ঢাকা: স্বর্ণ চোরাচালান, চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগের মামলায় আবু আহমেদকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রামের স্পেশাল জজের আদালতে হাজির করতে শাহবাগ থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রোববার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ আদেশ দেন।
হাজিরার পর স্বর্ণ চোরাকারবারি হিসেবে চিহ্নিত চট্টগ্রামের আবু আহমেদ ওরফে আবুকে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে এমন আদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
আদেশে আদালত বলেন, তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের স্পেশাল জজ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। তাই তাকে এই আদালত থেকে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করতে হবে। আর এ জন্য শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তাকে হস্তান্তর করতে হবে। শাহবাগ থানা পুলিশ তাকে হেফাজতে নেওয়ার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রামের স্পেশাল জজের আদালতে হাজির করবে।
এসময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন- আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম আবুল হোসেন ও মো. হাবিবুর রহমান, রাষ্ট্রপক্ষের একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ও দুদকের পক্ষের আইনজীবী শাহীন আহমেদ।
২০২০ সালের ১৮ মার্চ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির জাপতনগর এলাকার ফয়েজ আহম্মদ ওরফে বালী সওদাগরের ছেলে আবু আহম্মদ ওরফে আবুসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলাটি করেন, সিআইডির উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. হারুন উর রশীদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে আসামিরা সংঘবদ্ধ হুন্ডি (অর্থ পাচার), স্বর্ণ চোরাচালান, চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসার সর্বমোট ২০৪ কোটি ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮৮৭ টাকা জমা ও ২৪০ কোটি ৫ লাখ ১২ হাজার ১৬০ টাকা উত্তোলন করে মানিলন্ডারিং অর্থাৎ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে নামে-বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
এছাড়া চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, চাঁদগাও, ফতেহনগর, রাউজান, ফটিকছড়িতে জমি ও বাড়ির মালিক হয়েছেন। দুবাইয়ে তার ২/৩টি দোকান রয়েছে। এছাড়াও আবুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় স্বর্ণ চোরাচালানের মামলা রয়েছে।
এ মামলায় চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আগাম জামিন চান আবু আহাম্মদ। হাইকোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। নির্দেশের পর ২২ ফেব্রুয়ারি আবু আহম্মদ আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন।
ওইদিন চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত মামলার নথি তলব করে ৫ মে আবেদনটি শুনানির জন্য রাখেন। কিন্তু চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে নথি না আসায় ওইদিন ১৩ জুলাই জামিন আবেদনের শুনানি রাখেন। ওই তারিখেও নথি না আসায় ৩১ আগস্ট নথি উপস্থাপন করতে বলে আদালত ৫ সেপ্টেম্বর জামিন আবেদনের শুনানির তারিখ দেন।
পরে নথি আসলেও আবু আহম্মদের সময় আবেদনের কারণে জামিন আবেদনের শুনানি আরও কয়েকবার পেছানো হয়। গত ১৩ নভেম্বর জামিন আবেদনের শুনানির দিন আবু আহম্মদ ফের সময় আবেদন করলে তা না মঞ্জুর করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
বিশেষ আদালতের আদেশে বলা হয়, গত নয় মাস যাবত জামিন শুনানি না করে আসামি সময়ের দরখাস্ত করে আসছেন। যা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননার শামিল। এরপর আসামি আবু আহম্মদ হাইকোর্টে হাজির হয়ে আগাম জামিন চান। গত ৫ ডিসেম্বর আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি শেষে আদালত আদেশের জন্য ৬ ডিসেম্বর দিন ধার্য রাখেন।
কিন্তু গত ৬ ডিসেম্বর আসামি হাজির হননি। এ পর্যায়ে আবু আহম্মদের আইনজীবী আগাম জামিনের আবেদনটি ‘নট প্রেসড’ (উত্থাপিত হয়নি বলে খারিজ) করতে চাইলে আইনজীবী ফারিয়া বিনতে আলমের প্রতি আদালত উষ্মা প্রকাশ করেন।
আর নট প্রেস না করে আসামিকে গ্রেফতার ও তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। এছাড়া তাকে অবিলম্বে যেকোনো মূল্যে গ্রেফতার করে যথাযথ আদালতে হাজির করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেন। পরদিন এ মামলার তদবিরকারককে তলব করেন হাইকোর্ট।
তলবে হাজিরের পর ১২ ডিসেম্বর তদবিরকারক নুর মোহাম্মদ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তদবিরকারককে আসামিকে কোর্টে হাজির করার জন্য নির্দেশ দেন। আবু আহমেদ ওরফে আবুর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করায় রুল জারি করেন আদালত। তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপারকে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। পরবর্তী আদেশের জন্য ৮ জানুয়ারি দিন রাখেন।
এরপর আজ রোববার তদবিরকারক আবুকে হাজির করলে তাকে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২৩
ইএস/এসএএইচ