লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী সহিদ হোসেনকে (৪৫) শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে স্ত্রী আমেনা বেগমকে (৩৮) ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদলত। একই সঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আমেনা বেগম রায়পুরের বামনী ইউনিয়নের বামনী গ্রামের মৃত মমিনুল হকের মেয়ে। তার স্বামী ভিকটিম সহিদ হোসেন একই এলাকার আবদুল করিম হাজী বাড়ির মৃত চান মিয়ার ছেলে।
রায়ের পর আমেনাকে হতাশাগ্রস্ত দেখা গেছে। আর আদালত পাড়ায় উপস্থিত লোকজন তাকিয়ে ছিল আমেনার কোলে থাকা ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুটির দিকে। শিশুটিও চারদিকের মানুষজনকে দেখছিল।
এদিকে রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণে তাদের কোনো স্বজনদের দেখা যায়নি।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জসিম উদ্দিন বলেন, রায়ের সময় আসামি আমেনা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তার কোলে দুধের শিশুটিও ছিল। আমেনা চাইলে কারাগারে তার সঙ্গে শিশুটিকেও রাখতে পারবে।
জানা গেছে, সহিদ জীবিত থাকা অবস্থায় তার ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে ছিল। তার মৃত্যুর সময় স্ত্রী আমেনা তিন মাসের গর্ভবতী ছিলেন। পরে আমেনা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। রায় ঘোষণার পর ১৬ মাস বয়সী শিশু ফাতেমা আক্তার মারিয়াকে নিয়েই আদালতের লকারে যেতে হয়েছে দণ্ডপ্রাপ্ত আমেনাকে। রায় ঘোষণার সময় তিনি শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে জামিনে বাহিরে ছিলেন তিনি।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, জীবিকার তাগিদে সহিদ জীবনের দীর্ঘ সময় প্রবাসে ছিলেন। অসুস্থতার কারণে ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রবাস জীবন ছেড়ে তিনি দেশে চলে আসেন। এর পর থেকে আমেনার সঙ্গে তার পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া বিবাদ হয়। ২০২১ সালের ২২ মার্চ রাতের খাবার শেষে তারা ঘুমাতে যান। পরদিন সকালে আমেনার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ঘরে ঢুকে সহিদকে মৃত দেখতে পান। পরে স্বাভাবিক মৃত্যু ভেবে মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। গোসল করানোর সময় শরীরে কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। খবর পেয়ে পরদিন পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল প্রাপ্ত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে সহিদকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। পারিবারিক কলহের জেরে মুখ চেপে ধরে আমেনা সহিদকে হত্যা করে।
এ ঘটনায় ২৯ এপ্রিল নিহতের ভাই আবদুল আলী খোকন (৫১) বাদী হয়ে রায়পুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে তার ভাবি আমেনা বেগমকে আসামি করা হয়। পরে ২৩ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রামগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইয়াছির আরাফাত আমেনা বেগমকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন।
দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আমেনার বিরুদ্ধে রায় দেন।
জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রায়ের পর মামলার বাদী আবদুল আলী খোকনের কাছে জানতে চাইলে তিনি নিজেও বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, আমার ভাবির সঙ্গে তার দুধের শিশুটিকে কারাগারে থাকতে হবে। বিষয়টি খুবই কষ্টের। আমার ভাই মারা যাওয়ার সময় এ শিশুটি তার মায়ের তিন মাসের গর্ভে ছিল। তাদের ঘরে আরও তিন মেয়ে এক ছেলে রয়েছে। তবে ছেলেটিও কিছুটা শারীরিকভাবে অসুস্থ। ঘটনার পর থেকে সন্তানদের নিয়ে আমার ভাবি তার বাবার বাড়িতে থাকতেন।
শিক্ষানবীশ আইনজীবী ফখরুল ইসলাম বলেন, শিশুটিকেও তার মায়ের সঙ্গে কারাগারে যেতে হয়েছে। এটি সবচেয়ে বেদনাদায়ক। তার দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর হাহাকার করে উঠেছে। মায়ের অপরাধের কারণে তাকেও কারাবন্দি থাকতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৩
আরএ