মাঠের পাখি ধুলোচাটা। তবে বালুচাটা, ধুলোচাটা, বাগেরহাটে মেঠাচড়ুই নামেও পরিচিত।
ইংরেজি নাম Ashy-Crowned Sparrow Lark. ইংরেজি নাম থেকেই বোঝা যায় দেখতে এরা চড়ুই বা ভরত পাখির মতো।
স্বভাবেও তাই। বৈজ্ঞানিক নাম Eremopterix grisea. শরীরের মাপ ১২-১৪ সেন্টিমিটার। মেয়ে পাখিটা আকারে একটু ছোট।
শরৎ-হেমন্তে যখন উইপোকা বা ডানাওয়ালা পিঁপড়েরা মাটি থেকে আকাশে উড়তে তাকে তখন নানা ধরনের পোকাখেকো পাখির সঙ্গে সুযোগ পেলে ধুলোচাটারাও উইপোকা ধরে। আবার নাড়াবনে আগুন দিলে বা ধানক্ষেতে আগুন লাগলে ধান পুড়ে খই ছিটকালে ছুটে আসে বহু পাখি। এর মধ্যে থাকে ধুলোচাটাও।
ধুলোচাটার খাদ্যতালিকায় রয়েছে কচি ঘাসের ডগা, বীজ, ধান, ডাল, গম, কাউন, চিনাবাদাম, সরিষা, কেঁচো, ফড়িংসহ নানান রকম পোকামাকড়।
শীত ও বর্ষা বাদে যে কোনো ঋতুতে এরা বাসা বাঁধে। বাসা বাঁধে খোলা মাঠে গর্ত জায়গায়। মাঠের ঝোপঝাড়, উলুঘাসের বন বা অন্য মেঠো উদ্ভিদ এড়িয়েই বাসা করে। এরা যেমন ধুলোমাটির সঙ্গে মিলেমিশে গা ঢাকা দিতে জানে, তেমনি এদের বাসা-ডিমও খোলা মাঠে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে গরু-ছাগল বা মানুষের পায়ের নিচে পড়ে অনেক সময় এদের ডিম নষ্ট হয়। বিভিন্ন প্রাণীর কবলেও পড়ে কখনো-সখনো। বাধা বাঁধার সময় খেয়াল রাখে যেন নীলকণ্ঠ ও হট্টিটির সাহায্য পাওয়া যায়। কারণ চেঁচামেচি ও শত্রু তাড়ানোয় এরাই সেরা।
দুজন মিলে বাসা নির্বাচনে সময় নেয় দুই থেকে চারদিন। বাঁধে ৩-৫ দিনে। বাসার মূল উপকরণ গরুর লেজের চুল, মেঠো মাকড়সার জাল, সুতোর মতো চিকন ঘাস, পাটের আঁশ, অন্য পাখির পালক ও নরম উদ্ভিদ। শোলার টুকরো, শামুকের খোল, ঢিল এসব বাসার চারপাশে রাখে আড়াল করার জন্য।
ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিমের রং সবুজ, তাতে হলদেটে আভা থাকে। এর মধ্যে থাকে অসংখ্য ছিটফোট। ডিমের আকার চড়ুইয়ের ডিমের মতো। বাচ্চা ফোটে ১১-১৩ দিনে। উড়তে শেখেও ১১-১৩ দিনে। তার আগে বাচ্চারা বাবা-মায়ের পেছনে হেঁটে বেড়ায়, মুখ থেকে খাবার খায়। মাসখানেকেই বাচ্চারা স্বাবলম্বী হয়ে যায়।
বাংলাদেশের সব এলাকাতেই এদের পাওয়া যায়। ধুলোময় মাঠ এদের প্রিয় জায়গা।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের পাখি, শরীফ খান
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২২
এসআই