ওয়াফরা (কুয়েত) থেকে: কারণে অকারণে কারো ওপর রাগ বা বিরক্ত হলে অথবা কাউকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে হরমাশেই আমরা ‘গাধা’ সম্বোধন ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু পরোপরকারী প্রাণী হিসেবে গাধা সত্যিই অনন্য।
কুয়েতের সীমান্তবর্তী বিস্তৃর্ণ মরুভূমিতে গাধা নিয়েই কারবার আদম আলীর (৪৮)। তার মূল কাজ দুম্বার খামারে। তবে সহকারী হিসেবে গাধার কোনো বিকল্প নেই তার। একটি গাধাই ৫ জন মানুষের সমান কাজ করে দেয়।
কখনো কখনো নিরীহ প্রাণীটির প্রতি পরম কৃতজ্ঞতায় মন ভরে আসে আদম আলীর। অলস সময়ে পরম যত্নে গাধার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন তিনি। গাধার মতোই পরিশ্রম করতে হয় তাকেও। মরুর বুকে নিরীহ প্রাণীটির সঙ্গে নিজের খুব একটা তফাৎ খুঁজে পান না মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের আদম আলী!
![](files/August2015/August31/Inner_1_559783370.jpg)
কুয়েতি মালিকদের কাছে গাধা আর আদম আলীর কাজের গুরুত্ব পরিপূরক। দুম্বার খামারগুলোতে শৃঙ্খলা আনতে যদি কারও নাম আগে মনে করতে হয়, তবে তা এই গাধা!
কীভাবে? সে কথায় পরে আসছি।
ওয়াফরা যাবার পথে বিস্তৃর্ণ মরুর বুকে দূর থেকে হঠাৎ চোখে পড়ে দু’একটি ঘর-বাড়ি। এ যেন চলন্ত বাড়ি! যাকে বলে ক্যারাভ্যান। এর পাশেই পাইপের বেষ্টনী, তার মাঝে দুম্বার অস্থায়ী খামার। এসব খামারেই কাজ করেন বহু বাংলাদেশি।
![](files/Inner_3_966925919.jpg)
বেতন ৬০ কেডি (কুয়েতি দিনার) থেকে ১শ’ কেডি পর্যন্ত। বাংলাদেশি টাকায় ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার। শ্রমঘণ্টার বালাই নেই। দুম্বার দেখভাল, মলমূত্র পরিষ্কার করা ও খাবার পরিবেশন, সবকিছুই করতে হয় প্রবাসী এই শ্রমিকদের।
মানুষ আর গাধার সহাবস্থান দেখে খটকা লাগে! মরুর বুকে গাধা কেন?
‘আরে ভাই ওতো (গাধা) আমাগো আপনজন। আমাগো বন্ধু। আমাগো লগেই কাজ করে। ’- পাশে থাকা গাধাকে দেখিয়ে এমনটাই বলছিলেন আদম আলী।
![](files/Inner_4_331338162.jpg)
বেচারা গাধা তখন দূরে দাঁড়িয়ে বিশ্রামে। তার অদূরে দুম্বার পাল।
কুয়েতি মালিকদের এইসব দুম্বার খামার মূলত অস্থায়ী। বেদুঈনদের মতোই মরুভূমির এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিয়ে যেতে হয় এই দুম্বার পাল।
বন্ধু হিসেবে গাধার ভূমিকা! কৌতূহল চাপা রাখতে পারলাম না।
‘আসলে একটি গাধাই আমাদের ৫ জনের কাজ করে দেয়। মরুর বুকে দুম্বার দল পথ হারিয়ে দিগ্বিদিক চলে যায়। তীব্র গরমে তখন দুম্বার পালের পেছনে ছুটতে ছুটতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। তপ্ত মরুর বুকে কতক্ষণ আর গাধার পেছন ছোটা যায়! ঠিক তখনই এই গাধা দুম্বার পালকে দাবড়ে একত্রে খোঁয়াড়ে ঠেলে দেয়’- যোগ করেন আদম আলী।
![](files/donkey_912801465.jpg)
আদম আলীর সঙ্গে কাজ করেন ঝালকাঠির জাকির হোসেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘দেশে থাকতে কত মাইনষেরে গাধা কইতাম। অখন মনে হয় মরুভূতিতে আমরা যে কাজ করি তা গাধার মতোই। এই গাধাই আমাগো আপনজন! বন্ধুর মতোন। কত যে উপকারী! বেয়াড়া দুম্বা এদিক-ওদিক গেলে তাদের খুঁজে বের করে এই গাধা। ’
দুম্বার পাল নিয়ন্ত্রণের আশ্চর্য ক্ষমতা আছে গাধার। আর তা আছে বলেই ‘মরুভূমির বুকে কাজ করে টিকে আছি’ বলে জাকির হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
এমজেএফ/
** ট্যাক্স ফ্রি’র স্বর্গরাজ্যে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ
** আরব্য রজনীর আরেক উপাখ্যান ওফা-সেলিমের প্রেম!
** বাংলাদেশকে বদলে দিতে চান কুয়েতের ‘প্রিন্স’
** মরুতেও খাঁটি, দেশেই বিষ
** দিওয়ানিয়ায় দিওয়ানা
** তপ্ত মরুতে বাংলার আর্তনাদ
** রাজনীতিতেই যত সুখ!
** কুয়েতে ‘অ, আ, ক, খ’
** ‘ডাখা মাত্রই ফাওয়া যায়’
** ‘পচা’ শব্দটাই নিষিদ্ধ যেখানে