ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ভূতের গলির সেই বাড়িটা | সুমাইয়া বরকতউল্লাহ্

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৮
ভূতের গলির সেই বাড়িটা | সুমাইয়া বরকতউল্লাহ্ ভূতের গলির সেই বাড়িটা

চৈতি আমার খুব ভালো বান্ধবী। তার বাবা একটি বাড়ি কিনেছেন ভূতের গলিতে। খুব পুরনো একটি বাড়ি। কম দামে পেয়েছেন বলে তাড়াতাড়ি করে কিনে ফেলেছেন। কবে উঠবে বাড়িতে সেই আনন্দে চৈতিরা ছটফট করছে। 

একদিন তারা কেনা বাড়িতে গিয়ে উঠলো। বাড়িটির দেয়ালে ও ছাদে অসংখ্য ছিদ্র।

চামচিকারা ওড়াউড়ি করছে। ঘরভর্তি পোকামাকড়ের বাসা। বাড়ির দেয়াল কাত হয়ে আছে। মনে হয় একটু ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে। বাড়ির চারপাশে আগাছায় ভর্তি। বাড়ির এক কোনে আছে দুটি কদম গাছ আর এক কোণে আছে একটি তেঁতুল গাছ। ভূতুড়ে পরিবেশ। তারপরেও খারাপ লাগছে না চৈতিদের। কারণ বাড়িটা এখন নিজেদের। তাই অনেক আনন্দ।

গভীর রাত। সবাই ঘুমিয়ে আছে। ‘চৈতির বাঁবা বাঁড়ি আঁছেন্নি। অ চৈতির বাঁপ, বাঁড়ি আঁছেন্নি। ’ গম্ভীর গলায় কে যেন ডাকছে।

কথাগুলো কয়েকবার কানে এলেও চৈতির বাবা তেমন দাম দেননি। চৈতির বাবা তো আরও কেউ থাকতে পারে। কিন্তু মশারি ফাঁক করে যখন বলল, ‘চৈতির বাঁবা ঘুমাইছেন্নাকি, উঁঠেন। ’ তখন চৈতির বাবা চোখ মেলে তাকালেন। দেখলেন, মশারির বাইরে একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। ছায়ামানুষ! হাত পা, শরীর, মাথা অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চৈতির বাবা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, কে আপনি, কে!
‘আঁমি বাঁড়িঅলা। এই বাড়ির মালিক আমি। হুঁট করে বাঁড়িতে উইঠা পঁড়লেন দেঁহি, আঁমার সঙ্গে কোনো যোঁগাযোগই করলেন না, ব্যাঁপারটা কি, কিছুই ত বুঁঝতে পারতেছি না আঁমি, বললো ছায়ালোকটি।

চৈতির বাবা মোচড় দিয়ে উঠে বসলেন বিছানার এক কোণে। মশারির একটা অংশ স্ট্যান্ডের উপরে রেখে বললেন, আচ্ছা বসেন ভাই, বসেন। একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বসতে বললেন তিনি। ছায়ালোকটা ডান-বাও তাকিয়ে বললেন, সংসার তো ভালোই পাঁতছেন দেঁখছি। বাঁড়ি কই আঁফনের। চৈতির বাবা অবাক হয়ে নরম গলায় বললেন, এতো রাতে এসে আপনি বাড়ি-ঘরের খবর নিচ্ছেন, আগামাথা কিছুই তো বুঝতেছি না ভাই। আপনি কে বলুন তো!

