কদিন পরেই ঝিনার মামা একটা সুন্দর পুতুল পাঠিয়ে দিয়েছে। সে যেমন তেমন পুতুল নয়।
ঝিনা তার সেই পুতুলটা নিয়ে কোলে করে করে ঘুরে বেড়ায়। একদিন ঘরে গিয়ে ঝিনা বললো, টেলিভিশন দেখবে?' আর সঙ্গে সঙ্গে পুতুলটা বললো, 'আমি টেলিভিশন চালাতে পারি, দেখবে? তাহলে দেখো। ' বলেই একটা হাত টেলিভিশনের দিকে উঁচু করে ধরলো আর অমনি টেলিভিশন অন হয়ে গেলো। তার মানে পুতুলের হাত রিমোট কন্ট্রোলের মতো কাজও করে। তাই দেখে ঝিনার খুব আনন্দ হলো। ঘরে টেবিলের ওপর একটা লিপস্টিক দেখে পুতুলটা বললো, 'আমি লিপস্টিক পরবো। ' ঝিনা বললো, 'তাই! আমি এক্ষুনি তোমায় লিপস্টিক পরিয়ে দিচ্ছি। ' ঝিনা তক্ষুনি লিপস্টিকটা নিয়ে পুতুলের ঠোঁটে লাগাতে গেলো আর তখন পুতুল বলল, 'না না না, আমার কাছে দাও, আমি নিজেই পরতে পারি। '
পুতুলটা রাতে ঝিনার পাশে ঘুমোয়। এক রাতে হয়েছে কি, ঝিনা ঘুম ভেঙে দেখে পাশে পুতুল নেই। কোথায় গেলো? কোথায় গেলো? এতো রাত্তিরে পুতুলটা একা একা কোথায় গেলো? ঝিনা আম্মুর কাছে গিয়ে বললো, 'আম্মু দেখো, আমার পুতুলটাকে পাচ্ছি না। ' আম্মু তখন বললো, 'পাগল মেয়ে, নাম ধরে ডাক দাও ,ঠিক এসে যাবে। ' তাই তো! ওর নাম ধরে ডাকলে তো শুনতে পায়! ঝিনার পুতুলের নাম খটখটাস। খটখট করে হাঁটেতো, তাই নাম খটখটাস। ঝিনা ডাক দিয়ে বললো, 'খটখটাস, কোথায় তুমি? শিগগির এসো। ' আর অমনি ডাইনিং টেবিলটার নিচ থেকে টুপ করে বেরিয়ে পুতুলটা বললো, 'এই তো আমি, বিড়ালের সঙ্গে খেলা করছিলাম। ' বলে খ্যাকখ্যাক করে হেসে উঠলো।
ঝিনা পুতুলটাকে নিজের পাশে শুইয়ে গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করে বললো, 'শোনা খটখটাস, আমাকে না বলে তুমি একা একা কোথাও যাবে না, হি?, একা একা গেলে তোমাকে ভুতে ধরবে, হি?' তাই শুনে পুতুলটা ঝিনার মুখে হাত বুলিয়ে বললো, বিড়ালটা আমায় খেলা করতে ডেকেছিল- তাই গিয়েছিলাম, তুমি বিড়ালের কথা বোঝো?'
ঝিনা তখন বললো, 'হ্যাঁ, বুঝি, ম্যাও ম্যাও করে। ' এ কথা শুনে খটখটাস পুতুল হি হি করে খুব হাসলো, বললো, 'না না, বিড়াল মানুষের মতো কথা বলে, আমি বুঝতে পারি, কিন্তু তুমি বুঝতে পারো না, বিড়াল যখন 'গরর গরর' করে- তার মানে, আমি খেলা করবো। ' এ কথা শুনে ঝিনা বললো, 'ও ! তাই! ওরে আমার লক্ষ্মী পুতুল। ' তারপর গল্প করতে করতে দু’জন ঘুমিয়ে পড়লো।
পরেরদিন ঝিনা স্কুলে গেছে আর পুতুলটা বাড়িতে আম্মুর সঙ্গে আছে। আম্মু যখন রান্না করে তখন পুতুলটা আম্মুকে তেলের পট এগিয়ে দেয়, ফ্রিজ থেকে মাছটা নিয়ে দেয়, কেউ কলিং বেল টিপলে দরজা খুলে দেয়।
ঝিনা ক্লাসে বসে আছে, আর স্কুলের ম্যাডাম ক্লাস নিচ্ছেন। হঠাৎ খটখটাস পুতুল একা একা চলাচল ক্লাসের মধ্যে ঢুকে ঝিনার পাশে গিয়ে বসলো, তারপর হাসতে হাসতে বললো, 'আমিও পড়াশুনা করবো। ' তাই না দেখে ঝিনার ম্যাডাম তখন খুব খুশি হলেন, পুতুলটাকে কোলে নিয়ে আদর করে সবাইকে বললেন, 'ঝিনার কি সুন্দর পুতুল দেখো! তোমাদের মতো কথা বলতে পারে। '
তারপর ক্লাসের সকলের সাথে খুব খেলাধুলা-কথাবার্তা বলতে লাগলো পুতুলটা। ক্লাসের একটা মেয়ে অংক ভুলে গিয়েছিল। পুতুলটা তক্ষুণি তার খাতায় অংক কষে বুঝিয়ে দিলো। স্কুল শেষে পুতুলটা ঝিনাকে বললো, 'আপু, তুমি আমার ঘাড় ধরে থাকো, আমি উড়িয়ে তোমাকে বাসায় নিয়ে যাবো। ' স্কুলের সবাই দেখলো, ঝিনা পুতুলটার ঘাড় শক্ত করে ধরে আছে, আর পুতুলটা হু হু করতে করতে ঝিনাকে নিয়ে উড়ে চলছে গাছের ওপর দিয়ে, ঝিনা উড়ে যেতে যেতে নিচের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়তে নাড়তে 'টা টা' বললো বন্ধুদের, সে সময় ম্যাডামরা সবাই এসে উপরের দিকে তাকিয়ে ঝিনা আর পুতুলটিকেও 'টা টা' দিলো।
এই না দেখে, সে-ই যে মেয়েটা, যার অংক কষে দিয়েছিল, সেও মায়ের কাছে বায়না ধরলো, ঝিনার মতো একটা পুতুল কিনে দেওয়ার জন্য। কিন্তু খটখটাসের মত পুতুলতো আর সব জায়গায় পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৭
এএ