নিঝুম মন খারাপ করে বসে আছে। ভাইয়াটা যে কী না! প্রতিদিন কলেজ থেকে ফিরে নিঝুম, নিঝুম! করে ডাকাডাকি করে।
-নিঝুম, মা খেতে ডাকছেন, চল খাবি। ডাকল নিঝুমের বড় আপু নিরালা।
-ভাইয়া না আসা পর্যন্ত আমি খাব না।
-অমন করে না লক্ষ্মী বোনটি। আয়, আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি। নীরব আর নিলয় একটা কাজে গেছে। ফিরতে অনেক দেরি হবে। তুই খেয়ে নে।
-বললাম না খাব না? ওরা এলেই খাব, যত দেরিই হোক। জেদ ধরে বসে রইল নিঝুম। কিছু না বলে উঠে গেল নিরালা। সরাসরি হাজির হলো মায়ের কাছে। মাকে বলল নিঝুমের জেদের কথা।
-নিরা, তুই নিঝুমকে সত্যটা বলিস না, ও সহ্য করতে পারবে না।
-আমি বলিনি, মা। কিন্তু ও যে খেতে চাচ্ছে না? ওকে একবার নীরবের কাছে নিয়ে গেলে হত না?
-নীরবকে হাসপাতালে দেখে ও কান্নাকাটি করবে। আসতে চাইবে না। আর নীরবেরও কষ্ট লাগবে।
-আমি নীরব- নিঝুমকে বুঝিয়ে বলব। তুমি নিঝুম আর আমাকে নিয়ে চল তো।
মায়ের সাথে আপুর কথোপকথন পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনেছে নিঝুম। ও বুঝতে পারে যে ছোট ভাইয়ার সিরিয়াস কিছু হয়েছে। বারান্দায় গিয়ে ধপাস করে বসে পড়ল সে। তারপর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।
-নিঝুম, কাঁদছিস কেন? চল, তৈরি হয়ে নে। তোকে নীরবের কাছে নিয়ে যাব।
-ভাইয়াকে হাসপাতালে নিয়েছে কেন? ভাইয়ার কী হয়েছে? সত্যি করে বল কী হয়েছে?
চমকে উঠল নিরালা। নিঝুম তাহলে মার আর ওর কথাগুলো শুনে ফেলেছে?
-নীরবের কিছু হয়নি। একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই নিলয় ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
-একটু অসুস্থ হলে তো কাউকে হাসপাতালে যেতে হয় না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিরালা। ও নিঝুমকে নীরবের ব্যপারটা বোঝাতে পারবে না। বোঝালেও নিঝুম বুঝবে না। নীরবের ব্রেইনের একটা অংশ কাজ করছে না। হঠাত মাথা ঘুরে পড়ে গেছিল, বন্ধুরা ধরাধরি করে ক্লাসে নিয়ে গেছে। তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী নিঝুম এর কী বুঝবে?
নিঝুমরা পাঁচ ভাইবোন। নিরালা সবার বড়। ও ডাক্তারি পড়ে। এখন প্রাকটিস করছে। তারপর নির্জন। চট্টগ্রামে থেকে মাস্টার্স পড়ছে। তৃতীয় নিলয়, ঢাকা কলেজে অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ছে। চতুর্থ নীরব, একই কলেজে এইচএসসি পড়ছে। আর সবার ছোট নিঝুম, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ওদের বাবা পাইলট। মা স্কুলের টিচার।
নিঝুমের পড়াশুনা সাধারণত মা, নিরালা আর নীরব দেখিয়ে দেয়। আর খেলাধুলা, গল্পগুজব- এসব কাজে নীরব নিঝুমের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। তাই অন্য কারো চেয়ে নীরবের প্রতি ওর টানটা অনেক বেশি।
নিঝুমকে একটা সুন্দর ফ্রক পরিয়ে চুলে দুই ঝুটি করে দিল নিরালা। তারপর নিজে তৈরি হয়ে নিল।
হাসপাতালে ঢুকেই ভয়ে গা ছমছম করে উঠল নিঝুমের। ভাইয়াকে কী অবস্থায় দেখবে ও? ভাইয়ার কাছে নিঝুমকে নিয়ে গেল মা আর আপু। ভাইয়ার পাশে বসে আছে মেজ ভাইয়া। মেজ ভাইয়া নিঝুমকে বকল না। বরং সরে গিয়ে ওকে বসতে দিল। বেশ কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল নিঝুম।
-ভাইয়া! বলে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠল। ওর গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু।
-আমি ভাইয়াকে ছেড়ে যাব না। আমি ভাইয়ার কাছেই থাকব। কাঁদতে লাগল নিঝুম। ওকে কেউ থামাতে পারল না। এমন কী বাসায়ও নেওয়া গেল না। দু-দুটো দিন ও ভাইয়ার সেবা করল। ভাইয়াকে সুস্থ করে তুলল।
আজ নীরবকে বাসায় নেওয়া হবে। নিঝুম দুটো দিন স্কুল বাদ দিয়ে ভাইয়ার কাছে থেকেছে। ওর আনন্দের সীমা নেই।
-ভাইয়া, তুমি তো সুস্থ হয়ে গেছ, না ? তাহলে আজকে তুমি ক্রিকেট খেলবে তো ?
-নিশ্চয়ই খেলব। আর তোমার মতো বোন থাকলে সুস্থ না হয়ে উপায় আছে?
অসুস্থতাকে অবহেলা করে বোনকে কোলে তুলে ট্যাক্সির দিকে পা বাড়াল নীরব।
ইচ্ছেঘুড়িতে লেখা পাঠান এই মেইলে: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৪