গল্পটা অ্যারেন্ডেল নামের এক রাজ্যের দুই রাজকন্যার। বড় বোনটি এলসা, ছোট বোন আনা।
আনার মন থেকেও মুছে দেওয়া হয় এলসার জাদুশক্তির স্মৃতিটুকু। এলসা আর আনাকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়, যদিও তার কারণটা আনা কিছুতেই বুঝতে পারল না।
এলসা আর আনার দিনগুলো এভাবেই কাটছিল। এলসা বড় হচ্ছিল একাকী একটা ঘরের ভেতর। কিন্তু একদিন সামুদ্রিক ঝড়ে জাহাজ ডুবে রাজা-রানির মৃত্যু হলে অ্যারেন্ডেলের হাল ধরতে হয় বড় রাজকন্যা এলসাকে। রানি হিসেবে তার অভিষেকের দিন বহু বছর পর খুলে দেওয়া হয় রাজপুরির দরজা আর জানালাগুলো, অসংখ্য মানুষ প্রবেশ করে রাজপুরিতে। এলসা আর আনাও অনেক বছর পর বাইরের জগত দেখার সুযোগ পায়। আর সেদিনই আনার সঙ্গে পরিচয় হয় হ্যান্স নামে এক রাজকুমারের।
আনা একদিনের দেখাতেই তাকে পছন্দ করে ফেলে এবং এলসাকে জানায় প্রিন্স হ্যান্সকে বিয়ে করতে যাচ্ছে সে। এ ব্যাপারে বাধা দেয় এলসা। আর তারপর দুজনের মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায়ে এলসা মনের ভুলে হাত ফসকে সামনে তুলে দেয় বরফের কাঁটার দেয়াল। তাতেই বহু বছর ধরে লুকিয়ে রাখা তার এই জাদুর শক্তিটি সবার সামনে প্রকাশিত হয়ে যায়।
সবাই ভাবতে শুরু করে, এলসা বুঝি ডাইনি। এলসা রাজ্য ছেড়ে চলে যায়, কিন্তু তার অ্যারেন্ডেলে চিরকালের মত শুরু হয় তুষারপাত। ওদিকে নিজের ভুল বুঝতে পেরে এলসাকে খুঁজে বের হয় আনা। পথে তার সঙ্গী হয় ক্রিস্টোফ এবং তার রেইন্ডিয়ার আর এলসার তৈরি বরফমানব ওল্যাফ। তাদের অভিযান নিয়ে এগিয়ে গেছে গল্পের কাহিনী।
বলছিলাম ডিজনির অ্যানিমেটেড ছবি ‘ফ্রোজেন’ এর কথা। এ ছবিটি নির্মিত হয়েছে হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসেনের ‘দ্যা স্নো কুইন’ গল্পটি থেকে উৎসাহিত হয়ে। ছবিটি মুক্তি পায় ২০১৩ সালে। পরিচালনা করেছেন ক্রিস বাক ও জেনিফার লি। প্রযোজক পিটার ডেল ভেকো। ছবির বাজেট ছিল ১৫০ মিলিয়ন ডলার এবং ছবিটি আয় করেছে ১.২৭৪ বিলিয়ন ডলার।
অনেকগুলো পুরস্কারও জিতেছে ফ্রোজেন ছবিটি। বেস্ট অ্যানিমেটেড ফিচার ফিল্ম এবং বেস্ট অরিজিনাল সং- এই দুই ক্যাটাগরিতে অস্কারও জিতেছে ফ্রোজেন।
ছবিটিতে শুধু আনা এবং তার বন্ধুদের অভিযান নয়, উঠে এসেছে দুই বোনের মধুর সম্পর্ক আর বন্ধুত্বের কথাও। আনা ও এলসার আবেগ-ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, তাদের সম্পর্ক নিয়েই গড়ে উঠেছে ছবির কাহিনী।
সঙ্গে রয়েছে আনা, ক্রিস্টোফ, ওল্যাফদের দুর্ধর্ষ অভিযান। বরফমানব ওল্যাফের সঙ্গে এলসা, আনা, ক্রিস্টোফের মিষ্টি বন্ধুত্বের চিত্রও তুলে আনা হয়েছে ফ্রোজেনে। ছবিটি কিন্তু খানিকটা শিক্ষামূলকও বটে। যে কাউকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতেও এ ছবিটি অনন্য ভূমিকা পালন করবে। অন্যান্য রূপকথানির্ভর ছবির সঙ্গে এর আরো পার্থক্য রয়েছে। এখানে কিন্তু শেষে গিয়ে “অতঃপর রাজকুমার এবং রাজকুমারীর ধুমধাম করে বিয়ে হলো। তারা সুখে-শান্তিতে দিন কাটাতে লাগল”- এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে নি।
কী ঘটেছিল তাহলে? জানতে হলে তো তোমাকে দেখতেই হবে ১০২ মিনিটের ‘ফ্রোজেন’ ছবিটি। ছবিটি সব বয়সের দর্শকদের জন্যই দারুণ উপভোগ্য। ওহ! আরেকটা কথা। ফ্রোজেন দেখার পর যদি অন্যান্য দর্শকদের মতো তুমিও সারাদিন গুনগুনিয়ে ‘লেট ইট গো, লেট ইট গো, ক্যান্ট হোল্ড ইট ব্যাক এনিমোর’ গাইতে শুরু করো, তাহলে কিন্তু আমার কোনো দোষ নেই!
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৪