ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ৪)

অনুবাদ রচনা ~ ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ৪)

এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)

ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। এনিড ব্লাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর বই রচনা করেছেন।

তার চল্লিশ বছরের জীবন কালে তিনি প্রায় আটশ’রও বেশি বই লিখেছেন। লেখার বিষয় হিসেবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি শিশুতোষ রোমাঞ্চ, রহস্য বা জাদু আশ্রয়ী কল্পনাকে বেছে নিয়ে ছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স, এবং সেন্ট ক্লারে।

তার লেখা বইসমূহ সাংঘাতিক রকমের সফলতা অর্জন করে। এপর্যন্ত তার বই নব্বইটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বই আজও পাঠক সমাদৃত, এপর্যন্ত তার বইয়ের ছশ’ মিলিয়েনরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

ইনডেক্স ট্রান্সলেশনামের মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক, তাদের এই তালিকায় লেনিনের পর এবং শেক্সপিয়েরের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়। ১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ

এই বইয়ের গল্প খামারে জন্মানো শীপ-ডগ প্রজাতির এক কুকুর, শ্যাডোকে নিয়ে। খামারের শীপ-ডগ জেসির তিনটি বাচ্চা হয়। যার দুটি বিক্রি করে দেয়া হয়, পরে তৃতীয়টিকেও বিক্রি করা হয়, কিন্তু সেটি বারবার ফিরে আসায়, শেষ পর্যন্ত কৃষকের ছেলে জনিকে তা রাখবার অনুমতি দেয়া হয়, এই শর্তে যে খামারের অন্যান্য কুকুরদের মতোই তাকেও জীবিকার জন্য খামারে কাজ করতে হবে।

জনি তার এই কুকুরের নাম দেয় শ্যাডো। সব সময় সে ওর সঙ্গে থাকে। বাচ্চাটিকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেয়। খামারের কুকুর জেসি বাড়ি, এর আশপাশ এবং উঠান পাহারা দেয়। টিঙ্কার, রাফে, ড্যান্ডি ভেড়া রাখার কাজ করে। ওরা সবাই শীপ-ডগ প্রজাতির কুকুর। রাখাল এন্ডি’র কুকুর বব শঙ্কর প্রজাতির হলেও তাকেও ভেড়া রাখার কাজ করতে হয়। খামারের সব কুকুরের কাছ থেকেও শ্যাডো বিভিন্নভাবে আরো অনেক কিছু শেখে। তারপর একদিন এমন সময় আসে, যখন শ্যাডোর এইসব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং সাহসিকতা জনির জীবন রক্ষায় বারবার কাজে আসে।

বাংলানিউজের ইচ্ছেঘুড়ি বিভাগ ধারাবাহিকভাবে এ কিশোর উপন্যাসটি প্রকাশ করছে। রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার—সপ্তাহের এ তিনদিন উপন্যাসটির একটি করে নতুন পর্ব প্রকাশিত হবে।



পর্ব ৩ পড়তে ক্লিক করো

‘এবার অবশ্যই ওকে তোমার “পাহারা দেয়া” শেখাতে হবে, জনি। ’ ওর বাবা বলে, ‘শিপ-ডগদের জন্য এটা খুবই জরুরি। ’

তাই শ্যাডোকে এবার ‘পাহারা’ দেয়া শিখতে হবে। সেটা শেখা খুব সহজ কাজ নয়। জনি ওকে একটা মাঠে নিয়ে যায় এবং তার টুপি আর কোটটা ঘাসের ওপর রাখে, শ্যাডোকে তার ওপর বসিয়ে রাখে।

‘পাহারা দাও!’ সে বলে, ‘পাহারা দাও, শ্যাডো!’ আমি ফিরে আসা বা শিস দেবার আগপর্যন্ত তুমি এগুলো ছেড়ে কোথাও যাবে না। তুমি ওগুলো পাহারা দিবে। ’



‘আমি কি তোমাকে ওগুলো পাহারা দিতে বলিনি!’ সে চিৎকার করে ওঠে, ‘বাজে কুকুর! ফিরে যাও। পাহারা দাও গিয়ে, আমি তোমাকে বলেছি, পাহারায় থাকতে। ’
সে শ্যাডোকে টুপি আর কোটের কাছে ফেরত নিয়ে আসে এবং আবারও তাকে ওগুলোর ওপর বসায়। শ্যাডোর লেজটা নেমে আসে। একটা টুপি আর কোটের সঙ্গে সে বসে থাকতে চায় না। সে জনির সঙ্গে যেতে চায়



‘হুফ’, খুশি মনে শ্যাডো বলে। জনির কোনো কিছুর ওপর বসতে পারাটা তার খুবই পছন্দ। জনি চলে যেতে থাকে। তখনই, টুপি আর কোটটা ফেলে রেখে, শ্যাডোও তাকে অনুসরণ করে, জনি পেছন ফিরে তাকায় এবং চোখ রাঙ্গায়।

‘আমি কি তোমাকে ওগুলো পাহারা দিতে বলিনি!’ সে চিৎকার করে ওঠে, ‘বাজে কুকুর! ফিরে যাও। পাহারা দাও গিয়ে, আমি তোমাকে বলেছি, পাহারায় থাকতে। ’

সে শ্যাডোকে টুপি আর কোটের কাছে ফেরত নিয়ে আসে এবং আবারও তাকে ওগুলোর ওপর বসায়। শ্যাডোর লেজটা নেমে আসে। একটা টুপি আর কোটের সঙ্গে সে বসে থাকতে চায় না। সে জনির সঙ্গে যেতে চায়।

জনি আবারও চলে যেতে থাকে। সে কোণার দিকে ফিরবার আগপর্যন্ত শ্যাডো অপেক্ষা করে এবং তারপর ওর পিছু নেয়। কিন্তু না, কাজটা করা আদৌ ঠিক হবে না! রাগী স্বরে জনি ওকে বলে, এবং শ্যাডো অসহায় বোধ করে। সে ভাবে, সম্ভবত ওই টুপি আর কোটটা খুবই জরুরি কিছু হবে।

‘আমাকে কি আবারও, তোমাকে সেই আগের জায়গায় রেখে আসতে হবে!’ জনি চেঁচিয়ে ওঠে। ‘দুষ্ট কুকুর। আমি তোমাকে পাহারায় রেখে এসেছি, যাও গিয়ে পাহারা দাও, পাহারা দাও!’

