ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ২৫)

অনুবাদ রচনা ~ ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ২৫)

এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)

ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। এনিড ব্লাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর বই রচনা করেছেন।

তার চল্লিশ বছরের জীবন কালে তিনি প্রায় আটশ’রও বেশি বই লিখেছেন। লেখার বিষয় হিসেবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি শিশুতোষ রোমাঞ্চ, রহস্য বা জাদু আশ্রয়ী কল্পনাকে বেছে নিয়ে ছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স, এবং সেন্ট ক্লারে।

তার লেখা বইসমূহ সাংঘাতিক রকমের সফলতা অর্জন করে। এপর্যন্ত তার বই নব্বইটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বই আজও পাঠক সমাদৃত, এপর্যন্ত তার বইয়ের ছশ’ মিলিয়েনরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

ইনডেক্স ট্রান্সলেশনামের মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক, তাদের এই তালিকায় লেনিনের পর এবং শেক্সপিয়েরের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়। ১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ

এই বইয়ের গল্প খামারে জন্মানো শিপ-ডগ প্রজাতির এক কুকুর, শ্যাডোকে নিয়ে। খামারের শিপ-ডগ জেসির তিনটি বাচ্চা হয়। যার দুটি বিক্রি করে দেয়া হয়, পরে তৃতীয়টিকেও বিক্রি করা হয়, কিন্তু সেটি বারবার ফিরে আসায়, শেষ পর্যন্ত কৃষকের ছেলে জনিকে তা রাখবার অনুমতি দেয়া হয়, এই শর্তে যে খামারের অন্যান্য কুকুরদের মতোই তাকেও জীবিকার জন্য খামারে কাজ করতে হবে।

জনি তার এই কুকুরের নাম দেয় শ্যাডো। সব সময় সে ওর সঙ্গে থাকে। বাচ্চাটিকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেয়। খামারের কুকুর জেসি বাড়ি, এর আশপাশ এবং উঠান পাহারা দেয়। টিঙ্কার, রাফে, ড্যান্ডি ভেড়া রাখার কাজ করে। ওরা সবাই শিপ-ডগ প্রজাতির কুকুর। রাখাল এন্ডি’র কুকুর বব শঙ্কর প্রজাতির হলেও তাকেও ভেড়া রাখার কাজ করতে হয়। খামারের সব কুকুরের কাছ থেকেও শ্যাডো বিভিন্নভাবে আরো অনেক কিছু শেখে। তারপর একদিন এমন সময় আসে, যখন শ্যাডোর এইসব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং সাহসিকতা জনির জীবন রক্ষায় বারবার কাজে আসে।



পর্ব ২৪ পড়তে ক্লিক করো

পনের. জনির অভিযান

নি জিপসি ক্যাম্পের চারপাশটা আরেকবার খুব ভালো করে চোখ বুলিয়ে দেখে নেয় এবং খামারে ফিরে আসে। ততক্ষণে তার বাবা আবারও কাজে ফিরে গেছে। তার মা শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে।

‘আমি তাকে বিরক্ত করব না। ’ জনি ভাবে। ‘এবং আমি নিশ্চিত যদি মাকে বলি আমি জিপসিদের পিছু নিতে যাচ্ছি, মা তাহলে বলবে, বিকেলে কাজ সেরে বাবার ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে, এবং তাকেও সঙ্গে নিতে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যাবে। আমার এখনই রওনা হওয়া উচিত। ’

বরাবরের মতো, উইল তার বাইসাইকেলটা ধার দেবে কিনা তা জিজ্ঞেস করতেও ইচ্ছে করে না। ভয়, পাছে উইল এর কারণ জানতে চায়। তাই সে হেঁটেই রওনা হবার সিদ্ধান্ত নেয়। কুকুরদের একটাকে সঙ্গে নেয়া ঠিক হবে কিনা ভাবে।



