ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

এলো এলো ঈদ | মহিউদ্দীন আহ্‌মেদ

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪১ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৬
এলো এলো ঈদ | মহিউদ্দীন আহ্‌মেদ

বুবুন কী মহাবিপদেই না পড়েছে! 
এবার শুধু নাচলেই হবে না, গাইতেও হবে। তা-ও আবার ঈদ স্পেশাল গান!  

কেউ ঘরে না থাকলে সেই সুযোগে বুবুন বড় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটু নেচে নিতো।

তার এই নাচের খবর কেউ জানতো না। কিন্তু একদিন ব্যাপারটা মা ঠিকই টের পেয়ে যান। মেয়ের নাচ দেখে লুকিয়ে লুকিয়ে হাসেন। বুবুন অবশ্য মায়ের এই চালাকি ধরতে পারেনি।

একদিন দুপুর বেলা। খালি ঘরে গান গাইতে গাইতে নাচছিলো বুবুন। তখন জানালা ধরে উঁকি মেরে ওর নাচ দেখছিলেন বাবা, মা, দাদু, ছোট কাকাসহ পাশের বাড়ির আরো কয়েকজন। হঠাৎ সবাইকে উঁকি দিতে দেখে বুবুন নাচ থামিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গিয়েছিলো। সে লজ্জা পেয়েছে বলে সবাই হাততালি দিয়ে হাসছিলেন।

কিছুদিন পরে এক চাঁদনি রাতে বুবুনদের উঠোনে জারি গানের আসর বসে। ছোট চাচা ও তার ৪/৫ জন বন্ধু মিলে সুন্দর জারি গান গাইতে শুরু করে। গানের তালে তালে মা ধাক্কা দিয়ে বুবুনকে আসরের মাঝখানে পাঠিয়ে দেন। সে প্রথমে একটু একটু লজ্জা পেলেও সুন্দরভাবে নাচে। গান ও নাচ শেষে সবাই বুবুনকে হাততালি দেন।  
সেই থেকে শুরু।

বুবুন এখন মহাব্যস্ত। স্কুলের যেকোনো প্রোগ্রামে বুবুনের নাচ না হলে চলে না। ওর নাচ দেখার জন্য সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। আর স্বাতী ম্যাডাম তো বুবুনের একদম ফ্যান হয়ে গেছেন। মাঝে মধ্যেই ম্যাডামের জন্য বুবুনকে নাচতে হয়।  
টিফিন পিরিয়ড। চারদিকে হৈ হুল্লোড়! আচার, বাদাম, চানাচুর, নুডুলস খাওয়ার ধুম। হঠাৎ হয়তো কেউ এসে বুবুনকে বললো, স্বাতী ম্যাডাম ওকে ডেকেছেন। প্রিয় ম্যাডামের ডাক শুনে কে বসে থাকে? বুবুনও গেলো। গিয়ে তো ওর চক্ষু চড়কগাছ। দেখে ম্যাডাম ওর জন্য অনেকগুলো চকলেট নিয়ে বসে আছেন।

‘আরে এসো এসো! তোমার জন্য সেই কখন থেকে বসে আছি। ’
বুবুন জানে, স্বাতী ম্যাডাম ওর হাতে চকলেট ধরিয়ে দিয়েই বলবেন, ‘একটা নাচ দেখাবে বুবুন?’

শুধু স্বাতী ম্যাডাম নন। আরো একজন আছেন। তিনি বুবুনের দাদু। সুযোগ পেলেই সুর করে ডাকবেন, ‘আমার বুবুন দাদাভাই কই গো! একটা নাচ দেখাও তো!’ 

এরকম কতজনের মন যে বুবুনকে রাখতে হয়, তার কোনো হিসাব নেই।  
ও, আর একজনের কথা না বললেই নয়! তার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। বুবুনের খালু। তার বাড়ি কুমকুমারি গ্রামে। মাঝে মধ্যেই বুবুনদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তারও একই আব্দার, ‘মা মণি! তোমার নাচ দেখলে আমার মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়!’ 