শ্যাডো বুঝতে পারে। তাকে ফিরে যেতে হবে। এবং পরবর্তী আদেশের আগপর্যন্ত সেই বোবা কালা টুপি আর কোটের সঙ্গে থাকতে হবে। ভালো—কারণটা সে বুঝতে পারছে না ঠিকই—তবে এটুকু বুঝে গেছে তাকে কথাটা মেনে চলতে হবে। তাই সে আপনা আপনি ফিরে যায় এবং কোটের ওপর শুয়ে থাকে; থুতনিটা সামনের পা দুটার ওপর রাখে। যাই হোক, কোট থেকে ভেসে আসা জনির গায়ের গন্ধ শুঁকতে ওর ভালোই লাগে।

জনি পাশের মাঠে গিয়ে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে। সে ঝোঁপের আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে দেখে এবার শ্যাডো ঠিকই পাহারা দিচ্ছে। ‘কী ভালো একটা পুঁচকে ছাত্র!’ গর্বের সঙ্গে ছেলেটা ভাবে। ‘এবার ফিরে গিয়ে পুরস্কার হিসেবে ওকে আমি একটা বিস্কিট দেব। ’
সে ফিরে আসে। শ্যাডো তাকে আসতে দেখে আনন্দে উঠে দাঁড়ায়। খুশিতে লেজ নাড়তে থাকে। তবু কোটটা ছেড়ে এগিয়ে আসে না। না—ও জেনে গেছে যে তাকে ওটার সঙ্গে থাকতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না জনি ওর কাছে আসে।

এবং জনি এসে মজাদার একটা বিস্কুট খাইয়ে আলতো করে চাপড় দিয়ে বলে তুমিই বিশ্বের সবচেয়ে চমৎকার কুকুর, তখনই সে কাজের মর্ম উপলব্ধি করে। শ্যাডো খুশিতে ওর মোটা পাগুলো উপরে তুলে মাটিতে গড়াগড়ি খায় এবং আনন্দে চিৎকার করে ওঠে।

জনি তার কোট আর টুপিটা পরে। ‘তাহলে আরেকটা জিনিস শিখলে!’ সে বলে, ‘তুমি খুব ভালো কুকুর!’

ছুঁড়ে দেয়া হাড় মুখে তুলে জনির কাছে নিয়ে আসাও শেখে শ্যাডো, কোনো রকম গর্জন বা ফোঁস ফোঁসানি ছাড়াই। জনি যেখানেই যাক না কেন তাকে ঠিক ঠিক খুঁজে বের করাও সে শিখে নিয়েছে, এমন কি দু’এক মাইল দূরের পথ হলেও। খুব বুদ্ধিমানের কাজ এটা। জনি তাকে একটা কুকুরের ঘরে বন্ধ করে রাখে এবং তারপর সে দূরে কোথাও চলে যায়। তারপর, আধঘণ্টা বাদে খামারের একজন কর্মী তাকে বের করে আনে এবং বলে, ‘এবার জনিকে খুঁজে বের করো! যাও জনিকে খুঁজে নিয়ে এসো, শ্যাডো! জনি কোথায়!’

এবং শ্যাডো তার নাকটা মাটির ওপর তাক করে এবং জনির তাজা পায়ের চিহ্ন খুঁজে পাবার আগপর্যন্ত পাগলের মতো ছুটতে থাকে। তারপর নির্ভুলভাবে তার ঘ্রাণ অনুসরণ করে ধনুকের ছিলা থেকে ছুঁড়ে দেয়া তীরের মতো ছুটে যায়। পথে মাঠ-ঘাট, ঝোঁপ-ঝাড়, খানা-খন্দ, খাল-বিল, নদী-নালা যাই পড়ুক না কেন, সে দৌড়াতেই থাকে—এবং শেষে কোনো গাছের গুঁড়ি বা চুল্লির আড়ালে জনিকে খুঁজে পায়!

‘খুব ভালো কুকুর! এবার মাত্র দশ মিনিট লেগেছে!’ জনি চেঁচিয়ে ওঠে। তুমি খুব দ্রুত শিখছো! খুব শীঘ্র তোমাকে অন্যান্য শিপ-ডগদের সঙ্গে ভেড়া চড়ানো শিখতে যেতে হবে। আমার ধারণা বাবা তোমার মতো শিপ-ডগ তার খামারে আগে কখনোই দেখেনি। তুমি খুব পরিশ্রমী, তাই না শ্যাডো?’

‘হুউফ’ বারবার করে তার মনিবের হাত চেটে দিয়ে শ্যাডো বলে। বড় বড় কুকুরদের সঙ্গে কাজে নামবে, কথাটা শুনে সে উত্তেজনা বোধ করে। আহ্—ভেড়াদের সামনে এবার সে নিজের বুদ্ধির খেলা দেখাবে!

পর্ব ৫ পড়তে ক্লিক করো

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।