‘অঁ ঠিকই কঁইছেন আঁপনি? আঁগামাথা কিঁছুই বুঝতেছেন না? চোঁখ দুটি বন্ধ করেন। আঁগামাথা বুঁঝাই। চৈতির বাবা কথামতো বন্ধ করলেন চোখ। একটু পরেই লোকটি ধীরে ধীরে বললো, এঁবার চোখ খুলুন। চৈতির বাবা চোখ খুলেই ‘ওরে আল্লারে’ বলে খাট থেকে উপুড় হয়ে পড়ে গেলেন মাটিতে।

চৈতির মা’র ঘুম ভেঙে গেলো। হয়য় হায়! এ কি অবস্থা কী হয়েছে আপনার, এসব বলে কেঁদে কেঁদে চৈতির বাবাকে টেনে তুললেন খাটে।
চৈতির বাবা বললেন, পানি দেও। পানি খেয়ে তিনি ঝিমুতে লাগলেন। ঘুম থেকে উঠে পড়লো চৈতি। সে কান্না শুরু করে দিলো। তার ছোট ভাইটি উঠেও দেখাদেখি কাঁদতে লাগলো। গভীর রাতে এ বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেলো। ছায়ালোকটি বললো, ‘চৈঁতির বাঁপ শোন, তোঁর মতো আঁমার দুটি বাঁচ্চা আঁছে। নঁইলে খাঁমছি মেঁরে তোঁর শরীর থেঁকে রক্ত বেঁর কঁরে ফেঁলতাম আঁর সেঁই রক্ত দিয়ে ঘরটা রং কঁরতাম। সঁকাল আঁটটার আঁগে বাঁড়ি ছেঁড়ে চলে যাঁবি। গেলাম। ’ -বলেই শোঁ করে চলে গেলো লোকটি।  
ভয়ে সবার কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো। কোনো রা-শব্দ নেই। সকাল বেলা। চৈতিরা বাড়িটা ছেড়ে চলে আসছে। সবারই মন খুব খারাপ। এমন সময় গাছ থেকে লাফিয়ে পড়ল দু’টি শিশু। তারা ছুটে এসে চৈতির হাত ধরে বললো, কঁই যাঁও তোঁমরা? যেঁতে দেঁব না তোঁমাদের। চৈতি বলল, তোমরা কে এভাবে আমাদের থাকতে বলছো? এখানে থাকলে আমরা ভয়ে মরে যাবো। একটা লোক এসে আমাদের চলে যেতে বলেছে।  

থাকলেই বিপদে পড়ে যাবো আমরা। শিশু দুটি বললো, এঁটা আঁমাদের বাঁড়ি। আঁমার বাঁবা খুঁব খাঁরাপ। তোঁমাদের চঁলে যেঁতে বঁলেছে বুঁঝি? কিন্তু আঁমরা তোঁমাদের যেঁতে দেঁব না। তোঁমরা হঁবে আমাদের খেঁলার সাঁথী। বাঁবা যঁদি কিঁছু বঁলে সেঁটা আঁমরা দেঁখব। তোঁমরা অবঁশ্যই থাঁকবে এ বাঁড়িতে। তোঁমরা হঁবে আঁমাদের চঁমৎকার বন্ধু।  

চৈতিরা থাকতে লাগলো বাড়িটিতে। দিনে দিনে খুব বন্ধু হয়ে গেলো ভূতের বাচ্চা দু’টি। একসঙ্গে খেলে আর আনন্দ করে। চৈতির অনেক বুদ্ধি আছে। সে ভূতের বাচ্চাদের গল্প আর ছড়া শোনায়। ভূতের বাচ্চা দুটি আনন্দে লাফালাফি করে বলে, আরও বলো, আরও শুনবো। চৈতি এদের লেখাপড়া শেখাতে লাগলো। এরা মানুষের রূপ ধরে স্কুলে যায় আর পড়ালেখা করে। এভাবে ভূতেদের সঙ্গে চৈতিদের বেজায় খাতির হয়ে গেল। তাই তাদের আর কোনো ভয় নেই। বাড়িতে চোর-ডাকাত আসতে পারে না। কি মজা!

চৈতি আমাকে প্রায়ই কানে কানে বলে, দেখিস সুমা, ভূতকে আমি মানুষ করে ছাড়বো। আমি চোখ বড় করে বলি, ‘তুই কি পাগল হয়েছিস নাকি, ভূত আবার মানুষ হয় ক্যামনে?’ 

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।