ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

মিছিল-স্লোগানে উত্তাল আদালত প্রাঙ্গণ, এজলাসেও হট্টগোল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২২
মিছিল-স্লোগানে উত্তাল আদালত প্রাঙ্গণ, এজলাসেও হট্টগোল

ঢাকা: রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে গ্রেফতার বিএনপির প্রায় পাঁচশত নেতাকর্মীকে হাজির করা হয় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। তাদের আদালতে আনাকে কেন্দ্র করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মিছিল-স্লোগানে বৃহস্পতিবার (০৮ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তাল ছিল সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণ।

যার প্রভাব ছিল এজলাসেও। রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যের সময় এজলাস কক্ষে হয় হট্টগোল।

নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন ও মতিঝিল থানার দুই মামলায় ৪৭০ নেতাকর্মীকে আদালতে আনা হয়। দুপুর ১২টার পর থেকে বিকেল ৪টার পর পর্যন্ত প্রিজন ভ্যানে করে এসব নেতাকর্মীকে হাজির করা হয় ঢাকার সিএমএম আদালতে। এ সময় সিএমএম আদালতের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তাদের মুহুর্মুহু স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে আদালত প্রাঙ্গণ।

দুপুর ২টার দিকে আইনজীবীদের মিছিলের মাঝ থেকে বিএনপির এক কর্মীকে আটকের চেষ্টা করা হলে পুলিশের সঙ্গে হালকা ধস্তাধস্তি হয়। পরে ওই কর্মীকে পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেন আইনজীবীরা। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকার মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু এবং ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান হাওলাদারের নেতৃত্বে আওয়ামীপন্থী ২০/২৫ জন আইনজীবী সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে পৃথকভাবে অবস্থান নেন। তবে আধঘণ্টার মতো অবস্থান করে তারা সেখান থেকে চলে যান।

এ সময় সিএমএম আদালতের দুই পাশের গেটে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর মধ্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের বহনকারী প্রিজনভ্যানও কিছুক্ষণ পরপর কোর্ট হাজতে প্রবেশ করে। প্রিজনভ্যান দেখে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আরও উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। প্রিজনভ্যানের ভেতর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরাও আইনজীবীদের সঙ্গে স্লোগানে অংশ নেন।

এই অবস্থার মধ্যে সন্ধ্যা ৬টার দিকে পল্টন ও মতিঝিল থানার দুই মামলায় ২৪ আসামিকে রিমান্ড শুনানির জন্য সিএমএম আদালতের দ্বিতীয় তলার এজলাস কক্ষে ওঠানো হয়। এ সময় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। এজলাস কক্ষে এ সময় প্রায় দুইশর মতো আইনজীবী ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুরুতে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, এই আসামিরা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের ওপর হামলা করেনে। এ সময় নয়াপল্টনের কার্যালয় থেকে বোমা, লাঠিসোঁটা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার ইন্ধনদাতা ও ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে আসামিদের তদন্ত কর্মকর্তার চাওয়া ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।

এরপর আসামিপক্ষে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার এই ২৪ আসামির পক্ষে রিমান্ড বাতিল পূর্বক জামিন এবং অন্য প্রায় সাড়ে ৪শ আসামির পক্ষে জামিন শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মিছিল-মিটিং করা সাংবিধানিক অধিকার। তেলের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে সারা দেশে বিএনপি সমাবেশ করেছে, কোথাও কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ঢাকায় সমাবেশের ক্ষেত্রে তারা বলছেন সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই পুলিশ হঠাৎ অতর্কিতভাবে নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ ও গুলি চালায়। যেখানে একজন মারাও যান। বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে যে তাণ্ডব চালানো হয়, তা মিডিয়ার মাধ্যমে সমস্ত দেশবাসী দেখেছে।

তখন শুনানিতে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে আপত্তি তোলেন মহানগর পিপি। এ সময় হট্টগোল শুরু করেন উপস্থিত বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তারা বলেন, মামলাই তো রাজনৈতিক কারণে…। এ সময়ে অনেকে রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে ‘শেইম শেইম’ ধ্বনিও দিতে থাকেন।

এরপর শুনানিতে মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আদালত তো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপ নয়, সুতরাং তারাও ঘটনা দেখেছেন। এই এজাহারটি সারা দেশের মানুষ কাল যেভাবে ঘটনা দেখেছে তার ঠিক উল্টোভাবে লেখা হয়েছে। তাই আমরা এই ২৪ আসামির রিমান্ড বাতিল পূর্বক জামিন এবং অন্য আসামিদের জামিনের প্রার্থনা করছি।

এরপর সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন আসামিপক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, কালকের ঘটনা সবাই দেখেছেন। এখানে কোনো কিছু উদ্ধারের প্রশ্ন নাই। সাধারণত বড় কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে ক্লু বের করা বা কোনো উদ্ধারের বিষয় থাকলে রিমান্ডের প্রশ্ন আসে। তাই এখানে রিমান্ডের কোনো প্রয়োজন নাই। আমি রিমান্ড বাতিল পূর্বক জামিন চাইছি।

পরে তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য শুনতে চান বিচারক। তদন্ত কর্মকর্তা বক্তব্যে বোমা উদ্ধারের কথা বললে আইনজীবীরা ফের উত্তেজিত হয়ে পড়েন। মিথ্যাবাদী, আপনারা ব্যাগে বোমা নিয়ে ঢুকেছেন ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশের পোশাক রেখে মুজিব কোর্ট পরে আসেন ইত্যাদি উক্তি করতে থাকেন।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষে আব্দুল্লাহ আবু ফের বক্তব্য দেন। তিনি দলীয় অফিসে ১৫০ বস্তা চাল রাখা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তখন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ফের হইচই শুরু করেন। তারা বলেন, চাল রাখা কি অপরাধ? তাদের হট্টগোলের পর শুনানি শেষ হয়।

শুনানি শেষে বিচারক পরে আদেশ দিতে চান। কিন্তু আইনজীবীরা এজলাস কক্ষেই আদেশ দেওয়ার দাবি করতে থাকেন। পরে বিচারক আদেশে পল্টন থানার মামলায় বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান এবং সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের জামিন মঞ্জুর করেন। এছাড়া বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আ. সালাম, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, যুগ্ম মহাসচিব খাইরুল কবীরর খোকন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ ৪৩৪ জনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

পল্টন থানার এই মামলায় ১৫ জনের সাতদিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। যার মধ্যে সাবেক এমপি সেলিম রেজা হাবিবের রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। অপর ১৪ আসামির দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

অপরদিকে মতিঝিল থানায় হওয়া মামলায় ২০ আসামিকে আদালতে হাজির করে ৯ জনের সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। তাদের প্রত্যেকের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জু করেন আদালত। বাকি ১১ জনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২২১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২২
কেআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।