ঢাকা: ‘জয় বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হিসেবে জারি করা গেজেট সংশোধন করে ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।
বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চে রোববার (১১ ডিসেম্বর) এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।
রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, শিক্ষা সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে। আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল হারুন ভূইঁয়াসহ ১৩ আইনজীবী এ রিট করেন।
এর আগে তারা সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, শিক্ষা সচিব বরাবর নোটিশটি পাঠানো হয়।
নোটিশ পাঠানোর পর গত ২০ জুন এ বিষয়ে আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল হারুন ভূইঁয়া জানিয়েছিলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জয় বাংলা ও জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান একইসঙ্গে উচ্চারিত হয়েছে। একই স্পিরিট নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। দুটি আলাদা কোনো স্লোগান নয়। একই স্লোগান।
এছাড়া ২০১৬ সালের ৩ মে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক এবং অভিন্ন। এ দেশটি বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। তাইতো মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র বাঙালির মুখে মুখে স্লোগান ছিল ‘এক নেতা একদেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান আমাদের জাতীয় স্লোগান।
তিনি আরও জানান, চলতি বছরে জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে গেজেটভুক্ত করা হয়েছে। আমরা চাই ওই গেজেট সংশোধন করে জয় বঙ্গবন্ধু অন্তর্ভুক্ত করতে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদের করা এক রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। রুলে ‘জয় বাংলা’ কেন জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।
ওইদিন বশির আহমেদ বলেছিলেন, জয় বাংলা হচ্ছে আমাদের জাতীয় প্রেরণার প্রতীক। পৃথিবীর ৬০টি দেশে জাতীয় স্লোগান আছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য যে আমরা আমাদের চেতনার সেই ‘জয় বাংলা’ স্বাধীনতার এতদিন পরেও জাতীয় স্লোগান হিসেবে পাইনি।
তিনি বলেন, জয় বাংলা কোনো দলের স্লোগান নয়, কোনো ব্যক্তির স্লোগান নয়। এটা হচ্ছে আমাদের ন্যাশনাল ইউনিটি। এ স্লোগান দিয়ে একদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
এরপর রুল শুনানি শেষে ২০২০ সালের ১০ মার্চ রায় দেন বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান (প্রয়াত) ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
ওইদিন রায় ঘোষণার সময় আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘জয় বাংলা জাতীয় ঐক্যের স্লোগান। জয় বাংলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় স্লোগান ও জয় বাংলা ৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ’
আদালত আরও বলেন, আবেদনকারী সংবিধানের ৩ ও ৪ নম্বর অনুচ্ছেদের ধারাবাহিকতায় জাতীয় স্লোগান হিসেবে জয় বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করা দাবি করেছেন- এটা এই আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত। কারণ কোনো আইন প্রণয়ন করা এবং সংবিধান সংশোধন করার একমাত্র অধিকার জাতীয় সংসদের।
আরও পড়ুন: ‘জয় বাংলার’ সঙ্গে ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ রাখতে সরকারকে আইনি নোটিশ
তবে রাষ্ট্রপক্ষ এ রুলের সমর্থনে হলফনামা দিয়েছেন উল্লেখ করে আদালত রায়ে বলেন, আইন সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করায় একমত পোষণ করেছেন।
এরপর আদালত রায়ের আদেশ অংশ ঘোষণা করেন। আদেশে আদালত বলেন-
ক. আমরা ঘোষণা করছি যে, জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে।
খ. সব জাতীয় দিবসগুলোতে এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারীগণ এবং রাষ্ট্রীয় সব কর্মকর্তা সরকারি অনুষ্ঠানের বক্তব্য শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ যেন করেন, সে জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
গ. সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলি সমাপ্তির পরে ছাত্র শিক্ষকগণ যেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করেন, তার জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এরপর চলতি বছরের ২ মার্চ ‘জয় বাংলা’কে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২২
ইএস/এমএইচএস