কাকটা কাঠবিড়ালির কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু খেয়েই যাচ্ছে। কাঠবিড়ালি কাকটার সামনে অন্য একটা ডালে বসেছিল, সে তখন একটু রাগ করে বললো, এই পেয়ারাটা আমি আগেই খেতে পারতাম, শুধু একটু ভালো করে পাকলে খাবো বলে আজ আড়াই দিন চৌকি দিয়ে রেখেছি, ডেঁয়ো পিঁপড়ের কামড় খেয়েছি, বিচ্ছু ছেলেপিলের লাঠিখোঁচা খেয়েছি, আর আপনি কোথাকার কে এসে হাপুস হুপুস করে খাচ্ছেন, যান না, সাবান খান।
কাক চোখ বুজে খেতে খেতে কাঠবিড়ালিকে বললো, লোকে বলে ছাগলে কিনা খায়- কাকে কিনা খায়, তোরাও তো কম কিছু খাস না, ফলমূল গাছের পাতা, ডাটা সবতো তোরা খাস। তা আজ যা না, আজ সাবান খেয়ে দেখ না। এ কথা শুনে কাঠবিড়ালি জিভ দিয়ে নিজের ঠোঁটটা একটু চাটলো, ভাবলো, সাবান একটু চেকে দেখা যায়। সে তাড়াতাড়ি কাক সাহেবকে কাক ভাই সম্বোধন করে হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করলো, কাক ভাই, সাবান কেমন খেতে? আমার মাঝে মধ্যে সাবান খেতে ইচ্ছে করে।
কাক বললো, খুব ভালো খেতে, এতো ভালো যে, মুখ পরিষ্কার হয়ে যায়, তুই তো দাঁত মাজিস না, যা সাবান খেয়ে আয়, দাঁত পরিষ্কার হয়ে যাবে। কাঠবিড়ালি তক্ষুনি মুখ-চোখ সিঁটকে নিজের দাঁত দেখার চেষ্টা করলো, কিন্তু নিজের দাঁত তো নিজে দেখা যায় না, সেও পারলো না। তারপর লেজ উঁচিয়ে ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে আর মুখে ‘কিটিকিটি কিররিট, কিটিকিটি কিররিট’ বলতে বলতে সাবান খেতে গেলো।
পাশের বাড়ির এক বারান্দার কোণে একটা কাপড়কাচা সাবান ছিল। সাবানটা ঘষে ঘষে খুব ছোট হয়ে গেছে। কাজের বুয়া জামাকাপড় কাচার জন্য সাবানটা বারান্দায় রেখে ঘরে জামাকাপড় আনতে গেছে। আর সেই ফাঁকে কাঠবিড়ালি মহা আনন্দে সাবানে একটু কামড় দিয়েছে। প্রথম প্রথম সাবানের স্বাদ বুঝতে পারেনি, তাই মনে মনে ভাবছে, বাহ! একেবারে অন্যরকম স্বাদ, আর দুটো থাকলে ছেলেমেয়েদের জন্যও নিয়ে যেতাম, এতোদিন কেন এসব খাইনি।
কাঠবিড়ালি ভাবছে আর গপগপ করে খাচ্ছে, কিন্তু সাবান কি আর খাওয়া যায়! কাপড়কাচা সাবানে থাকে ক্ষার, তা কাকের বাঁশচেঁচা ঠোঁটে সইলেও কাঠবিড়ালির ফল-ফলাদি খাওয়া জিভে সয় না। কিছুক্ষণ পরেই একটা স্বাদহীন, সাবান সাবান গন্ধ কাঠবিড়ালির সমস্ত মুখে-জিভে ভরে গেলো আর গালটা নোনতা নোনতা হয়ে গেলো। সে ‘ওয়াক ওয়াক‘ করতে লাগলো, আর ‘কিটিকিটি কিররিট, কিটিকিটি কিররিট’ বলতে বলতে বললো, ‘লবল দিয়েছে, লবল দিয়েছে, এটা আর খাবো না, অন্য একটা খাবো। কিছুক্ষণের মধ্যে কাঠবিড়ালির পেটের মধ্যে সাবান ফেনিয়ে উঠলো, তার সমস্ত গা গুলিয়ে উঠলো। তার মনে হচ্ছে মুখের মধ্যে কে যেন আস্ত একটা ন্যাকড়া গুঁজে দিয়েছে।
অস্বস্তিতে কাঠবিড়ালি লেজটা মাটিতে একবার এদিকে-একবার ওদিকে বাড়ি মারতে লাগলো, আর ‘কিটিকিটি কিররিট কিটিকিটি কিররিট, ওরে মারে! লোভ করে কেন সাবান খেলাম রে! গাল হেজে গেলো রে! গালে ঝামা ঘষে দিল রে! ওয়াক থু, আর সাবান খাবো না, আর সাবান খাবো না’ বলতে লাগলো।
পাশের পেয়ারাগাছ থেকে কাঠবিড়ালির এই কাণ্ড দেখে সেই কাকটার খুব হাসি পেলো। কাকটা হাঁ করে কাক কাক করে যেই হাসতে গেছে, আর অমনি মুখ থেকে আধ খাওয়া সেই পেয়ারাটা টুপ করে মাটিতে পড়ে গেলো। তা দেখে কাঠবিড়ালি ‘কিটিকিটি কিররিট’ বলে দৌড়ে সেই পেয়ারাটা তুলে ঘাসবনের মধ্যে চলে গেলো।
পেয়ারা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে দেখে কাক বললো, পেয়ারাটায় কি বিচ্ছিরি সাবান সাবান গন্ধ রে বাবা! মনে হচ্ছে সাবান দিয়েই পেয়ারাটা তৈরি, এ পেয়ারা আমি খাবো না, ও মা! গা গোলাচ্ছে রে! কাঠবিড়ালি লোভ করে কেবল সেই পেয়ারাতে কামড় দিতে যাচ্ছিল, কাকের মুখে পেয়ারায় সাবানের কথা শুনে খুব করে কি একটা চিন্তা করে ‘ধুর ছাই’ বলে পেয়ারাটা সেখানে ছুড়ে ফেলে দিলো। আর তক্ষুনি কাকটা গাছ থেকে নেমে সেই পেয়ারাটা নিতে গেছে, এমন সময় সেই কাজের বুয়া ‘সাবান খেয়েছে, সাবান খেয়েছে’ বলতে বলতে কাকের গা তাক করে খুব জোরে ছুড়লো এক ঢিল, আর অমনি ভয়ে পেয়ারা টেয়ারা ফেলে কাকটা কা-কা করতে করতে একেবারে আকাশে উঠে পালিয়ে গেলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৭
এএ