ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

মেন্টাল ভূত (প্রথম পর্ব)

ইমরুল ইউসুফ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১০
মেন্টাল ভূত (প্রথম পর্ব)

আমাদের গ্রামের এমন কোনো মানুষ নেই যে মেন্টাল বাহাদুরকে চেনে না। বিশাল দেহ আর কালো কুচকুচে রঙের মেন্টাল এই আছে, এই নেই।

দিনে কিংবা রাতে, সকাল কিংবা সন্ধ্যায় মেন্টাল ঘুরছে চর্কির মতো। এ পথ ও পথ। এ বাড়ি ও বাড়ি। এ গ্রাম ও গ্রাম। ঠোঁটটা একটু বাঁকিয়ে, হাত দুটি নাচিয়ে মেন্টাল চলেছে। পরনে ছেঁড়া লুঙ্গি। খালি গা। খালি পা। মুখে সবসময় হুঁ হা, গোঁ গা শব্দ। এই শব্দ আবার মাঝেমধ্যে বাড়ে। তার সামনে ছোটো কোনো ছেলেমেয়ে পড়লেই হয়েছে। মেন্টাল হুঁ হা, গোঁ গা করে কী যে বলতো তা কেউ বুঝতে পারতো না। ছোটরা এজন্য মেন্টালকে ভীষণ ভয় পেতো। মেন্টালকে দেখলেই পালানোর চেষ্টা করতো।  

কিন্তু আমি মেন্টালকে মোটেও ভয় পেতাম না। তাকে দেখে পালিয়ে যেতাম না। বরং আমি তার কথা মন দিয়ে শুনতাম। তার কথা বোঝার চেষ্টা করতাম। মেন্টাল আমাকে সবসময় বেড়াতে নিয়ে যেতে চাইতো। বলতো, ইমু বাবু চলো বেড়াতে যাই। তোমাকে মজার মজার জিনিস খাওয়াবো। অবাক করা সব জিনিস দেখাবো। আমার ইচ্ছে করতো মেন্টালের দেয়া জিনিস খেতে। মেন্টালের সঙ্গে বেড়াতে যেতে। বাবা মায়ের কারণে যেতে পারতাম না। তারা আমাকে বলে দিয়েছেন মেন্টাল পাগলের সঙ্গে আমি যেন কথা না বলি। তার সঙ্গে যেন কোথাও না যাই।

কারো কথা শুনতে ইচ্ছে না করলেও মেন্টালের কথা শুনতে ভালো লাগতো আমার। এজন্য বাবা মাকে না জানিয়ে আমি একদিন মেন্টালের সঙ্গে বেড়াতে গেলাম। মেন্টাল বাহাদুরের কাঁধে আমি। আমি কেমন জানি নেচে নেচে চলতে লাগলাম। আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটি পথ মিশে গেছে বিশাল মাঠের সঙ্গে। সে পথেই হাঁটতে লাগলাম আমরা। যেদিকে চোখ যায় শুধু মাঠ আর সবুজ গাছ। মাঠের বুক চিরে সাপের মতো এগিয়ে গেছে েেতর আইল। মেন্টাল বাহাদুর আমাকে আঁকাবাঁকা আইল পথ ধরেই নিয়ে যেতে লাগলো। মাঠের দুপাশে কতো রকমের যে ধান! আর কতো ধরনের ঘাস! তা বলে শেষ করা যাবে না।

আমাদের চলার সময় মেন্টাল গুঁই গাই করে কথা বলেই চলেছে। আমি শুনি বা না শুনি মেন্টালের তাতে কোনো খেয়াল নেই। মেন্টাল বললো, জানো ইমু বাবু আমি তোমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি? আমরা যাচ্ছি পেতপুকুরে। পেতপুকুর এমনই একটি জায়গা যেখানে গেলে তুমি হারিয়ে যাবে অজানা গল্পের রাজ্যে। এ রাজ্যে তোমার আমার মতো কোনো মানুষ নেই। এখানে আছে বিশাল বিশাল গাছগাছালি। ছোটবড়ো পাখপাখালি। ঘাট বাধানো পুকুর। চিনির পানির মতো মিষ্টি পানি। আর যারা এ রাজ্যে থাকে তারা এতোটাই বড়ো যে তুমি ঘাড় উঁচু করেও তাদের মুখ দেখতে পাবে না। তাদের কথাও তুমি বুঝতে পারবে না। তবে কোনো সমস্যা নেই। আমি আছি তোমার সঙ্গে। আমিই তোমাকে তাদের সব কথা বুঝিয়ে দেবো।

মেন্টালের এই কথা শুনে আমার কেমন জানি ভয় ভয় লাগছিল। বইয়ে পড়া ভূতের গল্পেগুলোর কথা মনে হচ্ছিল বারবার। কেবলই মনে হচ্ছিল ভূত আমার ঘাড় মটকাবে না তো? ভূত আমার রক্ত চুষে খেতে চাইবে না তো? এমনটি যখন ভাবছি ঠিক তখনই আমার মনে হলো মেন্টালের সঙ্গে পেতপুকুরে বেড়াতে আসা আমার মোটেও ঠিক হয়নি। এজন্য আমি মেন্টালকে বললাম, বাহাদুর ভাইয়া আমাকে নামিয়ে দাও। আমি তোমার সঙ্গে বেড়াতে যাবো না। আমার ভয় করছে। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। মেন্টাল বললো, কোনো ভয় নেই। আমি তো আছি তোমার সঙ্গে। তুমি শুধু শুধুই ভয় পাচ্ছো। পেতপুকুরে চলো। দেখবে তোমার ঠিকই ভালো লাগবে। আর তুমি তো জানো আমি যেটা বলি সেটা করি। আমি বলছি তোমার কোনো তি হবে না। তাছাড়া তোমাকে এখন যদি এই ফাঁকা মাঠে ছেড়ে দেই তাহলে তুমি কি বাড়ি যেতে পারবে?

পারবো না বাহাদুর ভাইয়া। আমি তোমার সঙ্গে এসেছি তোমার সঙ্গেই বাড়ি ফিরবো। একথা বলে আমি মেন্টালের চুল জোরে চেপে ধরলাম। মেন্টাল বললো, বিরক্ত করো না ইমু। যেখানে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছি সেখানে আগে যাই। তারপর দেখা যাবে কী করা যায়। কথা বলতে বলতে সামনে তাকিয়ে দেখি বিশাল জঙ্গল। জঙ্গলটি মাঠ থেকে বেশ উঁচু এবং গোলাকার। গাছগুলো দূর থেকে দেখে ভীষণ ঘন এবং কালো মনে হচ্ছে। এতটাই ঘন মনে হচ্ছে যে এ জঙ্গলের ভিতরে বোধহয় ঢোকা যাবে না। আমরা যতই জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম ততোই স্পষ্ট হতে থাকলো গাছগুলো। নারিকেল, খেজুর, সুপারি, আম, জাম, বট, অশ্বথ, বাবলা কী গাছ নেই সেখানে!


বাকি অংশটুকু পড়ো দ্বিতীয় পর্বে...

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।