ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

মোড়ল ও ভূত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৭ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১১
মোড়ল ও ভূত

গ্রামের নাম দরগারবন। এ গ্রামে আছে বহুদিনের পুরনো একটা বটগাছ।

গ্রামের মোড়ল বটগাছটি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল। সে গাছ কাটার জন্য লোকও ঠিক করে রাখল।

গাছ কাটার আগের দিন রাতে একটা ভূত এলো মোড়লের কাছে। ভূতটি সাধারণ বেশ ধরে এলো যাতে মোড়ল ভয় না পায়। ভূতটি অনুনয় করে বলল, হে মোড়ল, আপনি হলেন এ গ্রামের মাথা। আমরা এই পুরনো গাছটায় বহু বছর ধরে বসবাস করে আসছি। আপনি এ গাছটি কেটে ফেলার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা বাতিল করুন।  

মোড়ল হুংকার ছেড়ে বলল, আমার গাছ আমি কাটবো, তুই বলার কে? আর এ গাছ কেটে ফেললে তোরা অন্যগাছে চলে যাবি, সমস্যা কোথায়?

ভূতটি বলল, আপনারা একে একে সব পুরনো গাছ কেটে ফেলেছেন। আমাদের বসবাসের জন্য এ গাছটি ছাড়া আর অন্য কোনো জায়গা নেই। এ গাছটি কাটবেন না দয়া করে।

মোড়ল বড় বদমেজাজী মানুষ। সে উত্তেজিত হয়ে বলল, তোরা কোথায় থাকবি না থাকবি এটা তোদের ব্যাপার। গাছ আমি কাটবই। পারলে তোরা ঠেকিয়ে রাখিস।

ভূতটি বলল, দেখুন, আমরা ইচ্ছা করলে আপনাদের অনেক ক্ষতি করতে পারি, ভয় দেখাতে পারি। আমরা অনর্থক কারো ক্ষতিও করি না, ভয়ও দেখাই না। আপনি যদি গাছটা কেটে ফেলেন তো আমরা গৃহহারা হয়ে পড়ব। ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভীষণ বিপদে পড়ে যাবো। তখন কিন্তু আপনারা শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন না, বলে দিলাম।

ভূতের মুখে এ কথা শুনে মোড়ল বিছার মতো লাফিয়ে উঠে পায়ের জুতু খুলে ভূতটাকে জুতাপেটা করে তাড়িয়ে দিলেন।

মোড়ল পরের দিন গাছটি কেটে ফেলল।

রাতে মোড়ল বাথরুম করতে বাইরে বের হয়ে চিৎকার করে ‘ওরে আল্লারে’ বলে মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেল।

কবিরাজ-বৈদ্য চলে এলো। তারা বলল, ভয়ংকর ভূতের আছর। শুরু হলো মোড়লের ভূত ছাড়ানোর চিকিৎসা।  

মোড়ল চোখ বন্ধ করলেই খালি দেখতে পান, তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে তালগাছের মতো ক্ষড় কুচকুচে কালো অসংখ্য ভূত। হাতির দাঁতের মতো দাঁত, বিশাল কান আর তিনটা করে চোখ, গা ভর্তি লোম। তিনি একটু পর পর লাফিয়ে উঠেন আর আবোল-তাবোল বকেন। মোড়ল সামনে যাকে পান তাকে খামচে ধরে বলেন, এই, এই ধর, ধর আমাকে, আমাকে তুলে নিয়ে গেলরে ভুতেরা, ধর, ধর। আমার সামনে হাজার হাজার ভূত। আমাকে বাঁচা। এসব বলে তিনি হাউমাউ করে কান্নাকাটি করেন সারাদিন। বাড়ির সবাই অস্থির। মোড়লের যন্ত্রণায় বাড়ির অন্য কারোর চোখে আর ঘুম নেই।

রাতের বেলা অসংখ্য ভূত নানারূপ ধরে সারা গ্রামের ঘর-বাড়িতে, রাস্তা-ঘাটে এলোমেলো ঘোরাফেরা করতে লাগল। মোটা-চিকন, ছোট-বড়, অদ্ভুত ধরনের ভূতে ভরে গেছে গ্রাম। ঘর থেকে বের হলেই সামনে পড়ে ভূত। যার সামনে পড়ে সে-ই চিৎকার মেরে টাশকি খেয়ে পড়ে যায়। মুখ দিয়ে লালা বিজল পড়ে। জ্বর আসে। শরীর কাঁপে। আবোল-তাবোল করে। এ রকম নানা কাণ্ডকীর্তি শুরু হয়ে গেল গ্রামে। গ্রামে কবিরাজ আর বৈদ্যের আসা-যাওয়া শুরু হয়ে গেল।  

মোড়লের সামনে আবার এলো ভূতটা। ভয়ংকর রূপ তার। মোড়ল ভূতটাকে একনজর দেখেই ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বিছানাপত্র নষ্ট করে ফেলল। মোড়ল তার দুহাত সামনের দিকে ঠেলে বারবার বলছে, আর এদিকে আসিস না বাপ। যা চাইবি তাই দিব, কী চাস তুই, খালি একবার ক।

গাছ লাগাবি, গাছ। নইলে তোর খবর হয়ে যাবেরে মোড়ল।

মোড়ল হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, আর খবরের কাম নেই বাপ। আমি এক্ষুনি গাছ লাগানো শুরু করছি। আগে তুই আমার সামনে থেকে যা।

মোড়ল গ্রামের সবাইকে নিয়ে শুরু করে দিলেন গাছ রোপণ। দেখতে দেখতে গাছে গাছে ছেয়ে গেল গ্রাম।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।