জনি তাকিয়ে থাকা জিপসিদের দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ায়। ‘আমার কুকুর শ্যাডো কোথায়?’ চিৎকার করে ওঠে। ‘তোমরা ওকে পাথর মেরে আঘাত করেছো। কাজটা তোমাদের, আমি তা জানি। তারপর ওকে ধরেছো এবং ওকে নিয়ে পালিয়েছো। ও কোথায়? ও এই কারাভাঁটার ভেতরে আছে, আমি নিশ্চিত!’
‘তুমি পুরোপুরি ভুল বকছো,’ ওদের একজন বলে, তার কানের সোনার দুল জোড়া চকচক করছে। ‘যেগুলো দেখছো তা ছাড়া আমাদের সঙ্গে আর কোনো কুকুর নেই



‘বরং নেয়াটাই ভালো হবে,’ সে বলে। ‘সে আমার খেয়াল রাখতে পারবে। আমি টিঙ্কারকে সঙ্গে নেব। ও হাঁটতে পছন্দ করে। ’ তাই সে শিস দিয়ে টিঙ্কারকে ডাকে, কুকুরটা এতক্ষণ টিলার ওপর পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিল। প্রতিটা কুকুরের জন্য জনির আলাদা আলাদা শিস রয়েছে। শিস শুনতে পেয়ে টিঙ্কার কান খাড়া করে। সে বুঝতে পারে এটা তার জন্য।

‘জনি আমাকে শিস্ দিয়ে ডাকছে, সে বলে। ‘আমাকে যেতে হবে। অবাক লাগছে সে কী চায়। ’

সে দ্রুত দৌড়ে টিলা থেকে নেমে আসে, জনি ওর জন্য শিস দিয়েছে ভেবে গর্ব হয়। জনি তো বেশির ভাগ সময় কেবল শ্যাডোকেই চায়!

জনি তার জন্য অপেক্ষা করছিল, ওর মুখটা গম্ভীর আর ভাবলেশহীন বলে মনে হয়। ‘টিঙ্কার জিপসিরা শ্যাডোকে নিয়ে গেছে!’ সে বলে। ‘ওরা ওকে এই পাথরটা দিয়ে মেরেছে—দেখো! ওরা ওকে প্রচণ্ড আঘাত দিয়েছে। ওকে উদ্ধার করবার জন্য আমি তোমার সাহায্য চাই। ’

টিঙ্কার পাথরটা শুঁকে। সঙ্গে সঙ্গে তাতে শ্যাডোর ঘ্রাণ পায়। সে জনির দিকে তাকায়, তার লেজ নেমে আসে। সে বুঝতে পারে ছেলেটি চিন্তিত এবং হতাশাগ্রস্ত।

‘এসো!’ জনি ডাকে। ‘কেউ দেখে ফেলবার আগেই আমাদের রওনা হতে হবে। ’

সেই দুজন খামারের দরজা গলে চুপি চুপি বেরিয়ে যায়। মুরগি আর শুকর ছাড়া কেউই ওদের দেখতে পায় না, এবং ওরাও খুব একটা টের পায় না।

জনি গলির ওপর নেমে আসে এবং মাঠের যেখানে কারাভাঁগুলো এসেছিল সেদিকে রওনা হয়। সে খুব ভালো মতোই চাকার দাগগুলো দেখতে পায়।

‘মূল সড়কে ওঠার আগপর্যন্ত আমারা এগুলো অনুসরণ করতে পারব,’ টিঙ্কারকে সে বলে। ‘এরপর কারাভাঁগুলো কোন দিকে গেছে তা জিজ্ঞেস করতে হবে, কারণ সেখানে ওদের চাকার কোনো দাগ খুঁজে পাওয়া যাবে না। ’

জনি এবং টিঙ্কার ভ্যানগুলোর চাকার দাগের পিছু নিয়ে গলি ধরে এগিয়ে যায়। মূল সড়কে উঠে আসার পর, জনি যেমনটা বলেছিল—কারাভাঁগুলো কোন দিকে গেছে তা বুঝে ওঠার জন্য তেমন কিছুই আর পাওয়া যায় না।