বুবুন কখনো কাউকে হতাশ করেনি। কিন্তু এবার সে নিজেই হতাশ হয়ে পড়েছে। কারণ এবার যে গাইতে হবে গান। তা-ও আবার ঈদের গান। তাই বুঝতে পারছে না কীভাবে কী করবে? সাধারণ কোনো গান হলে না হয় গেয়ে দিতে পারতো। কিন্তু ঈদের গান বলে কথা।
হারুন মামার একই কথা, ‘ঈদের দিন বৈকালে ক্লাব ঘরে ঈদ উৎসব। তোমাকে একখানা চমৎকার ঈদের গান পরিবেশন করতে হবে। ’
বুবুন বলেছিলো, ‘মামা! আমি ঈদের গান পারি না। ’        
মামা হেসে বলেছিলো, ‘বুবুন পারে না- এই কথা কি বিশ্বাস করতে হবে?’
বুবুন বলেছিলো, ‘সত্যি মামা। খুব কঠিন। ’
মামা বলেছিলো, ‘হয়ে যাবে। হয়ে যাবে। ডোন্ট ওরি। ’
ঈদের তিন দিন আগে এই কথা বলে গেছেন হারুন মামা। তারপর থেকে বুবুনের চিন্তা আর চিন্তা: কেমন করে ঈদের গান গাইবে! 
এভাবে তিন দিন কেটে গেছে। আজ বিকেলে ক্লাব ঘরে ঈদ উৎসব। গান তাকে গাইতেই হবে!
কি যে টেনশন! বুবুন কাউকে বোঝাতে পারবে না। গানের চিন্তায় সে দিশেহারা হয়ে এখন পুকুর পাড়ে চলে এসেছে। বাড়িতে আনন্দের ছড়াছড়ি। ওখানে গান নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ নেই।  
পুকুর পাড়ে পায়চারি করতে করতে বুবুন ভাবছে, ইশ! সে যদি সুন্দর একটা ঈদের গান বানিয়ে ফেলতে পারতো তাহলে কি মজাই না হতো! বিকেলে হারুন মামাকে সে কী বলবে- এই চিন্তায় ওর খুব লজ্জা হচ্ছে।
এমন সময় নতুন জামা পরে গিল্টু আর বিল্টু যাচ্ছিলো ওর পাশ দিয়ে। ওরা দুই ভাই। সব সময় গলায় গলায় চলে। গিল্টু বিল্টুকে দেখে বুবুন কাঁঠাল গাছের আড়ালে গিয়ে দাঁড়ালো। কারণ বুবুনকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে ওরা নানারকম প্রশ্ন করবে। বুবুনের এখন কারো সঙ্গে কোনো কথা বলার মতো মুড নেই।  
‘কী বুবুন? একা একা এখানে কী করছো?’
অদ্ভূত এক কণ্ঠস্বর শুনে বুবুন চমকে ওঠে। কিন্তু আশপাশে তাকিয়ে কাউকেই দেখতে পায় না। ঠিক তখন কাঁঠাল গাছ থেকে একটা কাঠবিড়ালি বলে ওঠে, ‘এই যে বুবুন! এদিকে তাকাও!’
বুবুন উপরের দিকে তাকায়, ‘ও তুমি?’
‘হ্যাঁ। সেই কখন থেক দেখছি এখানে দাঁড়িয়ে আছো। কী ব্যাপার বলো তো?’
‘আর বোলো না ভাই। আমি একটা সমস্যায় পড়েছি। ’
‘কী সমস্যা?’
‘তোমাকে বললে তো কোনো লাভ হবে না। কেন শুনতে চাচ্ছো?’ 
‘আহা বলেই দেখোনা! লাভ হলে তো হতেও পারে। ’
‘আচ্ছা ঠিক আছে বুঝলাম। ’ বুবুন পায়চারি করতে করতে বলে, ‘একটা ঈদের গান লাগবে। ’ÑÑতারপর কী যেন ভাবে, ‘পারবে দিতে?’ 
‘এ আর কী এমন কঠিন যে দিতে পারবো না?’
বুবুন ভীষণ বিস্মিত, ‘কি বললে!’
‘হ্যাঁ! খুব সহজ!’
‘তুমি ঈদের গান জানলে কীভাবে?’
‘শোনো তাহলে বলি। গত ঈদে বেড়াতে গিয়েছিলাম এক শহরে। সেই শহরে মস্তবড় একটা অনুষ্ঠান হয়েছিলো। খোলা মঞ্চ। হাজার হাজারÑÑকোটি কোটি দর্শক। আমি ছিলাম ঠিক এরকম একটা কাঁঠাল গাছে বসে। সেই অনুষ্ঠান থেকেই গানটা আমি শিখেছি। ’
‘ওকে। তাহলে আর কোনো কথা নয়। জলদি করে গানটা আমাকে শিখিয়ে দাও!’
‘হারমোনিয়াম ছাড়া তো সম্ভব নয় বুবুন!’
‘তাহলে ক্লাবঘরে চলো। ’
বুবুন ক্লাবঘরে গিয়ে ঝটপট কাঁঠবিড়ালির কাছ থেকে গানটা শিখে নেয়। আর বাড়ি নিয়ে গিয়ে কাঠবিড়ালিকে খাওয়ায় ঈদের সেমাই।

বন্ধুরা! কাঁঠবিড়ালির শেখানো যে গান গেয়ে বুবুন ঈদ অনুষ্ঠান মাত করে দিয়েছিলো আমিও বুবুনের কাছ থেকে সে গানটা শিখে নিয়েছি। গানটা সম্পর্কে তোমাদের কাছে কী আর বলবো। এক কথায় চমৎকার গান! তোমাদের জন্য স্থায়ীটা শোনাচ্ছি। বাকি অংশ আমার মুখস্থ নেই; ডায়রিতে লেখা আছে। পরবর্তী সময়ে শোনাবো। তাহলে আর কথা নয়। গানটা শোনো:
এলো এলো ঈদ
চোখে নেই নীদ
চিকন চাঁদে জাগলো আকাশ
সবার মনে খুশির তাগিদ॥

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।