ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ৫)

অনুবাদ রচনা ~ ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৫
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ৫)

এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)

ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। এনিড ব্লাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর বই রচনা করেছেন।

তার চল্লিশ বছরের জীবন কালে তিনি প্রায় আটশ’রও বেশি বই লিখেছেন। লেখার বিষয় হিসেবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি শিশুতোষ রোমাঞ্চ, রহস্য বা জাদু আশ্রয়ী কল্পনাকে বেছে নিয়ে ছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স, এবং সেন্ট ক্লারে।

তার লেখা বইসমূহ সাংঘাতিক রকমের সফলতা অর্জন করে। এপর্যন্ত তার বই নব্বইটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বই আজও পাঠক সমাদৃত, এপর্যন্ত তার বইয়ের ছশ’ মিলিয়েনরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

ইনডেক্স ট্রান্সলেশনামের মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক, তাদের এই তালিকায় লেনিনের পর এবং শেক্সপিয়েরের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়। ১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ

এই বইয়ের গল্প খামারে জন্মানো শীপ-ডগ প্রজাতির এক কুকুর, শ্যাডোকে নিয়ে। খামারের শীপ-ডগ জেসির তিনটি বাচ্চা হয়। যার দুটি বিক্রি করে দেয়া হয়, পরে তৃতীয়টিকেও বিক্রি করা হয়, কিন্তু সেটি বারবার ফিরে আসায়, শেষ পর্যন্ত কৃষকের ছেলে জনিকে তা রাখবার অনুমতি দেয়া হয়, এই শর্তে যে খামারের অন্যান্য কুকুরদের মতোই তাকেও জীবিকার জন্য খামারে কাজ করতে হবে।

জনি তার এই কুকুরের নাম দেয় শ্যাডো। সব সময় সে ওর সঙ্গে থাকে। বাচ্চাটিকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেয়। খামারের কুকুর জেসি বাড়ি, এর আশপাশ এবং উঠান পাহারা দেয়। টিঙ্কার, রাফে, ড্যান্ডি ভেড়া রাখার কাজ করে। ওরা সবাই শীপ-ডগ প্রজাতির কুকুর। রাখাল এন্ডি’র কুকুর বব শঙ্কর প্রজাতির হলেও তাকেও ভেড়া রাখার কাজ করতে হয়। খামারের সব কুকুরের কাছ থেকেও শ্যাডো বিভিন্নভাবে আরো অনেক কিছু শেখে। তারপর একদিন এমন সময় আসে, যখন শ্যাডোর এইসব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং সাহসিকতা জনির জীবন রক্ষায় বারবার কাজে আসে।

বাংলানিউজের ইচ্ছেঘুড়ি বিভাগ ধারাবাহিকভাবে এ কিশোর উপন্যাসটি প্রকাশ করছে। রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার—সপ্তাহের এ তিনদিন উপন্যাসটির একটি করে নতুন পর্ব প্রকাশিত হবে।



পর্ব ৪ পড়তে ক্লিক করো


তিন. শ্যাডো এবং আরসব কুকুর

সেই খামারে আরো অনেক কুকুর আছে। এদের মাঝে জেসি—শ্যাডোর মা বাড়ি আর উঠান পাহারা দেয়। এছাড়াও আছে টিঙ্কার, রাফে, ড্যানডি এবং বব, এদের মধ্যে বব ছাড়া সবাই শিপ-ডগ, বব একটা মঙগ্রেল বা সংকর। ও দেখতে অনেকটা অদ্ভুত ধরনের, মাথাটা বড়, দীর্ঘদেহী, লোমশ লেজ, এবং দ্রুত দৌড়াবার উপযোগী পাগুলো খুবই শক্তিশালী, শরীরের রঙ কালচে বাদামী এবং লোমগুলো কোঁকড়ানো।

শ্যাডো ববকে খুব ভয় পায়। বব খেলতে পছন্দ করে না আর শ্যডো কাছে গেলেই ও গর্জে ওঠে। রাখাল এন্ডি ওর মালিক। এবং পাহাড়ের দিকে তার ছোট্ট কুটিরেই সে থাকে। অন্যান্য কুকুরেরা খামারেই থাকে, তবে প্রায়ই ওরা এন্ডির সঙ্গে ভেড়া চড়াতে যায়।



‘আমিও আসি’, সে বলে, এবং ছানাটি এগিয়ে যায়, গর্জে ওঠা কুকুদের গায় তার স্বল্প শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিতে থাকে। ওদের মায়া লাগে, ওরা তাকে নিজেদের বিরক্ত করতে এবং কড়মড় করে দাঁত দিয়ে কান কামড়াতে দেয়।
‘একসময় তুমি খুব শক্তিশালী একটা কুকুর হবে!’, শ্যাডোকে ঝাঁকি দিয়ে, ড্যান্ডি বলে, এবং তাকে একপাশে ঠেলে দেয়



টিঙ্কার খুবই বন্ধুসুলভ একটা কুকুর। ওর লেজটা সব সময়ই দুলতে থাকে। এবং যে কারো হাতে নাক দিয়ে গুঁতো দেবার জন্য সব সময়ই সে তৈরি। শ্যাডো ওকে খুব পছন্দ করে এবং সুযোগ পেলেই ওর পিছু নেয়।

‘তুমি বড় হচ্ছো!’ টিঙ্কার শ্যাডোকে বলে। ‘এটা তোমার শেখার বয়স, শ্যাডো!’

