ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বৃক্ষ ও পাখিবন্ধু | হাসনা হেনা

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৮
বৃক্ষ ও পাখিবন্ধু | হাসনা হেনা প্রতীকী ছবি

আমাদের গাঁয়ের নাম কুসুমপুর। গাঁয়ের পাশ ঘেঁষে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে এক শান্ত নদী। সবুজ গাছগাছালি আর ফসলের মাঠ দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। গাছে গাছে কত্তো রকম পাখি। ভোরবেলা পাখির ডাক শুনে শুনে রোজ ঘুম ভাঙে আমাদের। আমার মা বলেন সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। 

দাদু প্রতিদিন ভোরে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হন। আমিও খুব ভোরে উঠে দাদুর সঙ্গে হাঁটতে যাই।

হাঁটতে হাঁটতে দাদু রাস্তার পাশের গাছগুলোর সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। দাদু খুব বৃক্ষপ্রেমী মানুষ। দাদুর একটি ফুল, ফলের বাগান আছে। বাগানের গাছে গাছে কত রকম পাখি আসে। ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ায় নানা রঙের প্রজাপতি! দেখতে কি যে ভালো লাগে আমার।

বাগানের সবগুলো গাছ দাদু নিজ হাতে লাগিয়েছেন। কোন গাছটা ক'বছর আগে লাগিয়েছেন দাদুর দিব্যি মনে আছে! দাদু নিজ হাতে বাগানের গাছের যত্ন নেন। আমিও দাদুকে মাঝে মধ্যে বাগানের কাজে সাহায্য করি। এতে দাদু খুব খুশি হন। মা বলেন মুরুব্বিদের কাজে সাহায্য করলে অনেক নেকি পাওয়া যায়। দাদু সবসময় বলেন- গাছ হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। বাগানের গাছগুলো সন্তানের মতই। ওদের খুব যত্নে বড় করেছি দাদুভাই।

আর গাছ আছে বলেই আমরা শান্তিতে নিশ্বাস নিয়ে বেঁচে আছি। গাছ আছে বলেই এত পাখি আছে। পাখিরা ভোরবেলায কেমন মিষ্টি সুরে কূজন করে আমাদের ঘুম ভাঙায়। কিচির মিচির করে মুখর করে রাখে চারপাশটা। গাছ না থাকলে পাখিরাও থাকবে না।  

একদিন সকালে হাঁটতে গিয়ে বাগানের লিচুগাছ তলায় একটি পাখিছানাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখলাম। পাখিছানাটি এখনও ভালো করে উড়তে শেখেনি। দেখে আমার খুব মায়া হলো, তাই হাতে তুলে নিয়ে আদর করলাম। দাদুকে বললাম- আমি পাখিছানাটি পুষবো। আমাকে একটি খাঁচা কিনে দেবে দাদু? 
দাদু বললেন উপরের দিকে তাকিয়ে দেখো, মা পাখিটা তার ছানার জন্য কেমন ছটফট করছে! আমি উপরে তাকিয়ে দেখলাম সত্যিই তো- মা পাখিটা কিচির মিচির করে এ-ডাল ও-ডাল উড়ে উড়ে ছটফট করছে।  

দাদু বললেন - 
শোন দাদুভাই তোমাকে যদি তোমার মায়ের কাছ থেকে কেউ ছিনিয়ে নিয়ে খাঁচায় বন্দি করে রাখে তাহলে তোমার কেমন লাগবে?
আমি ও মামণি দু’জনেই খুব কষ্ট পাবো।  
বোঝ তাহলে পাখিছানাটিকে ওর মার কাছ থেকে আলাদা করলে ওর আর ওর মায়ের কেমন লাগবে?
জানো দাদুভাই! পাখিদের খুব প্রিয় ওই মুক্ত আকাশ, ওরা যখন যেখানে ইচ্ছে উড়ে বেড়ায়। দাদু পাখিছানাটিকে গাছের ডালের মাঝখানটায় বসিয়ে রাখলেন। আমি আর দাদু কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালাম। মা পাখিটা কিছুক্ষণের মধ্যেই ছুঁ মেরে ঠোঁটে করে ছানাটিকে নিজের বাসায় নিয়ে গিয়ে ডানার উষ্ণতায় জড়িয়ে রাখলো। দাদু বললেন দেখছো দাদুভাই মায়ের ডানার উষ্ণতা পেয়ে ছানাটি কেমন চুপ হয়ে গেছে। আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম। ঠিক আমার মতই, মামণি বুকে টেনে নিলে আমিও অমন চুপটি করে থাকি।

স্কুলের পথে প্রতিদিন কয়েকজন ছেলেকে দেখি গাছের ডাল দিয়ে গুলতি বানিয়ে গুলতি নিয়ে সারাদিন ঝোপঝাড়ে পাখি খুঁজে বেড়ায়। আমি আর আমার বন্ধু অভি ওদের ডেকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম পাখি শিকার করা ভালো নয়। ওদেরও জীবন আছে, গায়ে পাথর লাগলে ওরাও আমাদের মতই ব্যথা পায়। কিন্তু ওই ছেলেগুলো কিছুতেই বুঝতে চাইলো না। আমরা দাঁড়ানো থাকতেই গুলতি দিয়ে পাখির শরীরে পাথর ছুড়লো। পাখির পাশ ঘেঁষে পাথরটি চলে গেলো আর পাখিটি ভয়ে পালিয়ে গেলো।

আরেকটু দূরেই একটি গাছে দুইটি ঘুঘু বসেছিল। গুলতি দিয়ে পাথর ছুড়তেই একটি ঘুঘুর পায়ের দিকটায় লাগলো। ঘুঘুটি গাছের ডাল থেকে ছিটকে মাটিতে পড়ে গেলো। ছেলেগুলো তখন খুশিতে লাফাচ্ছিলো! ঘুঘুর পা থেকে রক্ত বের হচ্ছে, মনেহয় পা ভেঙে গেছে। আমার ভীষণ মায়া হলো। এগিয়ে গিয়ে ঘুঘুটিকে ধরতে চাইলাম। তার আগেই ছেলেগুলো ঘুঘুটিকে তুলে নিয়ে দৌড়ে পালালো।
 
বাবা আজ বিকেলের ট্রেনে বাড়ি আসবেন। আমার জন্য এই দিনটি  ছয়দিন অপেক্ষার পর আসে। বাবা শহরে চাকরি করেন। পুরো সপ্তাহের পড়াশোনার খোঁজ-খবর নেবেন আজ। ক্লাসওয়ার্ক ও হোমওয়ার্কের সবগুলো খাতা পৃষ্ঠা পৃষ্ঠা করে উল্টিয়ে দেখবেন। বাবাকে এবার বলে দিয়েছি বাড়ি আসার সময় আমার জন্য বেশ কিছু গল্প আর ছড়ার বই নিয়ে আসতে। সাথে একটা পাখি পরিচিতির বই যেন অবশ্যই থাকে।

আমাদের দেশে কত রকমের পাখি আছে সব পাখি আমি চিনি না। বই পড়লে সব পাখি সম্পর্কে জানতে পারবো চিনতে পারবো। দাদু বলেন বেশি বেশি বই পড়লে জ্ঞান বাড়ে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।