জনি দেখতে পায় একটা লোক সড়কের পাশে একটা ডোবার মাঝে কাজ করছে। সে তাকে ডাকে।

‘বলছি!’ জিপসিদের কাফেলা কোন দিকে গেছে? আপনি কি ওদের দেখেছেন?’
‘হ্যাঁ। ওরা পাশের খামারের দিকে গেছে,’ ডোবার লোকটা বলে। ‘ওরা পাঁচ কি ছয়জন। ’
‘ওদের সঙ্গে কি কোনো শিপ-ডগ ছিল, দেখেছেন?’ জনি ব্যগ্র কণ্ঠে জানতে চায়।
‘না তো, দেখিনি,’ লোকটা বলে। কেবল ওদের সঙ্গে থাকা দুয়েকটা অর্ধভুক্ত জন্তুকে ওখানে আমার কোটে নাক ঘষতে আর আমার খাবারের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছি!’
‘ধন্যবাদ,’ জনি বলে। সে আর টিঙ্কার রাস্তা ধরে এগোতে থাকে। শীঘ্র ওরা এমন একটা জায়গাতে আসে যেখানে রাস্তাটা দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে, এবং জনি আবারও বুঝে উঠতে পারে না কোন দিকে যাবে। জিজ্ঞেস করবার জন্য কোনো একজনকে খুঁজতে থাকে। আশপাশে কেউই নেই।

‘কী যন্ত্রণা,’ জনি বলে। তখনই সে ছোট্ট একটা মেয়েকে দেয়ালে ওপর দিয়ে তার দিকে উঁকি দিতে দেখে। সে তাকে ডাকে।

‘এই মেয়ে! এপথ দিয়ে কি কোনো জিপসি গেছে?’
মেয়েটা খুবই পুঁচকে। ‘জিপসি কী?’ সে বলে।
‘ওহ্, ওরা দেখতে খুবই কালো,’ জনি বলে। ‘চাকাওয়ালা বাড়িতে থাকে। ’
‘ওহ্,’ পুঁচকে মেয়েটি বলে। ‘হ্যাঁ—দুপুরের খাবারের আগে আমি চাকার ওপর বেশ কয়েকটা মজার বাড়ি দেখেছি। ওরা ওদিকে গেছে। ’

সে আঙ্গুল দিয়ে একটা রাস্তা দেখায়। জনি ওর দিকে তাকিয়ে হাসে।

‘ধন্যবাদ,’ কথাটা বলেই আবার হাঁটতে শুরু করে। সে আর টিঙ্কার টানা মাইল দুয়েক তাড়া করে হাঁটে—এবং তারপর জনির হৃদপিণ্ডটা দ্রুত লাফাতে শুরু করে! ডানের একটা মাঠে সে জিপসিদের কারাভাঁগুলো দেখতে পায়।

‘আমরা ওদের ধরতে পেরেছি!’ সে টিঙ্কারকে বলে। ‘এবার আমাদের সতর্ক হতে হবে। দেখে ফেললে চলবে না। জিপসিরা আমাকে চেনে। ’

ছেলেটি এবং কুকুরটি ঝোপের পাশদিয়ে নুয়ে কারাভাঁ সারির কাছে আসে। ভ্যানগুলো ঠেলে একটা জলধারার কাছে এনে রাখা হয়েছে, কারণ নিজেদের ঘোড়ার জন্য জিপসিরা জলের কাছে ছাউনি গাড়তে পছন্দ করে।
 
জনি ঝোপের মাঝ দিয়ে উঁকি মারে। একটা কুকুর সেই শব্দ শুনতে পায় এবং কান খাড়া করে। প্রচণ্ড জোরে ঘেউ ঘেউ শুরু করে। জিপসিরা চারপাশে তাকাতে শুরু করে। ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকায় ওরা জনি এবং টিঙ্কারকে দেখতে পায় না।

‘ওহ্, টিঙ্কার কুকুরটিকে ঘেউ ঘেউ না করিয়ে আমারা কী করে কারাভাঁর কাছে যেতে পারি? মনে হচ্ছে রাত নামার আগপর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। ’

