ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

টুই-টুই আর পিক-পিক | বিএম বরকতউল্লাহ্

241 | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২০
টুই-টুই আর পিক-পিক | বিএম বরকতউল্লাহ্

টুই-টুই পাখিটি আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। একটি পাখির দেখা পেয়েছে সে। ওই যে গাছের চিকন ডালে বসে আছে পাখিটা। সে মনে মনে বলে, ‘পাখিটা মনে হয় আমার মতোই একা। আমি যাই না কেন তার কাছে।’ সে পাখিটার কাছে গিয়ে মুখ বাড়িয়ে বললো, ‘ভাই পিক-পিক তোমার কি মন খারাপ, নাকি আমার মতো একা তুমি?’

‘পথ হারিয়ে এই বনে এসে পড়েছি, এখানে কোনো পাখি দেখছি না, আমি খুবই একা। কিছুই ভালো লাগছে না আমার, বিরান ভূমির মতো লাগছে বনটা।

’ চিন্তিত মুখে বললো পিক-পিক পাখিটি।

‘আমিও তো তোমার মতোই একা! তোমাকে পেয়ে আমার মন ভালো হয়ে গেছে। আমরা দু’জনে মিলেমিশে খুব থাকতে পারবো এই বনে। কী বলো পিক-পিক?’ হাসিমুখে বললো টুই টুই।  

‘মিলেমিশে থাকতে পারবো মানে? তুমি এক জাতের পাখি আর আমি আরেক জাতের পাখি,’ বললো পিক-পিক। ‘দুই জাতের দুটি পাখি কি একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারে? এটাও কি সম্ভব?’ 

‘কেন সম্ভব নয়। হতে পারে আমরা দুই জন দুই জাতের পাখি, তাতে কী,’ বললো টুই-টুই। ‘এখানে আছে অনেক বিষাক্ত সাপ আর হিংস্র পশু। একা থাকা মানেই তো নিজেকে বিপদ আর কষ্টের মাঝে ঠেলে দেওয়া। আর মিলেমিশে থাকা মানে আনন্দে আর নিরাপদে থাকা। আমরা তো চমৎকার বন্ধু হতে পারি, কী বলো পিক-পিক?’ বললো টুই-টুই।  

‘বন্ধু!’ অবাক হয়ে বললো পিক-পিক। ‘তুমি দেখতে আমার চেয়ে অনেক সুন্দর। তোমার গায়ের রং, পাখা, ঠোঁট, পা ও পুচ্ছ যেমন রঙিন তেমন সুন্দর। দেখো, তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার মতো কোনো রং নেই আমার। ’  

‘মিলেমিশে থাকার জন্য বাইরের রং কোনো বাধা নয়। মনের রংটাই হলো আসল। ’ বলল টুই-টুই। ‘আমরা পাখি, ব্যস এটাই বড় কথা। খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। তর্ক না করে চলো পেট ঠাণ্ডা করি আগে। তারপর অন্য কথা। ’ পিক-পিক কোনো জবাব না করে টুই-টুই পাখির পিছু পিছু উড়ে চলে গেলো খাবারের সন্ধানে।  

টুই-টুই পাখির সঙ্গে পিক-পিক পাখির খাতির হয়ে গেলো। তারা সারাদিন একসঙ্গে থাকে আর গল্প করে। আনন্দে ছোটাছুটি করে। গাছের মগডালে খুব সুন্দর বাসা বানিয়েছে তারা। কিছুদিন পর ডিম পেড়েছে পিক-পিক। ডিম ফুটে ফুটফুটে দু’টি বাচ্চা বেরিয়ে এলো। আনন্দের আর সীমা নেই। তাদের মনে হলো গোটা বনটাই একটা আনন্দভূমি।

দুই.
কিছুদিন পরে অসংখ্য পাখি এসেছে বনে। পাখিদের দলে টুই-টুই আর পিক-পিক জাতের অনেক পাখিও রয়েছে। ওরা বাসা বেঁধেছে। সারাদিন বনে ঘুরে বেড়ায়, খাবার খায় আর সন্ধ্যা হলেই তারা ফিরে যায় নিজ নিজ বাসায়। পাখিদের কলরবে বন উত্তাল।  

একদিন টুই-টুই পাখিকে তার জাতের পাখিরা বলে, ‘জাতপাত বলতে কিচ্ছু মানো না তুমি? পিক-পিকের মতো অসুন্দর ও অন্যজাতের একটা পাখির সঙ্গে কি তোমার বন্ধুত্ব হতে পারে? আমাদের রূপের সঙ্গে তাদের কোনো তুলনা হয়, ছিঃ টুই টুই ছিঃ। ’

‘এত ছিঃ ছিঃ করছ কেনো? আমরা পাখি। এটাই তো বড় পরিচয়’, জবাব দিল টুই-টুই। ‘আর আমাদের মিলেমিশে থাকার পেছনে সেই পরিচয়টাই বেছে নিয়েছি আমরা। আমাদের মনে কোনো দুঃখ নেই। দেখতেই পাচ্ছ আমরা কত ভালো আছি। ’

পিক-পিককে তার জাতের পাখিরা এসে বলে, টুই-টুই আমাদের চেয়ে সুন্দর পাখি বলে তাদের বড় অহংকার। কদিন পরেই না তোমাকে ঘৃণাভরে তাড়িয়ে দেবে টুই-টুই। এটা কি আমাদের জন্য অপমানের বিষয়  না?’ 

‘এই গভীর বনে ভয়ংকর বিপদে আমরা জাতপাত ভুলে নিজেদের শুধু পাখি ভেবেছি। আমাদের এখন কোনো কষ্ট নেই। দেখতেই পাচ্ছ, কত সুখে আছি আমরা। ’ বললো পিক পিক পাখিটি।

টুই-টুই আর পিক-পিকের মুখে এই কথা শুনে তাদের দলের পাখিদের খুব রাগ করার কথা। কিন্তু রাগ করলো না কেউ।  

দলের এক বুড়ো পাখি আফসোস করে বলে, ‘আমরা ওই দুই জাতের দুটি পাখির মতো সুখী হতে পারি যদি না আমরা ‘জাত আর রং’ ভুলে নিজেদের শুধু পাখি ভাবতে পারি। ’ বুড়ো পাখির কথায় সবাই খুশি হয়ে গেলো। দুই জাতের পাখিরা আনন্দে হই হই করে টুই-টুই আর পিক-পিক পাখিকে বরণ করে নিল এবং সবাই সুর করে গেয়ে উঠলো:

‘জাত-পাত মানি না, আমরা সবাই এক
জাত ভুলে টুই-পিক সুখে আছে দেখ...। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।