ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

একজন সুখী রাজপুত্তুরের গল্প (শেষ পর্ব)

মূল: অস্কার ওয়াইল্ড <br>অনুবাদ: সামিও শীশ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১১
একজন সুখী রাজপুত্তুরের গল্প (শেষ পর্ব)

রাজপুত্তুরের শরীরের প্রতিটি স্বর্ণকণা পাখি খুট খুট করে তুলে নেয়। রাজপুত্তুর হয়ে যায় একেবারে নিরাভরণ, জৌলুসশূন্য।

সোনাগুলো নিয়ে সে ওই গরীব মানুষগুলোর মাঝে বিলিয়ে দেয়। শিশুদের মুখে হাসি ফুটে, রাস্তার ধারে খেলতে খেলতে তারা উল্লসিত হয়ে বলে, ‘আজ আমরা পেট ভরে খেতে পারব। ’

কদিন পরেই তুষার পড়া শুরু হয়ে যায়, তারপর বরফ পড়ে। দেখে মনে হয় পুরো শহরটা রূপার চাদরে ঢেকে গেছে,  ঝলঝল করছে; ঘরের ছাদ চুঁইয়ে চুঁইয়ে বরফ গলা পানির ফোটা জমে আছে। সবার কাছে গরম কাপড় আছে, বাচ্চারা গায়ে গরম কাপড় চড়িয়ে বরফে খেলছে।

পাখিছানার এই ঠাণ্ডাতে কষ্ট হয়, তবু সে রাজপুত্তুরকে ছেড়ে যাবে না। সে রাজপুত্তুরকে খুব বেশি ভালবেসে ফেলেছে। সে মাঝে মাঝে রুটিওয়ালাকে লুকিয়ে এক টুকরো রুটি নিয়ে এসে কুটকুট করে খায়, সেইসাথে ডানা ঝাপটিযে শরীর গরম রাখার চেষ্টা করে।     

ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারে তার মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে। সে তার শেষ শক্তিটুকু দিয়ে রাজপুত্তুরের কাঁধে এসে বলে। সে বলে, ‘বিদায় বন্ধু। চলে যাবার আগে তোমার হাতে একটি চুমু দিয়ে যাই।

চলে যাবার অর্থটা ঠিক বুঝতে না পেরে রাজপুত্তুর বলে, ‘আমি খুবই খুশি হয়েছি যে তুমি মিশরে যাচ্ছ। এখানে তোমার অনেকদিন হল। তোমাকে আমি খুবই ভালবাসি। ’

পাখিছানা মিষ্টি হেসে বলে, ‘আমি মিশরে না, আরও দূর দেশে যাচ্ছি। চিরঘুমের দেশে। ’ তারপর সে রাজপুত্তুরকে চুমু দেয় এবং তার পায়ে ঢলে পড়ে।

এমন সময় মূর্তির ভিতর থেকে একটা ফাটলের শব্দ হয়। সীসার তৈরী হৃদয়টি দুই টুকরা হয়ে যায়। শীতের প্রকোপ আরও বাড়তে থাকে।
পরদিন সকালে নগরের মেয়র আর তার কাউন্সিলারা নগর ময়দানে হাঁটতে বের হয়। মূর্তিটির কাছে এসে থমকে যায়, চমকে গিয়ে মেয়র বলেন, ‘আমাদের রাজপুত্রের এইটা কী হালত হয়েছে?’ তার সাথে কাউন্সিলাররা সুর মিলিয়ে বলে, ‘একেবারে ফকিররা অবস্থা। ’

‘তলোয়ারে রুবি নাই, চোখ কানা, গায়ে সোনার কাপড় নাই, এতো একেবারে রাস্তার ফকির অবস্থা’ মেয়র বলতে থাকেন। কাউন্সিলাররা যোগ করেন, ‘পুরা রাস্তার ফকির। ’

মেয়র বলে যান, ‘এইটার পায়ের কাছে একটা মরা পাখি পড়ে আছে। এখানে পাখিদের মারা নিষেধ করে একটা পরিপত্র জারি করতে হবে। ’ মেয়রের সেক্রেটারি কথাটি নোট করে নেয়।

এরপর তারা সুখী রাজপুত্তুরের মূর্তিটি সরিয়ে নেয়। ‘এর সৌন্দর্য যখন শেষ তখন একে এখানে রাখার কোনো মানে হয় না’ নন্দনতত্ত্বের অধ্যাপক মন্তব্য করেন।

মূর্তিটিকে হাপরে দিয়ে গলিয়ে ফেলা হল। মেয়র বলেন, ‘এই গলানো সীসা দিয়ে আরেকটা মূর্তি করা হোক, এইবার আমার মূর্তি বসালে কেমন হয়?’ যে কাউন্সিলাররা আগে সবসময় জ্বি জ্বি করত তারাও এ প্রস্তাব মানতে পারল না, তর্কাতর্কি শুরু হয়ে গেল।

অন্যদিকে লোহার কারখানার কামার বলে, ‘এটাতো আজব ব্যাপার। ভাঙ্গা হৃদয়ের সীসাগুলো তো গলছে না। ’ এই বলে সে রাজপুত্তুরের হৃদয়টা বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। রাজপুত্তুরের হৃদয়টা মৃত পাখিছানার পাশে গিয়ে পড়ে।

শহরে যখন মূর্তি বসানো নিয়ে তর্ক চলছিল, কামার যখন সীসা না গলার কারনে বিরক্ত হচ্ছিল, ঠিক তখন ঈশ্বর তার এক ফেরেশতাকে বলছিলেন, ‘তুমি আমার জন্যে ঐ শহরের সবচেয়ে মূল্যবান দুইটি সম্পদ নিয়ে আসো। ’ ফেরেশতা রাজপুত্তুরের সীসার হৃদয় আর পাখিছানার মৃতদেহটি নিয়ে আসে।

অত্যন্ত সন্তুষ্টির সাথে ঈশ্বর বলেন, ‘তুমি একেবারে ঠিক সম্পদটি নিয়ে এসেছ। পাখিছানা স্বর্গের বাগানের গাতক পাখি হবে, আর সুখী রাজপুত্তুর হবে এর মধ্যমনি। ’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।