ছেলেটি খাদের মাঝে একপ্রকার বিছানা বানায়। এবং টিঙ্কার গা ঘেষাঘেষি করে ওর পাশে শুয়ে পড়ে। জনি কী বুঝিয়েছে সেটা ওর খুব ভালো করেই জানা। অন্ধকার ঘনিয়ে আসার আগপর্যন্ত এক চোখ খোলা রেখে সে ওখানেই ঘুমিয়ে থাকে! তারপর সে আর জনি শ্যাডোকে খুঁজতে ঝোপের ভেতর দিয়ে হামাগুড়ি মেরে এগিয়ে যায়।

জনি বেড়ার মাঝে একটা ফাঁক খুঁজে পায়। দেখে জিপসিরা তাদের ঘোড়ার সাজ খুলে খালে নামাচ্ছে। শিশুরা কারাভাঁ ঘিরে খেলছে। শুনতে পায় মহিলারা একে অন্যের সঙ্গে কথা বলছে, এবং ওদেরই একজনকে আগুন ধরাতে দেখে। ধোঁয়া বেড়ার এপাশে চলে আসে।

‘টিঙ্কার, এটা খুবই মজার—একটা ছাড়া সবগুলো কারাভাঁর দরজা খোলা। ’ জনি ফিসফিস করে বলে। আমি বাজি ধরে বলতে পারি এটার ভেতরেই ওরা অসহায় শ্যাডোকে আটকে রেখেছে! ওহ্, আমার খুব ইচ্ছে করছে সাহস করে এখনই ওখানে গিয়ে সেটা খুলে খুঁজে দেখি!’

কিন্তু জনি ওদের ভয়ে ভীত ছিল। সে টিঙ্কারকে নিয়ে খাদের ভেতর শুয়ে অন্ধকার ঘনিয়ে আসার অপেক্ষা করতে থাকে। ক্ষুধা না লাগলেও ওর খুব তেষ্টা পায়। টিঙ্কার তখনই হামাগুড়ি দিয়ে কাদায় নামে এবং সামান্য বৃষ্টির পানি পান করে। জনিও একই কাজ করবার কথা ভাবে!

খুব দ্রুত অন্ধকার নেমে আসে। জনি খাদ থেকে বেরিয়ে আসে, তার নড়তে কষ্ট হয়, শীত শীত লাগে। বড় একটা ফাঁক দেখতে পেয়ে ঠেলে ভেতরে ঢোকে। দেখে জিপসিরা আগুনের চারপাশে জড়ো হয়ে খাবার খাচ্ছে। তাদের সঙ্গে থাকা কুকুরগুলো ছুঁড়ে দেয়া হাড় একনাগাড়ে চিবাচ্ছে। জনি সাড়াশব্দ না করে দরজা বন্ধ কারাভাঁর দিকে এগিয়ে যায়। পা ফেলতে শুরু করলেই আগুনের আলোয় একটা লোক তাকে দেখতে পায়।

‘কে ওখানে?’ লোকটা চেঁচিয়ে ওঠে। জনি জবাব দেয় না। একটা জিপসি ছেলে দৌড়ে এসে ওকে জাপটে ধরে।

‘তুমি এখানে কী করছো?’ সে চিৎকার করে। এর পরপরই সে খুব দ্রুত দৌড়ে পালায়, কারণ টিঙ্কার ওর ওপর লাফিয়ে পড়ে এবং গর্জাতে থাকে। জিপসিদের কুকুরগুলো দৌড়ে আসে।

‘ওহ্, টিঙ্কার! আমাদের কিছু একটা করা দরকার!’ অসহায় জনি চিৎকার করে বলে, তাকে দেখে হলদে দাঁত খিচিয়ে থাকা আধপেটা কুকুরগুলোকে তার মোটেই সুবিধার বলে মনে হয় না। কিন্তু এই দুই পেনির কুকুর টিঙ্কার মোটেই আমলে নেয় না। সে ওদের একটার ওপর হামলে পড়ে এবং গড়াগড়ি খেতে থাকে। অন্যগুলো পাগলের মতো ঘেউ ঘেউ করতে করতে লেজ গুটিয়ে পালায়। প্রথমটা কোনো মতে উঠে দাঁড়ায় এবং সেটাও এক দৌড়ে ভাগে।

‘দারুণ!’ জনি চেঁচিয়ে ওঠে। সে তাকিয়ে থাকা জিপসিদের দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ায়। ‘আমার কুকুর শ্যাডো কোথায়?’ চিৎকার করে ওঠে। ‘তোমরা ওকে পাথর মেরে আঘাত করেছো। কাজটা তোমাদের, আমি তা জানি। তারপর ওকে ধরেছো এবং ওকে নিয়ে পালিয়েছো। ও কোথায়? ও এই কারাভাঁটার ভেতরে আছে, আমি নিশ্চিত!’

