মার্চ মাস আমাদের বাংলাদেশিদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা মাস। এর কারণটাও নিশ্চয়ই তোমরা জানো।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ একটি গুরুত্বপূর্ণ তারিখ। সেদিন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) একটি জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লাখো জনতার উদ্দেশ্যে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই ভাষণটি ৭ই মার্চের ভাষণ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই ভাষণটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ভাষণের দৈর্ঘ্য ছিল ১৯ মিনিট।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করার পরেও আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে দেয়নি পাকিস্তানি শাসকেরা। ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডেকেও তা বাতিল করা হয়েছিল। তারা পরিকল্পনা করছিল বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা না দেওয়ার। সেটা বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক এ ভাষণের মাধ্যমে বাঙালিদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান।
তিনি দেশের তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সাধারণ জনতাকে জানান।
জাতির জনকের এই ভাষণে সরাসরি স্বাধীনতা সংগ্রামের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ জনতার উদ্দেশ্যে যার কাছে যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন মহল্লায় মহল্লায় প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তুলতে।
এ ভাষণের মাধ্যমে তিনি বাঙালিদের নির্দেশ দেন পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। কর বা খাজনা হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে কোনো টাকা পাঠাতে নিষেধ করা হয়। কোর্ট-কাচারি, আদালত-ফৌজদারি, স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
ঐতিহাসিক এ ভাষণের সবচেয়ে বিখ্যাত অংশটি হল, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ’
বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ মানুষকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। সবাই নিজেদের তৈরি করতে শুরু করেছিল দেশকে স্বাধীন করার যুদ্ধের জন্য।
এরপর ২৫ মার্চে পাকিস্তানিদের বর্বর গণহত্যার পর শুরু হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বীর বাঙালি স্বাধীন করে প্রিয় মাতৃভূমিকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৫