মায়ের ওপর রাগ করে ছাদে মন খারাপ করে বসে ছিল ছোটন। ঠিক তখনই একটি স্পেসশিপ অবতরণ করে ছাদে।
ঘটনার আকস্মিকতায় ছোটন ভড়কে যায়। কিন্তু ভয় পায় না।
ছোটন বলে, ‘কে তুমি?’
: আমার নাম চুংচিংকিং। আমি মঙ্গল গ্রহ থেকে এসেছি।
: কিন্তু তুমি আমাকে চিনলে কী করে?
: গত বছর বাৎসরিক শিক্ষা সফরে তোমরা নন্দনপার্ক গিয়েছিলো, ঠিক?
ছোটন অবাক হয়ে : হ্যাঁ, গিয়েছলাম।
: তুমি দলছুট হয়ে হঠাৎ হারিয়ে গিয়েছিলে এবং ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের সামনে দাঁড়িয়ে কান্না করছিলে। সেসময় একটি লোক এসে তোমার সাথে পরিচিত হয় এবং তোমাকে তোমার দলে ফিরে যেতে সহায়তা করে। এসব কথা মনে আছে তোমার?
ছোটন বিস্ময়ভরা চোখে এলিয়েনকে দেখতে দেখতে বলে : হ্যাঁ, সব মনে আছে।
চুংচিংকিং রহস্যজনক হেসে বলে : আমিই ছিলাম সেই লোকটি।
: তুমি!
: হ্যাঁ।
ছোটন কী বলবে ভেবে পায় না। শুধু গোল গোল চোখে চুংচিংকিংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে, অ্যালিয়েনরা কি তবে নিজেদের রূপ বদলাতে পারে?
: ঠিক ধরেছো। আমরা শুধু নিজেদের রূপ বদলাতেই নয়, মানুষ মনে মনে কী ভাবে সেটিও বলে দিতে পারি।
ছোটনের বিস্ময়ের সীমা ছাড়িয়ে যায়। তাই আর কোনো প্রশ্ন নেই চুংচিংকিংয়ের কাছে। সে বুঝতে পারে, এই অ্যালিয়েনটি হচ্ছে জ্ঞানী এবং সবজান্তা। এখন চুংচিংকিংয়ের কাছে শুধু একটি কথাই জানতে বাকি আর তা হলো, পৃথিবীতে তার আগমনের উদ্দেশ্য কী?
চুংচিংকিং সেটিও জানিয়ে দেয়।
: বন্ধুতাই তার পৃথিবী নামের এই ভিনগ্রহে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য। মঙ্গল চায় পৃথিবীর সঙ্গে এক বন্ধুত্বের ব্রিজ তৈরি করতে।
ছোটনের কাছে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে, এ কারণেই বেশ অনেক দিন ধরে ছোটন এবং তার বন্ধুরা যখন বিকেলবেলা মাঠে খেলা করে তখন হঠাৎ হঠাৎ আকাশে ভেসে বেড়াতো কিছু অদ্ভুত ছায়াকৃতি। তারমানে এই চুংচিংকিংই ছায়া হয়ে উড়ে বেড়াতো?
‘হ্যাঁ, আমি। আমিই ছায়া হয়ে উড়ে বেড়াতাম’— বলে চুংচিংকিং ছোটনের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। তাদের মধ্যে উঞ্চ হ্যান্ডশেক হয়। চুংচিংকিং বলে, ‘আজ থেকে আমরা দুজন বন্ধু। ’
২.
এরপর থেকে প্রায়ই মুখোমুখি হয় দুজনে। বিষয়টি আর কেউ জানে না। কেউ চুংচিংকিংকে দেখতেও পায় না। ছোটনের মা শাকিরা যখন ছোটনকে খাওয়ানোর জন্য পীড়াপীড়ি করে, অথচ সে একটার বেশি পরোটা খেতে চায় না, তখন পরোটা ও ভাজিগুলো সপাসপ খেয়ে দেয় চুংচিংকিং। অথবা হোমওয়ার্ক করার সময় যখন ছোটনের চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু, শাকিরা তার দিকে তাকিয়ে থাকে রাগী দৃষ্টিতে, তখন চুংচিংকিং চট করে ছোটনের হোমওয়ার্কগুলো করে দেয়। আবার, কলোনির সবচেয়ে দুষ্ট ছেলেটি— তাওহিদ, যে কি-না বিনা কারণে, যখন-তখন পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া বাঁধায়, সেও পেয়ে যায় যথাযোগ্য শাস্তি। ঝগড়া বাধাতে আসতেই চুংচিংকিংয়ের বাধার কারণে তাওহিদ ধপাশ করে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে উঠে আবার তেড়ে আসে ছোটনের দিকে। এবার চুংচিংকিং কৌশলে ছোটনকে একটু সরিয়ে দিলে তাওহিদ ক্রিকেট বলের মতো গুত্তা খেয়ে ছিটকে পড়ে এবং গড়াগড়ি খেতে থাকে কাদার মধ্যে। সে প্রচণ্ড রেগে উঠে দাঁড়াতে যাওয়ামাত্র অবশরোগীর মতো পা পিছলে পড়ে যায়। এই দেখে ছোটন হাসতে হাসতে লুটোপুটি খায়। অবশেষে পরাজিত তাওহিদ চলে যাওয়ার সময় ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলে, সে ছোটনকে দেখে নেবে! ছোটন কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে যায়। চুংচিংকিং বলে ওঠে, ‘ভয় পেয়ো না বন্ধু। ও তোমার কিছুটি করতে পারবে না। ’ ছোটন বলে, ‘থ্যাঙ্ক ইউ চুংচিংকিং!’
এভাবে অ্যালিয়েন চুংচিংকিং হয়ে ওঠে ছোটনের রক্ষাকবচ ও নিত্য-নতুন শক্তির উৎস। চুংচিংকিং জানায়, ছোটন তার নতুন শক্তিতে একে একে পরাস্ত করতে পারবে তার এবং তার কচি বন্ধুদের সকল বিরুদ্ধ শক্তিকে। বাসের বেয়াদব কন্ডাক্টর, অত্যাচারী ও রাগী ম্যাথ টিচার, কোনো চোর, বাটপার, ছেলেধরা, গুণ্ডাদল— কেউই আর পার পাবে না। ছোটন হয়ে উঠবে হিরো।
ছোটন আনন্দিত হয়ে বলে : সত্যি বলছো?
: ‘হ্যাঁ, একদম সত্যি।
: তারমানে...আমি কি সুপারম্যানের মতো হয়ে যাবো?
: সুপারম্যানের মতো নয়, আজ থেকে তুমি সুপারম্যান!’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৪