সারাবছর আমাদের চারপাশে অসংখ্য ফুল ফোটে। এসব ফুলের মধ্যে তুলনামূলকভাবে সাদা রঙের ফুলই বেশি।
নীলঘণ্টা

আজকাল প্রায় সব বাগানেই দেখা যায়। কখনো কখনো মাথা মুড়ানো ছোট ঝোপগুলো বাগানের সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে ওঠে। কেউ কেউ শুধুমাত্র বেড়ার জন্যও এ গাছ লাগান। তাতে ফুল ও পাতার সৌন্দর্য দুটোই পাওয়া যায়। নীলঘণ্টা (Thunbergia erecta) প্রায় সারাবছরই ফোটে এবং বাগান সাজানোর কাজে বেশ কার্যকর। গাছ প্রায় দেড় মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে, শীতকালে অল্প সময়ের জন্য পাতা ঝরে। গাছ না ছেঁটে লতাও বানান যায়। পাতা ছোট, ৩ থেকে ৫ সেমি লম্বা ও মসৃণ। ফুল ফোটে পাতার কোলে, একেকটি বা সজোড়, গাঢ়-নীল বা নীল-বেগুনি, চওড়া ও সামান্য বাঁকা, ৩ সেমি লম্বা দলনল সাদা, ভিতর হলুদ, মুখ প্রায় ৪ সেমি চওড়া। গোড়ার চারা ও কলমে চাষ। আদিআবাস দক্ষিণ আমেরিকা।
নীলঅপরাজিতা

বাঁশের বেড়া, গেইট ও রেলিং বা যে কোনো বাহন পেলেই এরা বেড়ে উঠতে পারে। বিজোড়পত্রী, পত্রিকা ৫টি, কখনো কখনো ৭টিও হতে পারে, ডিম্বাকার। ফুল দেখতে অনেকটা প্রজাপতির মতো। একারণেই ইংরেজি নাম Butterfly Pea। আমাদের দেশে সাধারণত নীল, সাদা ও বেগুনি এই তিন রঙের অপরাজিতা দেখা যায়। তবে নীল অপরাজিতাই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ইদানীং উন্নত জাতের বড় অপরাজিতাও চোখে পড়ে। গাছ চিরসবুজ। ফুল একপাপড়ি বিশিষ্ট। মাঝখানে একটি সাদা বৃন্ত থাকে। ফল লম্বাটে, চ্যাপ্টা ও বাঁকানো ধরনের। দেখতে অনেকটা শিমের মতো।
দেবী দূর্গার আরেক নাম অপরাজিতা। হিন্দুদের পূজার উপকরণেও এই ফুল কাজে লাগে। ধারণা করা হয় যে অপরাজিতার (Clitoria ternatea) জন্মস্থান মালাক্কা দ্বীপের টারনেটি নাম স্থান। ক্রমান্বয়ে ফুলটি এই উপমহাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। ফুলের প্রধান মৌসুম বর্ষা হলেও বছরের অন্যান্য সময়েও ফুল ফুটতে দেখা যায়। শুধু রূপেই নয়, অপরাজিতা ওষুধিগুণেও অনন্য। গাছের লতা, পাতা, শিকড় বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
নীলমণি

পাতাগুলো খুব বড় এবং খসখসে। বসন্তকালে অল্প সময়ের জন্য ফুল ফোটে। খবর পেয়ে মৌমাছিরা আসে দলে দলে পাপড়িগুলো দুই স্তরে সুসজ্জিত থাকে। বাসি ফুল রঙ বদলে প্রথমে বেগুনি পরে প্রায় সাদা রঙ ধারণ করে। বৈজ্ঞানিক নাম Petraea volubilis। ঢাকায় এফুল দেখার জন্য যেতে হবে শিশু একাডেমির বাগান, বলধা গার্ডেন এবং মীরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর বনবাণী কবিতায় নীলমণি ফুলের সৌন্দর্য নিয়ে কবিতা লিখেছেন
‘ফাল্গুন মাধুরী তার চরণের মঞ্জীরে মঞ্জীরে
নীলমণিমঞ্জরির গুঞ্জন বাজায়ে দিল কিরে?
আকাশ যে মৌনভার,
বহিতে পারে না আর,
নীলিমাবন্যায় শূন্যে উচ্ছলে অনন্ত ব্যাকুলতা,
তারই ধারা পুষ্পপাত্রে ভরি নিল নীলমণিলতা। ’
ঝুমকালতা

পাতা দেখেও খুব সহজে গাছ চেনা যায়। কারণ পাতার কিনারা গভীরভাবে বিভক্ত। এই অংশগুলোকে লতি বলা হয়। প্রতি পাতায় ৩ থেকে ৫টি লতি থাকে, সব মিলিয়ে ৮-১২ সেমি লম্বা। ফুল ফোটে গ্রীষ্মের শেষভাগে, থাকে গোটা বর্ষা। এ জন্য বর্ষার ফুল হিসেবেই পরিচিত। পাতার কোল থেকে একটি একটি করে সুগন্ধি ফুল ফোটে। পাপড়ি সংখ্যা ৫। মাঝখানের প্রায় ৫ সেমি চওড়া পরাগ মুকুট ফুলের প্রধান সৌন্দর্য। তাতে আছে অনেকগুলো সরু সরু ডাঁটা, বাইরের ডাঁটার নিচ বেগুনি, মধ্যে সাদা ও আগা নীল। জন্মস্থান ব্রাজিল। বৈজ্ঞানিক নাম- Passiflora caerulea।
মর্নিংগ্লোরি

মর্নিংগ্লোরি কোমল লতার গাছ, সুযোগ পেলে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পাতা দেখতে পান-পাতার মতো, ৭ থেকে ১১ সেমি লম্বা, আগা চোখা। সারা বছর কয়েকবার ফুল ফুটলেও গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে বেশি থাকে। ফুল দেখতে অনেকটা মাইকের মতো। বৈজ্ঞানিক নাম- Ipomea indica.
কাঁটামেহেদী

ঝোপজাতীয় গাছ হলেও কখনো কখনো ১৫ ফিটের মতো উঁচু হতে পারে। পাতা উজ্জ্বল সবুজ, ৮ সেমি লম্বা, কিনারা করাতের দাঁতের মতো। নীলরঙের ফুলগুলো প্রায় সারা বছর ফোটে। পাপড়ি স্পষ্টভাবে বিভক্ত নয়, কিনারা সাদা রেখায় চিত্রিত। ফুল শেষ হলে বড় বড় ডাঁটিতে ফলগুলো থোকায় থোকায় ঝুলতে থাকে। হলুদ বা কমলা রঙের ফলগুলো ভারি সুন্দর। এই ফল পাখিদের প্রিয়। বৈজ্ঞানিক নাম- Duranta erecta.
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি-i[email protected]