তুমি হলে ঝরে পড়া একশ উনিশতম পাতা। মানে তোমার আগে আরো একশ আঠারোটি পাতা এখানে পড়ে আছে।
এভাবে ঝরে পড়া পাতাদের গুনে লাভ কী ভাই। এতদিন আমরা গাছের খাদ্য যুগিয়ে দিয়েছি, ছায়া দিয়েছি। আর দিয়েছি শীতল ছায়া। কতভাবে অন্যের উপকার করেছি।
আর এখন পড়ে আছি মাটিতে। কারোর উপকারে আসতে না পারলে জীবনের কোনো মূল্য থাকে না। এ আমার অনেক বড় কষ্ট!’ বললো পাতাটি।
সংখ্যা গণনাকারী পাতাটি বললো, আহা, আমরা কারো না কারো উপকারে আসতেও তো পারি। ’
সেটা কীভাবে, একটু খোলাসা করে বলতো ভাই। আমি অলস পড়ে থাকতে পারবো না, বললো পাতাটি।
‘শোনো, প্রতিদিন সকালে একটি ছোট মেয়ে টুকরি আর ঝাড়ু নিয়ে এখানে আসে। মেয়েটি গাছের তলায় পড়ে থাকা পাতাগুলো টুকরিতে ভরে নিয়ে যায় বাড়ি। সে আবার সকালে আসবে। তখন আমরা চলে যাবো মেয়েটির বাড়ি। তার কোনো না কোনো কাজে লাগবো আমরা। দারুণ মজা হবে তখন!’ খুশি হয়ে বললো পাতাটি।
‘আচ্ছা আমরা তার কী কাজে লাগতে পারি?’
‘মেয়েটি শুকনো পাতা নিয়ে চুলোয় দেয়। সেই আগুনে তাদের রান্নাবান্নার কাজ চলে। ছাইগুলো জমিতে ফেলে। আর তাতে জমি উর্বর হয়, ফসল ফলে ভালো। কত বড় উপকার হয়, এটা কী কম কথা?’
‘তাইতো! নিজেকে পুড়ে অন্যের উপকার করা যাবে। চমৎকার। এখন আমার খুব ভালো লাগছে। তবে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করটা খুব কষ্টের, তাই না? শুকনো পাতাটি অপেক্ষায় থাকার কষ্ট কমানের জন্য গান গেয়ে উঠলো-
বসে আছি অপেক্ষায়, চুলোয় যাবো ভাই
ধন্য হবে জীবন আমার যখন হবো ছাই।
সকালে ছোট মেয়েটি এলো। সে ঝাট দিয়ে গাছের পাতাগুলো টুকরিতে ভরে নিয়ে চলে গেলো। মেয়েটির উঠোনে অনেক পাতা চুলোয় যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। পাতাটি খুশিতে টগবগিয়ে গানের সুরে বলতে লাগলো-
সবার আগে আমি যাবো, আমার অনেক তাড়া
পেছন থেকে সামনে গেলে হবে না সুযোগ হারা।
এই বলে পাতাটি এঁকেবেঁকে অন্য পাতাদের ঠেলে ঠেলে আগে যেতে লাগলো।
এ কেমন আচরণ তোমার? বলে অন্য পাতারা শক্ত হয়ে দাঁড়ালো। আমরা তোমার আগে থেকে অপেক্ষা করছি। একটু সবুর কর না ভাই। ধীরে ধীরে অন্য পাতারা চলে গেলো চুলোয়।
কিন্তু সেই পাতাটি যাওয়ার আগে মনের আনন্দে গান ধরেছে-
ধন্য আমার জীবনখানি যাচ্ছি এখন চুলোয়
নইলে আমি হারিয়ে যেতাম পথের মলিন ধুলোয়।
গাছের সবুজ পাতারা সব বলছে আসি আসি
জীবন দিয়ে সবার মুখে, ফুটিয়ে যাবো হাসি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২০
এএ