ৩৪০ মণ বা ৩০ হাজার পাউন্ড ভার। এই চাপে তো আমাদের পিষে যাবার কথা। অথচ আমরা চাপ টের পাই না। কারণ আমাদের শরীরের ভিতর থেকে এক ধরনের চাপ বাইরের দিকে আসে। বাইরের বাতাসের সঙ্গে সে চাপ সমান থাকে বলে আমরা দু’টি চাপের কোনোটাই টের পাই না।

wind16m1ডুবে যাই বাতাসের মহাসমুদ্রে

আমাদের মাথার ওপরের দিকে কতো জায়গা। বিশাল এই জায়গাকে আমরা বলি আকাশ। এর নিচের অংশে বায়ুমণ্ডল। তার ওপরে মহাকাশ। যে আকাশে পাখি ওড়ে, মেঘ জমে, সে আকাশকে আমরা বলি বায়ুমণ্ডল। যে আকাশে চন্দ্র-সূর্য-তারা দেখতে পাই সে আকাশকে বলি মহাকাশ। সেটি পৃথিবীর বাইরে। পৃথিবীর সব স্থল আর পানি ঘিরে বাতাসের এক মহাসাগর আছে। এর একেবারে নিচে আমরা বসবাস করি। বাতাসের সেই মহাসাগর পানির মহাসাগরের গভীরতম জায়গার চাইতেও ৩০-৪০ গুণ বেশি গভীর। এর নাম বায়ুমণ্ডল। এটি পৃথিবীরই অংশ। শিলামণ্ডল, বারিমণ্ডল আর বায়ুমণ্ডল নিয়েই পৃথিবী। পৃথিবীর জীবজগতকে ক্ষতিকর বিকিরণ এবং মহাকজাগতিক ধ্বংসাবশেষ থেকে রক্ষা করে এই বায়ুমণ্ডল।

কী আছে বাতাসে

নানাবিধ গ্যাসের মিশ্রণে বাতাস গঠিত। এসব গ্যাসের মধ্যে নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বায়ুর প্রধান উপাদানগুলো হলোÑ নাইট্রোজেন ৭৮.০৯%, অক্সিজেন ২০.৯৫%, আর্গন ০.৯৩% এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড ০.০৩%। এছাড়া বাতাসে রয়েছে সামান্য পরিমাণে নিয়ন, হিলিয়াম, মিথেন, ক্রিপটন, হাইড্রোজেন, জেনন এবং ওজন। আছে জলীয়বাষ্প ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড। সুতরাং বাতাস একটি মিশ্র পদার্থ। পদার্থের সব ধর্মই আছে বাতাসে। যেমনÑ বাতাস স্থান দখল করে। বল প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করে এবং বাতাসের ওজন আছে। প্রতি লিটার বাতাসের ওজন ১.৩ গ্রাম।

wind1.2mআমরা বেঁচে থাকি বাতাস ছুঁয়ে

বাতাসই পৃথিবীতে মানুষসহ যাবতীয় প্রাণীর বসবাসের উপযোগী করেছে। জীবজন্তু বাতাস থেকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এবং উদ্ভিদ কার্বন-ডাই-অক্সাইড টেনে নিয়ে প্রাণ রক্ষা করে। বাতাসে অক্সিজেন আছে বলেই আগুন জ্বলে আর বাতাসে জলীয়বাষ্প আছে বলেই বৃষ্টি হয়। সুতরাং সব প্রাণী বেঁচে থাকে বাতাসের শরীর ছুঁয়ে।

বাতাসের প্রকারভেদ

পৃথিবীতে অনবরত যে বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে তারও রয়েছে শ্রেণীভেদ। বাতাসকে প্রধানত ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। আয়ন বায়ু, প্রত্যয়ন বায়ু এবং মেরুদেশীয় বায়ু সারাবছর একই দিক থেকে প্রবাহিত হয় বলে এদের বলা হয় নিয়ত বায়ু। দিন বা বছরের নির্দিষ্ট সময়ে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে বলে সাময়িক বায়ু। স্থল বায়ু, সমুদ্র বায়ু ও মৌসুমী বায়ুকে একসঙ্গে সাময়িক বায়ু বলে। ঘূর্ণবাত, প্রতীপ ঘূর্ণবাত এবং টর্নেডো প্রভৃতি বায়ুকে বলে আকস্মিক বায়ু। এছাড়া সিরক্কো, খামসিন এবং কালবৈশাখীকে বলা হয় স্থানীয় বায়ু।