‘আমি অনেক কিছু শিখে ফেলেছি!’ শ্যাডো বলে। ‘আমি একটা বুদ্ধিমান কুকুর। জনিরও এই একই কথা। ’

টিঙ্কার খেলার ছলে শ্যাডোর দিকে লাফ দেয় এবং ওর ওপরে গিয়ে পড়ে। শ্যাডো টিঙ্কারের নিচ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তবে টিঙ্কার ওর ঘাড়টা শক্ত করে চেপে ধরে তাই শ্যাডো তাকে ছাড়াতে পারে না।

‘যতটা ভাবছো ততটা বুদ্ধিমান তুমি নও!’ টিঙ্কার বলে। ‘কোনো কুকুর এভাবে তোমার ওপর লফিয়ে পড়লে তোমার তখন এভাবে পিছু ফেরা উচিত নয়, ছোট্ট ছানা। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে!’

রাফে এবং ড্যানডিও এগিয়ে আসে, ওরা এমনভাবে লেজ নাড়ায়, যেন ওরা সবাই খুব ভালো বন্ধু। রাফে চমৎকার একটি শিপ-ডগ, এবং পাহাড়ে ভেড়া চড়াবার সময় বুদ্ধি খাটিয়ে এপর্যন্ত সে অসংখ্য পুরস্কার জিতে নিয়েছে। ড্যান্ডিও যথেষ্ট বুদ্ধিমান, তবে সুযোগ পেলেই সে এদিক সেদিক চলে যায়, যা খামারিকে অসন্তুষ্ট করে।

তিনটি কুকুর প্রচণ্ড মারামারি শুরু করে, গর্জন করে একে অন্যকে কড়মড় করে কামড়ে দেবার ভান করতে থাকে। একে অপরের গলা আঁকড়ে ধরবার চেষ্টা করে। শ্যাডো ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে।

‘আমিও আসি’, সে বলে, এবং ছানাটি এগিয়ে যায়, গর্জে ওঠা কুকুদের গায় তার স্বল্প শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিতে থাকে। ওদের মায়া লাগে, ওরা তাকে নিজেদের বিরক্ত করতে এবং কড়মড় করে দাঁত দিয়ে কান কামড়াতে দেয়।

‘একসময় তুমি খুব শক্তিশালী একটা কুকুর হবে!’, শ্যাডোকে ঝাঁকি দিয়ে, ড্যান্ডি বলে, এবং তাকে একপাশে ঠেলে দেয়। ‘এখন থেকে প্রতিদিন আমি তোমাকে কিছু না কিছু শেখাব। কালকে আমাদের সঙ্গে এসে দেখে যেও আমরা কিভাবে ভেড়া চড়াই। ’

‘তবে বব সম্পর্কে সতর্ক থেকো,’ টিঙ্কার বলে। ‘সে তোমার কোনো খেয়ালিপনা মেনে নেবে না, বাচ্চা ছেলে। সে যদি তোমাকে কিছু করতে বলে, তাহলে সেটা ঠিকমতো করতে হবে!’

শ্যাডো আনন্দে দৌড়ে জনির কাছে যায়, তার লেজটা খুব করে দুলছে ‘ওয়াফ!’ সে ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। ‘আমাকে যেতে হবে এবং কালকে আমি বড় কুকুরদের সাথে যোগ দিচ্ছি। এব্যপারে তোমার কী মত, জনি?’

‘আমার ধারণা, তুমি বিশ্বের সবচাইতে চমৎকার ছানা! নাদুস নুদুস ছানাটার মাথায় চাপড় মেরে, জনি বলে।

পরদিন শ্যাডো টিঙ্কার, রাফে, এবং ড্যান্ডির সঙ্গে দৌড়ে রাখালদের কুঁড়েতে যায়। বড় কুকুরদের সঙ্গে হাড় আর বিস্কুট খেতে পেরে তার খুবই গর্ব হয়! ওদের সঙ্গে দৌড়ানো কঠিন মনে হলেও সে তার সাধ্য মতো চেষ্টা করে।

‘এবার আমার কথা শোনো’ টিঙ্কার বলে। ‘ভেড়ারা আজকে এই দুটা পাহাড়ে আছে, তবে রাখালেরা ওদের নিয়ে পাশের পাহাড়ে যেতে চায়। আমরা এখন ওদের ওখানে নিয়ে যাব।

‘তারপর কী করতে হবে?’ শ্যাডো জিজ্ঞেস করে। ‘শুধু সামনে থেকে ওদের পথ দেখাতে হবে?’