‘তুমি পুরোপুরি ভুল বকছো,’ ওদের একজন বলে, তার কানের সোনার দুল জোড়া চকচক করছে। ‘যেগুলো দেখছো তা ছাড়া আমাদের সঙ্গে আর কোনো কুকুর নেই। ’
‘ঠিক আছে, তাহলে আমাকে এই কারাভাঁর দরজাটা খুলে ওর ভেতরটা দেখতে দাও!’ জনি বলে।
‘সেটা করলে ভালো হবে না বলে রাখছি। ’ লোকটা বলে। ‘তোমার কুকুর এখানে নেই। আমরা চোর নই। ’

কিন্তু তখনই জনি একটা শব্দ শুনতে পায় যা তার খুব ভালো করেই চেনা! এইমাত্র একটা চিৎকার শোনা গেল—এবং এটা শ্যাডোরই আর্তচিৎকার! শব্দটা বন্ধ কারাভাঁর ভেতর থেকে এসেছে।

‘এটা শ্যাডোরই আর্তচিৎকার!’ জনি চেঁচিয়ে ওঠে, এবং খুব দ্রুত পা চালাতে থাকে। জিপসিরা ওকে থামাতে ছুটে আসে—কিন্তু ততক্ষণে টিঙ্কার এগিয়ে এসে পথ আগলে দাঁড়ায়, দাঁত বের করে এতটাই প্রচণ্ডতার সঙ্গে গর্জন করতে থাকে যে লোকগুলো ভয়ে কাপুরুষের মতো পিছিয়ে যায়।

জনি দরজা খুলে এবং অন্ধকার কারাভাঁর ভেতরে তাকায়। কিছুই দেখতে পায় না। শ্যাডো! শ্যাডো! তুমি কি এখানে?’ সে চিৎকার করে বলে, ভাবে তখনই তার কুকুরটি বেরিয়ে এসে লাফাতে লাফাতে তার চারপাশে ঘুরঘুর শুরু করবে। কিন্তু কোনো শ্যাডোই বেরিয়ে আসে না। তার বদলে, ভ্যানের একেবারে পেছনে থাকা ভারী বস্তার ভেতর থেকে প্রচণ্ড চিৎকার ভেসে আসে, যার ভেতর অসহায় শ্যাডো এখনো বন্দি।

জনি তার পকেটে থাকা ছুরি বের করে। বস্তার মুখে বাঁধা দড়িটা কাটে—এবং সঙ্গে সঙ্গে গড়াগড়ি খেয়ে শ্যাডো বেরিয়ে আসে। তার ছোট্ট প্রভুর পা থেকে মাথা পর্যন্ত চাটতে শুরু করে, জনির কাঁধে থাবা রাখে, উত্তেজনা আর আনন্দে চিৎকার করতে থাকে। ‘ওহ্ শ্যাডো—প্রিয়, প্রিয় শ্যাডো!’ মনের আনন্দে প্রায় কাঁদতে কাঁদতে জনি বলে। ‘তুমি কি ব্যাথা পেয়েছো? আমাকে ভালো করে সবটা বুঝে উঠতে দাও!’