বায়ুমণ্ডলের নানা স্তর

বিজ্ঞানীরা বায়ুমণ্ডলকে ৫ ভাগে ভাগ করেছেন। সবচেয়ে নিচের স্তরটির নাম ট্রপোস্ফিয়ার বা ঘনমণ্ডল। এই স্তর ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। মেঘ, বৃষ্টি সবই হয় এই স্তরে। এজন্য এই স্তরকে আবহাওয়া স্তরও বলা হয়। আমাদের বসবাস এই স্তরে। এর ওপরের স্তরের নাম ট্রপোপজ। ট্রপোপজের ওপরের স্তরের নাম স্ট্রাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল। এই স্তরে মেঘ নেই, ঝড়-বৃষ্টিও নেই। যে কারণে এ স্তরে বিমান চলাচল করে।

এ দু’টি স্তরের বিস্তৃতি ৬৬ কিলোমিটারের মধ্যে। স্ট্রাটোস্ফিয়ারের ওপরের স্তরের নাম ওজোনোস্ফিয়ার বা ওজনমণ্ডল। সূর্যের তাপ এবং অতি বেগুনী রশ্মি শোষণ করে এ স্তর। স্ট্রাটোস্ফিয়ারের ঠিক ওপর থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত এই স্তরের অবস্থান। এর অতিবেগুনী রশ্মি শোষণ করে পৃথিবীর জীবজগতকে রক্ষা করে। ওজোনোস্ফিয়ার পরের স্তরের নাম আয়রোস্ফিয়ার বা আয়োনমণ্ডল। এই স্তর প্রায় ৩৯৬ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্তরের বিশেষত্ব হচ্ছে, এ স্তরে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হতে পারে। হয় উল্কাপাত। সবায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে ওপরের স্তরের নাম একসোস্ফিয়ার বা বর্হিমণ্ডল। এর পরেই মহাশূন্যের শুরু। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ওপর থেকে ৭৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এ স্তর। এ স্তরের বায়ু একেবারেই হালকা।

wind145m3বায়ুমণ্ডলের তাপ

ভূপৃষ্ঠ ছেড়ে উপরে উঠলে গরম মোটেই বাড়ে না, বরং কমতে থাকে। এই উত্তাপ সাধারণভাবে ৩০০ ফুট উচ্চতায় ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট হারে কমে। সূর্যের তাপ যেহেতু বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়েই আসে, সেহেতু বাতাস গরম হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা হয় না। প্রকৃতির এ এক আশ্চর্য নিয়ম। তবু আমরা যে গরম হাওয়া পাই, সেটি গরম হয় পৃথিবীর মাটি, পানির তাপ লেগে। তাই ওপরের বাতাস ঠাণ্ডা। কেননা ভূপৃষ্ঠ থেকে স্থান যতই উঁচু হবে, গরম হাওয়া সেখানে ততই কম পৌঁছাবে।

বাতাসের শেষ কোথায়?

পৃথিবী থেকে ৯৬ কিলোমিটার উঁচুতে দেখা যায় সমুদ্রের ওপর যতটুকু জায়গায় ১০ লাখ বাতাসের কণা গাদাগাদি করে থাকে, সেখানে ততটুকু জায়গায় রয়েছে মাত্র একটি বাতাসের কণা। আমরা যদি ৪৮২-৭৫০ কিলোমিটার উঁচুতে উঠি তাহলে দেখা যাবে বাতাসের চাপ একেবারেই নেই। এজন্য যত ওপরে ওঠা যাবে আমাদের নিঃশ্বাস নিতে ততো বেশি কষ্ট হবে।

ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরে উঠতে গেলে অক্সিজেন লাগে, লাগে বিশেষ ধরনের পোশাক। তাই বলে ওপরের দিকে বাতাসের চাপ একেবারেই ফুরিয়ে যায় না। হাজার মাইল ওপরেও বাতাসের কণা দেখা যায়। এজন্য ঠিক কতদূর উচ্চতা পর্যন্ত বাতাস আছে তা সঠিকভাবে বলা যায় না। বাতাসের বুঝি কোনো শেষ নেই। বাতাসের কোনো দেশ নেই। বাতাস সারাক্ষণ আমাদের ছুঁয়ে আছে মায়া হয়ে, ছায়া হয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।