‘ওর কথা শুনো!’ বব বলে, সে কাছেই ছিল, ওর মেজাজ খারাপ বলেই মনে হচ্ছে, কারণ সবসময় ও ভাবে সে একাই সব কিছু সামাল দিতে পারবে, এবং অন্যরা তার সঙ্গে আসুক সেটা তার পছন্দ নয়। ‘নির্বোধ পুঁচকে ছানা! তুমি ভেড়াগুলোর নেতৃত্ব দিতে চাইছো, বাচ্চা কোথাকার! দৌড়ে গিয়ে ওদেরকে তোমার পিছু নিতে বলো!

‘ঠিক আছে, বব’, শ্যাডো বলে। সে নিশ্চিত সবকিছু একাই সামাল দিতে পারবে। সব সময়ই ও বলে ভেড়ারা খুব বোকা, তবে পাহাড়ে নতুন কোথাও নিয়ে যেতে চাইলে ওরা কুকুরের পিছু নেবার মতো যথেষ্ট জ্ঞান রাখে।

তাই শ্যাডো লেজ নাড়তে নাড়তে এগিয়ে যায়। বব পাহারায় বসে, তার গোলাপী জিহ্বাটা ঝুলতে থাকে। বাকি তিনটা ঘ্রাণ শুঁকতে শুঁকতে দৌড়ে আসে, ওরা সবাই শ্যাডোকে দেখতে পায়। কী ঘটতে যাচ্ছে সেটা ওরা পুরোপুরি নিশ্চিত।

শ্যাডো কাছাকাছি একটা ভেড়ার পালের কাছে যায় এবং ঘেউ ঘেউ করে তাদের ডাকে। ‘ওয়াফ, ওয়াফ! আমার পিছু নাও! আমি তোমাদের নতুন একটা পাহাড়ে নিয়ে যাব, যেখানকার ঘাসগুলো কচি আর মিষ্টি। ’

শ্যাডো যখনই ভেড়ার পালটির কাছে যায়, ওরা সবাই দৌড়ে পালায়। কী জ্বালাতন!

শ্যাডো দৌড়ে ওদের পিছু নেয়। ‘ওয়াফ! আমাকে ভয় পেও না বোকা কোথাকার! দাঁড়াও, কথা শোনো। ’

ভেড়ারা আবারও ছুটতে শুরু করে, এবং শীঘ্র পুরো পালটা ভয়ে দৌড়াতে থাকে। তখনই রাখাল তার কুঁড়ে থেকে বেরিয়ে আসে এবং রাগী স্বরে চিৎকার করে শ্যাডোকে ডাকে।

‘এখন এরপর, তুমি! তুমি কী করবে ভেবেছো? ভেড়াদের একা থাকতে দাও। এভাবে ভেড়াদের তাড়া করে—আর তুমিও একটা শিপ-ডগ। খেলাটা বন্ধ না করলে তুমি কোনো কাজেই আসবে না! বব—ভেড়াগুলোকে ওই কোণার দিকে নিয়ে যাও, আর আমি তৈরি হবার আগ পর্যন্ত ওদের থামিয়ে রাখো। ’

বব তীর বেগে ছুটে যায়। সে প্রথমে শ্যাডোর কাছে যায় এবং তাকে কামড়ে ধরে, ছোট্ট ছানাটা বিস্ময়ে আঁতকে ওঠে, তার লেজটা গুটিশুটি মেরে দু’পায়ের ফাঁকে সেঁধিয়ে যায়। সে টিঙ্কারের দিকে দৌড়ায়। ‘রাখাল কেন রেগে গেল? বব কেন আমাকে কামড়ে দিল? আমি কি ঠিক করিনি?’

‘ববকে দেখো,’ রাফে বলল। কথাটা শুনে চারটি কুকুর ববের দিকে তাকায়। বব মেষের পালের দিকে ছুটে, যেটাই পালাতে চেষ্টা করছে সেটাকে ধাওয়া দিচ্ছে। শিগগিরই সে বড় একটা দল জড়ো করে ফেলে, তারপর এদিক সেদিক দৌড়ে তাদের বড় পাহাড়টার কোণার দিকে নিয়ে যায়। এরপর ওদের সামনে শুয়ে, দেখতে থাকে, এক চোখে তার মালিকের দিকে তাকায়, পরবর্তী আদেশ শুনতে একটা কান সজাগ রাখে।

‘খুব ভালো কুকুর, বব’ চিৎকার করে বলে মেষপালক। বব অন্য কানটা খাড়া করে এবং আলতো করে লেজ নাড়ে।

পর্ব ৬ পড়তে ক্লিক করো

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।