ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রণাঙ্গণের শিশু-কিশোর

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
রণাঙ্গণের শিশু-কিশোর ...

স্বাধীনতা বাংলা ও বাঙালির গর্ব। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্জন করেছে এই মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। যার বিনিময় হিসেবে বাংলাদেশকে দিতে হয়েছে এক নদী রক্ত, ত্রিশ লাখ প্রাণ ও মা-বোনের সম্ভ্রম।

৭১’র মুক্তিযুদ্ধে বাঘা মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি অবদান রাখে এদেশের শিশুরাও। মুক্তিযুদ্ধে শহীদও হয়েছে অনেক শিশু-কিশোর।

 

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাকে স্বাধীন করতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কোনো কোনো সময় বুকে গ্রেনেড বেঁধে ঝাপিয়ে পড়েছে পাকিস্তানিদের বিনাশে।

একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলার দামাল ছেলেদের সহযোগিতা করেছে বাংলার কোমলমতি শিশুরা। রাতের আঁধারে অথবা প্রয়োজনীয় যে কোনো মুহূর্তে এক ক্যাম্পের খবর অন্য ক্যাম্পে পৌঁছে দেওয়া, গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে খাবার সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়ানো, বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্তচর হয়ে পাকিস্তানি শিবিরে প্রবেশ করে সংবাদ বা যে কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য মুক্তিযোদ্ধাদের জানানো, ক্ষেত্রবিশেষে পাকিস্তানিদের ভুল পথের (রাস্তা) নির্দেশনা দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে থেকে অস্ত্র ও গোলা-বারুদের তত্ত্বাবধান করা, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে থেকে গোলা-বারুদ ও অস্ত্র সরবরাহ করা, যুদ্ধ ক্ষেত্রে অস্ত্র নিজের সঙ্গে নিয়ে বেড়ানোসহ মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট ছোট অনেক কাজ করেছে শিশুরা।  

যুদ্ধ কেন্দ্র করে ফটোগ্রাফাররা তুলেছেন অনেক ছবি। এমনই একটি ছবি সম্পর্কে প্রয়াত ফটোগ্রাফার রশীদ তালুকদার বলেছিলেন ‘পেছনে আবছা দেখা যাচ্ছে আইয়ুব খানের গলায় জুতার মালা। কোত্থেকে সামনে ছেলেটা এসে স্লোগান দিতে শুরু করলো। ছবিটা তুলে উঠে দাঁড়াতে যাব, তখনই গুলি এসে লাগলো ছেলেটার গায়ে। ঘটনাটা এমন আকস্মিক ছিল, গুলিবিদ্ধ ছেলেটার ছবি তুলতেও ভুলে গিয়েছিলাম। ’

এতো গেলো এক ফটোগ্রাফারের ছবির গল্প। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আরো অনেক ছবি আছে, আছে স্মৃতিময় ভিডিওচিত্র। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে অনেক গল্প, কবিতা, নাটক ও চলচ্চিত্র। যেগুলোর প্রায় সবগুলোতেই রয়েছে শিশু চরিত্র। আর এগুলোর মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই ভালোভাবে জানতে পারি ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে বাংলার শিশু কিশোরদের অবদান সম্পর্কে।

এদিকে একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমাদের সামনে আসা ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর খালিদ মাহমুদ মিঠু পরিচলিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘গহীনে শব্দ’তে আমরা দেখতে পাই শুরুতেই একঝাঁক শিশু ও শিশুর র্কাযক্রম দিয়েই ছবিটি শুরু। মাঝে একটি জায়গায় একটি যোদ্ধাদের কমান্ডার হিসেবেও দেখা যায় একটি শিশুকে। পরবর্তীতে ওই শিশুটিরই পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমাদের চিরচেনা মুখ মাসুম আজিজ।

চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’, তারেক মাসুদ পরিচালিত ‘মুক্তির গান’ এবং মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ চলচ্চিত্রেও আমরা দেখতে পাই ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণের চিত্র।

আরেকটি কথা না বললেই নয়। বর্তমানে আমরা আমাদের শিশুদের জানাতে চাচ্ছি আমাদের ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে। কিন্তু যে সব বিশেষজ্ঞ এখন আমাদের ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাবে, তারাও তো মুক্তিযুদ্ধের সময় শিশু-কিশোরই ছিল।  

বাংলাদেশ সময়: ০০২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।