কিন্তু হাতে একেবারেই সময় নেই, কারণ জিপসিরা কারাভাঁর বাইরে চেঁচাচ্ছে, এবং টিঙ্কার পাগলের মতো হুঙ্কার করছে। কেউ একজন ওর দিকে একটা পাথর ছুঁড়ে মারে এবং সেটা ওর নাকে এসে লাগে এবং তাতে করে সে ভয়ানক রেগে যায়—তবে জনি বলার আগে সে জিপসিদের ওপর হামলে পড়তে রাজি নয়। শ্যাডোকে সঙ্গে নিয়ে, জনি দরজার দিকে ছোটে। সে ক্যাম্পের দিকে তাকায়।

‘আমার সঙ্গে দুটা ভয়ানক ক্ষেপাটে কুকুর আছে,’ ছেলেটি চিৎকার করে বলে। ‘যদি তোমরা আমাদের দিকে আর একটাও পাথর ছুঁড়বার সাহস দেখাও, বা আমাদের ক্যাম্প ছেড়ে যেতে বাধা দাও, তাহলে আমি দুটা কুকুরকেই তোমাদের দিকে লেলিয়ে দেব!’

লোকগুলো গোমড়া মুখে পিছিয়ে যায়। ওরা প্রকাণ্ড এই শিপ-ডগ দেখে ভীত হয়ে পড়ে। দুটা কুকুরই দাঁত খিচিয়ে ভয়ানক গর্জন করতে করতে জনিকে সুরক্ষা দিতে তার গা ঘেঁষে অবস্থান নেয়। ওরা সবাই মিলে অক্ষতভাবে মাঠের গেট পেরিয়ে আসে। জিপসিরা অনবরত চিৎকার করে ওদের দিকে খিস্তি খেউর ছুঁড়তে থাকে, তবে জনি তাতে গা করে না! গালাগালি দিয়ে তো আর হাড় ভাঙতে পারবে না!

ক্লান্তি, শীত, ক্ষুধায় কাবু হবার পরও খুব সুখি ভঙ্গিতে ছেলেটি টিঙ্কার এবং শ্যাডোকে নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটতে শুরু করে। এযাত্রা তাকে রক্ষা করেছে সেই ভক্তিতে শ্যাডো তার পায়ের কাছে লেগে থাকে। জনির হাতটা দোল খেয়ে পেছনে আসতেই, শ্যাডো তা চেটে দেয়, তাতে করে সেই ঘুটঘুটে ভূতুড়ে অন্ধকারেই জনি হেসে ওঠে।

তার বাবা আর মা তার জন্য খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ে। ক্লান্ত অবস্থায় জনি হোঁচট খেয়ে খামার ঘরে এসে ঢোকে—এবং তার গল্পটা সবাইকে খুলে বলে। তার মা তার সামনে এক থালা টোস্ট আর ঝোল রাখে এবং তাকে খাইয়ে দেয়।

‘বেচারা জনি!’ তিনি বলেন। ‘কিছু মনে করো না—সবকিছু ঠিকঠাক আছে বলেই মনে হচ্ছে। শ্যাডো মাথায় খুব একটা চোট পায়নি—আমি ক্ষতটা ভালো করে ধুয়ে দিচ্ছি, এবং ওটা শীঘ্র সেরে উঠবে। তুমি হাসি খুশি থাকতে পারো, জনি। ’
‘মা, আমি সুখি!’ জনি বলে। ‘কেবল ক্লান্ত এবং শীত শীত লাগছে—তবে আমি খুবই সুখি। আমি আমার প্রাণপ্রিয় শ্যাডোকে আবারও ফিরে পেয়েছি। ওহ্, তোমার জন্য কী দুঃচিন্তাই না হচ্ছিল, বুড়ো খোকা!’

শ্যাডো যতটা পারা যায় জনির গা ঘেঁষে বসে। তাকে এবং টিঙ্কারকে ভালো মতো খাওয়ানো হয়। টিঙ্কারকে আরসব কুকুরদের মাঝে ফিরে যেতে হবে, কিন্তু প্রতিরাতের মতোই শ্যাডো জনির বিছানায় ঘুমাতে যাবে!

এবং খুব সহজেই অনুমান করা যায় সেই রাতে ওরা দুজন আবারও কাছাকাছি থাকতে পেরে কতটা আনন্দিত হবে! জনির মা যদি সেটা ভুলে না যেতেন, তাহলে সত্যিই বিশ্বাস করা যেত, আহ্লাদে শ্যাডো তার পুঁচকে মালিকের চাদরের নিচেই সেঁধিয়ে পড়বে!

পর্ব ২৬ পড়তে ক্লিক করো

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
টিকে/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।