ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

এখনো ভাবায় সুকুমার রায়

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৩
এখনো ভাবায় সুকুমার রায়

তুমি কী হাঁসজারু, বকচ্ছপ, সিংহরিণ- এই প্রাণীগুলোর সঙ্গে পরিচিত? না না, যারা পরিচিত নও, তাদের ঘাবড়ে যাওয়ার কারণ নেই। এগুলো সত্যি সত্যি প্রাণী না, শুধুই কিছু কল্পিত প্রাণী।

কিন্তু বেশ মজার এই প্রাণীগুলোর নাম, তাই না? মজা যেহেতু লাগলোই, কাজেই এদের আবিষ্কর্তা সম্পর্কেও জানা দরকার।

হাঁসজারু, বকচ্ছপ, সিংহরিণ, হাতিমির মতো মজার মজার প্রাণীগুলোর সৃষ্টিকর্তা সুকুমার রায়। নাম শুনেই চিনে ফেলেছ নিশ্চয়ই? খুব জনপ্রিয় একজন ছড়াকার এবং শিশুসাহিত্যিক তিনি। বাংলাসাহিত্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সুকুমার রায়। শিশু-কিশোর ছেলে-বুড়ো সবাই তার ভক্ত। তবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় কিন্তু তিনি শিশুদের কাছেই।

১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর, কোলকাতার এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম সুকুমারের। আদি নিবাস ময়মনসিংহের মসুয়া গ্রামে। তার বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এবং মা বিধুমুখী দেবী। সুকুমাররা তিন ভাই এবং তিন বোন ছিলেন। সুকুমার রায়ের স্ত্রী সুপ্রভা দেবী। সত্যজিৎ রায় তার ছেলে।

সুকুমার ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ছেলে, বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ফেলুদার জনক সত্যজিৎ রায়ের বাবা এবং নিজেও ছিলেন বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক। কী মজার ব্যাপার, তাই না?
খুব ছোটবেলা থেকেই বাবাকে দেখে লেখালেখির ঝোঁক তৈরি হয় সুকুমারের। মাত্র ৯ বছর বয়সে তার লেখা একটি দীর্ঘ কবিতা ছাপা হয় ‘মুকুল’ পত্রিকায়। তবে লেখালেখিতে নিয়মিত হন বাবার প্রকাশিত পত্রিকা ‘সন্দেশ’-এ লেখার মাধ্যমে।  

খুব মেধাবী ছিলেন সুকুমার রায়। ১৯০৬ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় ডাবল অনার্স করেন তিনি। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গুরুপ্রসন্ন ঘোষ বৃত্তি পেয়ে ১৯১১ সালে ইংল্যান্ডে যান। ম্যানচেস্টার স্কুল অব টেকনোলজি থেকে ফটোগ্রাফি এবং মুদ্রণ প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশুনা করে ১৯১৩ সালে আবার কোলকাতায় ফিরে আসেন সুকুমার।

কোলকাতা ফিরে আসার অল্প কিছুদিন পরেই বাবার মৃত্যু হলে ‘সন্দেশ’ পত্রিকা এবং পারিবারিক ছাপাখানা পরিচালনার দায়িত্ব নেন সুকুমার। আগে অল্প লেখালেখি করলেও ‘সন্দেশ’ এর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে লেখালেখিতে দক্ষ হয়ে ওঠেন। বাংলা ভাষায় শিশুসাহিত্যে সন্দেশের অবদান অনস্বীকার্য।

মজার মানুষ ছিলেন সুকুমার। তার কার্যক্রমও মজার ছিল। প্রেসিডেন্সিয়াল কলেজে পড়াকালীন তিনি গড়ে তুলেছিলেন ‘ননসেন্স ক্লাব। ’ এই ক্লাব থেকে আবার প্রকাশ করতেন ‘সাড়ে বত্রিশ ভাজা’ নামে একটি পত্রিকা। ননসেন্স ছড়ার জন্য জনপ্রিয় সুকুমার রায়ের ননসেন্স ছড়া লেখার চর্চা শুরু হয় এই পত্রিকার মাধ্যমেই। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে ‘মন্ডা ক্লাব’ সৃষ্টি করেন। এটিও একই ধরনের ক্লাব ছিল।

সুকুমার ছিলেন একাধারে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি যেমন শিশুসাহিত্যিক ছিলেন, তেমনি জনপ্রিয় ছিলেন ননসেন্স ছড়া লেখার জন্য। ছড়া, কবিতা, গল্প, নিবন্ধ, নাটক- কোনো কিছু লিখতে বাকী রাখেননি সুকুমার। ছবিও আঁকতে পারতেন চমৎকার। নিজের বিভিন্ন লেখার সঙ্গে ছবি এঁকেছেন, প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবেও নাম ছিল তার। নতুন পদ্ধতিতে হাফটোন ব্লক তৈরি করে এবং ইংল্যান্ডের কয়েকটি পত্রিকায় প্রযুক্তি বিষয়ে লিখে নাম কুড়িয়েছেন প্রযুক্তিবিদ হিসেবেও।

এতক্ষণ যেই গুণী মানুষটির কথা শুনলে, এই অসাধারণ মানুষটা কালাজ্বরে ভুগে খুব অল্প বয়সে মারা যান। ৩৭ বছর বয়সে ১৯২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মারা যান তিনি।

তার লেখা গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে আবোল তাবোল, হ-য-ব-র-ল, হেশোরাম হুঁশিয়ারের ডায়েরি, পাগলা দাশু, অবাক জলপান ইত্যাদি। এখনো সুকুমারের প্রত্যেকটা লেখাই খুব আনন্দ নিয়ে পড়ে শিশুরা, সন্ধান পায় এক অনন্য সুন্দর মজাদার জগতের। তাই সুকুমার রায়ের লেখা সবগুলো বই এখনো খুব জনপ্রিয়। বাংলা শিশুসাহিত্যে নবজাগরণ এনেছিল তার লেখা।

হাসিখুশি মজার মানুষ ছিলেন সুকুমার। তাই তো মজার মজার সব রচনার মাধ্যমে তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছিলেন এক অপূর্ব জগৎ। সেই জগতে কোনো বকাবকি নেই, বাধা নেই, আছে শুধু হাসি, খুশি আর আনন্দ।

চাইলে তুমিও সুকুমার রায়ের লেখা পড়তে পড়তে চলে যেতে পারো সেই আনন্দের পৃথিবীতে।  

ইচ্ছেঘুড়িতে লেখা পাঠান এই মেইলে: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৩
এমএনএনকে/এএ/এমজেডআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।