সিলেট: একে একে গড়িয়েছে ১৭ বছরেরও বেশি। ২০২৩ সালের ২৭ জানুয়ারিতে সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার দেড়যুগ হবে।
এরই মধ্যে এ হত্যা মামলায় ৩২৭ কার্যদিবস পার হয়েছে। আর বিস্ফোরক মামলায় ৭৩ কার্য দিবস। কিন্তু মামলা দুটির কিনারা হয়নি এখনো। কবে নাগাদ মামলার বিচার শেষ হবে, তাও জানে না কেউ। শুধু সাক্ষীর অভাবেই এভাবে দেড়যুগ ঝুলে আছে এ দুটি মামলা।
আদালত সূত্র জানায়, হত্যা মামলায় ১৭১ সাক্ষীর মধ্যে ৩২৭ কার্যদিবসে মাত্র ৪৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হয়েছে। আর বিস্ফোরক মামলায় ১৯৮ জনের মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ১১ জন।
ইতোমধ্যে হত্যা মামলায় ২০ সাক্ষীর নামে সমন ও ওয়ারেন্ট পাঠানো হয়েছে। আর বিস্ফোরক মামলায় ১২ জনের নামে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও ওয়ারেন্ট জারি করা হয়। এরমধ্যে ৪ জনের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা, ৫ জনের নামে জামিন অযোগ্য ওয়ারেন্ট, ২ জনকে সমন, ১ জনকে আংশিক জবানবন্দি দিয়ে পরে আর হাজির না হওয়ায় তার নামেও জামিন অযোগ্য ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী জয়নাল আবেদীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে আদালতের বিচারক বদলি হয়েছেন কয়েক দফা। পরিবর্তন হয়েছেন সরকারি পিপিও। সাক্ষীদের অনেকে মারাও গেছেন। কিন্তু মামলা দুটির কোনো কিনারা হয়নি। হত্যাকাণ্ডের শিকার কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়াও মামলার বিচার দেখে যেতে পারেননি।
মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ দুই মামলায় হাজিরা দেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের মেয়র জি কে গৌছসহ ৯ আসামি। আর ৫ জন আসামি আদালতে হাজির হতে না পেরে সময় চেয়ে দরখাস্ত দেন। কিন্তু সাক্ষিরা কেউ হাজির হননি এবং আসামিদের অনুপস্থিতির কারণে এদিনও সাক্ষ্য গ্রহণ সম্ভব হয়নি।
আদালতের পিপি সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল বাংলানিউজকে বলেন, মেয়র আরিফ, জিকে গৌছ ও জঙ্গীসহ ৯ আসামি উপস্থিত ছিলেন। কেবল লুৎফুজ্জামান বাবরকে উচ্চ আাদালতের নির্দেশে উপস্থিত করা হয়নি। এছাড়া ৫ জন হাজির না হয়ে সময় প্রার্থনা করেছেন। ফলে মামলার পরবর্তী তারিখ ১৫ জানুয়ারি ধার্য করা হয়েছে।
মামলার বিচারকার্য প্রলম্বিত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরাতো সাক্ষী হাজির হলে সাক্ষ্য নিচ্ছি। সাক্ষীদের হাজির করতে ওয়ারেন্টও দিচ্ছি। পাশাপাশি সাক্ষীদের হাজির করতে সংশ্লিষ্ট থানার সঙ্গেও আলাপ অব্যাহত আছে। যতদ্রুত যাতে সাক্ষ্য নেওয়া যায়, আমরা সেই চেষ্টায় আছি।
এ বিষয়ে কিবরিয়া হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা দুটির বাদী আব্দুল মজিদ খান এমপির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
যদিও এর আগে তিনি বাংলানিউজকে বলেছিলেন, বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বের মূল কারণ ধার্য্য তারিখে আসামি ও সাক্ষিদের অনুপস্থিতি। তবে বিলম্বের কারণে মামলার বিচারকার্য ব্যাহত হওয়ার সুযোগ নেই।
২০০৫ সালর ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজলার বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভা শেষে ফেরার পথে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ ৫ জন।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলা তিন দফা তদন্ত করে সিআইডি। ২০০৫ সালে ১৮ মার্চ প্রথম দফায় শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি অভিযোগপত্র দেয় তারা। এর বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেন বাদী মজিদ খান। ২০০৭ সালে মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য আবারো সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এরপর ২০১১ সালের ২০ জুন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, মুফতি হান্নানসহ ২৪ জনকে আসামি করে অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ওই বছরের ২৮ জুন শাহ এএমএস কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া সেই অভিযোগপত্রের ওপরও নারাজি আবেদন করেন।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর সিআইডি সিলেট রেঞ্জের সিনিয়র এএসপি মেহেরুন নেছা পারুল সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এছাড়া ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় (নং-২৩/০৫)২৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠনের পর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
হত্যা মামলায় পলাতক রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, মোহাম্মদ আলী, বদরুল ওরফে মো. বদরুল, আলহাজ্ব মাওলানা তাজ উদ্দিন ও মো. মুহিবুর রহমান।
আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, মিজানুর রহমান মিটু, হাফেজ সৈয়দ নাঈম আহমদ আরিফ প্রকাশ নিমু, বদরুল আলম মিজান, মাওলানা শেখ ফরিদ আহমদ, আব্দুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট, মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, মুহিবুল্লাহ ওরফে মুজিবুর রহমান প্রকাশ অভি ও মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম।
এছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জিকে গৌছসহ ১২ জন জামিনে আছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২২
এনইউ/এমএমজেড